অন্যের বরাদ্দপ্রাপ্ত ঘর ভাগিয়ে নিলেন পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান !

NewsDetails_01

প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসেবে পাওয়া সেই ঘরে থাকা বাস্তবে আমার ভাগ্য হয়নি। আমার এই ভাগ্যে লেখা আছে বাঁশের মাচাং ঘরে থাকা। তাই আজীবন খাবার দিয়ে দেখাভালের দায়িত্ব নেবে, এই ওয়াদা দেয়ায় আমার নামের ঘরটি উহ্লামংকে দিয়েছি। কিন্তু ঠিকমতো সে আমাকে খোঁজ খবরও নেয়না।

এইসব বঞ্চণা ও প্রতারণা শিকারের কথা বলেছিলেন মংপ্রসে মারমা (৭৯)। সে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় পাইন্দু ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চান্দা হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরিবারে একাই বসবাস করেন।

এ প্রতিবেদক সরেজমিনে গেলে চান্দা হেডম্যান বাগান পাড়ার অংশে ছোট্ট এক মাচাং ঘরে বসে কথা হয় বয়োবৃদ্ধ মংপ্রুসে’র সঙ্গে। তখন খোলামেলায় আলাপচারিতায় মংপ্রুসে মারমা এসব কথা জানিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, আত্মীয়তা সম্পর্কে আমার ছেলে হয়- উহ্লামং। আমার নাম দিয়ে সরকারের টাকায় প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘর দেয়া হবে। এই ঘরের পরিবর্তে আমাকে এই মাচাং ঘর তৈরি করে দিয়েছে। আমার ঘরের জায়গায় তাঁর (চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা) বিল্ডিং তুলছেন।

এখন আমার কাছে টাকা পয়সা নেই, ঘরে চাউলও নেই। কিন্তু খবর নিচ্ছে না কেউ। বুড়ো বয়স। আশি ছুঁই ছুঁই। এভাবে বেঁচে কতদিন বাঁচবো- জানিনা, বলেন বয়োবৃদ্ধ মংপ্রুসে মারমা।

চান্দা হেডম্যান পাড়ায় প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘর বঞ্চিতের ভুক্তভোগী মংপ্রুসে মারমা মাচাং ঘর থেকে এ প্রতিবেদক ৫০গজ দুরে গিয়ে দেখতে পান, এখানে একটি বিল্ডিং নির্মাণ কাজ চলমান।
নির্মানাধীন বিল্ডিংয়ের কাছে গেলে পাশের দুটি মাচাংঘরে বেশ কয়েকজন বসে আছেন। এক প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বলেন, এই বিল্ডিংটি করছেন আমাদের চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা (পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান)। তবে ঘরের জায়গাটি ছিল এক বুড়োর।

NewsDetails_03

এবিষয়ে পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মংপ্রুসে মারমাকে সব কিছু আমি দেখাশুনা করি। সে আমার আত্মীয় ও সবকিছু আমি দেখবো, এই বলে কল কেটে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, গৃহহীন থাকবে না একটিও পরিবার’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে বাস্তবায়িত কাজের একযোগে সারা দেশে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পিআইও অফিসের সংশ্লষ্ট সূত্রমতে, রুমা উপজেলার বিভিন্ন পাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর হিসেবে পরিচিত আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৬০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল।

এসব ঘরগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ত্রাণ শাখার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কার্যালয়ের লোকজন বাস্তবায়নের কাজটি দেখভাল করে থাকেন। তার মধ্যে বান্দরবানের রুমায় পাইন্দু ইউনিয়নে ৩নং ওয়ার্ডে চান্দা হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা মংপ্রুসে মারমার নামও তালিকাভুক্ত করা হয়। কিন্তু কাগজে কলমে নিরীহ মংপ্রুসে মারমা নামে ঘর বরাদ্দ দেয়া হলেও বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘর তাঁর ভাগ্যে জুটেনি। বর্তমানে মংপ্রুসে মার্মা থাকেন ছোট্ট পাহাড়ি মাচাং ঘরে।

রুমা উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) সহসভাপতি জর্জ লালটানজুয়াল বুইতিং বলেন, সরকার প্রধান বা প্রধানমন্ত্রীর গৃহিত কর্মসূচী আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দকৃত একজনের নামে অন্যজন ঘরটি ভোগ করাটা চরম অন্যায় হয়েছে। এধরণে অন্যায়কারী সে যেহোক না কেন, তাকে শাস্তি পাওয়া উচিত এবং তিনি নিজেও সত্যতা খোঁজ খবর নিয়ে তাঁর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন দুপ্রক’র সহসভাপতি জর্জ বম।

এই বিষয়ে রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন শিবলী বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার পর সত্যতা পেলে চেয়ারম্যানকে দিয়েই ঘরটি করিয়ে নেয়া হবে।

আরও পড়ুন