অন্য আলোয় আলোকিত ছাইঙ্গ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

NewsDetails_01

শিক্ষকের আন্তরিকতায় পশ্চাৎপদ পাহাড়ের জরাজীর্ণ এক বিদ্যালয় থেকে জেলার অন্যতম একটি বিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠেছে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের ছাইঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।

দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠ, ফুল গাছে সজ্জিত স্কুলের সড়ক, বিদ্যালয়ের চারপাশে ফলজ বাগান, নানা প্রজাতির বনজ গাছ ও বিভিন্ন রকমের ফুলের বাগানে সাজানো গোছানো পুরো বিদ্যালয়টি দূর থেকে দেখে মনে হয় একটি দৃষ্টিনন্দন কোন এক পর্যটন কেন্দ্র। এ বিদ্যালয় যেমন সুন্দর পরিপাটি, তেমন সুন্দর পরিবেশে লেখাপড়া করায় সেখানে শিক্ষার্থীদের পাশের হারও শতভাগ। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি থেকে কোন অংশে কম নয়।

সরজমিনে জানা গেছে, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় এই বিদ্যালয়টিকে মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়েছেন প্রধান শিক্ষক সুনিতি বড়ুয়া। যার ধ্যান জ্ঞান পুরোটাই বিদ্যালয় ও তার শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে। পরিপাটি ভাবে সাজানো পরিস্কার পরিছন্ন স্কুলের খেলার মাঠটি দেখলেই বোঝা যায় কোথাও একটি পাতাও পড়ে থাকতে দেখা যায়নি। সরকারী ভাবে বরাদ্ধকৃত টাকা ও নিজের অর্থ ব্যয়ে করে তিনি বিদ্যালয়টিকে সাজিয়েছেন এভাবে।

জানা যায়, এই বিদ্যালয়টি দেখতে জেলা-উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা, প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক মন্ডলী, এলাকার শিক্ষানুরাগী ও বিভিন্ন এলাকা থেকে বান্দরবানে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও প্রায়ই সেখানে আসে।

NewsDetails_03

ওই বিদ্যালয়ে প্রাথমিকে ২০০৯ থেকে ১৯ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৬ জন। তার মধ্যে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়েছে ৩ জন। আর অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়েছে ১ জন সাধারণ বিভাগে ভিত্তি পেয়েছে ২ জন। পরবর্তীতে করোনা মহামারীর কারণে আর বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা ২০১৪ সালে জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বঙ্গমাতা ফজলতুন নেছা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল এবং উপজেলা পর্যায়ে অসংখ্য বার বিভিন্ন ক্রীড়া বিষয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শিক্ষার্থীরা। দৃষ্টিনন্দন এই বিদ্যালয়টিতে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ২৫০ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১০ জন। তারমধ্যে শিক্ষিকা রয়েছে ৬ জন, শিক্ষক রয়েছে ৪ জন। এ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৩ সালে প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান চালু হলেও বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। সংকট রয়েছে বিজ্ঞানাগার ও প্রশাসনিক ভবনের।

এ বিদ্যালয়ের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষিকা উম্মে সালমা বলেন, আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে শিক্ষার্থীদের যন্ত্রপাতি না থাকলে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে ধারণা দেওয়া কঠিন। আমাদের বিদ্যালয়ে একটি প্রজেক্টর ও একটি ল্যাপটপ আছে সেগুলিও এখন নষ্ট। সরকারিভাবে আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাপটপ বা ট্যাব দিলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের জন্য সুবিধা হতো।

ছাইঙ্গ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনিতি বড়ুয়া বলেন, আমি যখন ২০০৯ সালে এই বিদ্যালয়ে এসেছি তখন এই বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। শিক্ষার পরিবেশ ছিল খুবই নাজুক, ভবনগুলো ছিল ভাঙ্গা। আমি আসার পর থেকে বিভিন্ন মহলের সাথে যোগাযোগ করে বিদ্যালয়ের পরিবেশ যাতে ভালো করতে পারি অভিভাবকদের সহযোগিতায় সে চেষ্টা করছি। বিদ্যালয়টি আগে ছিল শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ২০১৩ সালে গণ শিক্ষা প্রাথমিক মন্ত্রণালয় বিদ্যালয়টিকে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নিত করেছে। উন্নিত করার ফলে আমাদের এখানে শিক্ষক-স্বল্পতার পাশাপাশি একাডেমিক ভবনের স্বল্পতা রয়েছে।

এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শফিউল আলম বলেন, ছাইঙ্গ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জেলার অন্যতম একটি দৃষ্টিনন্দন স্কুল। আমি ওই স্কুলে নিজেই ক্লাস নিয়েছি ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মেধাবী। ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও শিশুদের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। জেলার বিভিন্ন স্কুল এই স্কুল দেখে তারাও উদ্বুদ্ধ হবে বলে আমি মনে করি। ছাইঙ্গ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতি আমাদের সদৃষ্টি আছে। ধাপে ধাপে অবশ্যই সবগুলো ব্যবস্থা হবে আমরা চেষ্টা করছি বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন