বাংলাদেশে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও তাদের অঙ্গসংগঠন গুলোকে সন্ত্রাসবিরোধীআইনের আওতায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর ফলে রাজনৈতিক দল হিসাবে এক দশকের বেশি সময় আগে ২০২৩ সালে নির্বাচন কমিশনেনিবন্ধন বাতিল হওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি করার অধিকার হারালো।
বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে আইন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রীবলেন, “সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ওতাদের অন্যান্য অঙ্গ–সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
প্রধান বিরোধীদল বিএনপির মিত্র হিসেবে দেশের বৃহত্তম ইসলামী দলটি ভোটের ও মাঠেররাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আসছে।
গত সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করারব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করে শরীক দলগুলো। ওই বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
১৪ দলের নেতারা বলছেন, কোটা সংস্কারে ছাত্রদের আন্দোলনে যুক্ত হয়ে মাঠে নামেনজামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। তারা মেট্রোরেলসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলাচালিয়েছে।
গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনও প্রকার রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে না। সেটি করার চেষ্টা করা হলে তা সন্ত্রাস বলে বিবেচিত হবে এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইনে বিচারহবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ অনুযায়ী রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলকরায় তারা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারত। তবে নিষিদ্ধ করার ফলে দল হিসাবেজামায়াত আর বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না।

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হলে কি আওয়ামী লীগের লাভ হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রীআনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “এতে আওয়ামী লীগ অথবা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলসুফল পাবে না, পাবে দেশের জনগণ। জামায়াত একটি সন্ত্রাসী সংগঠন এবং তারা মুক্তিযুদ্ধেমানুষ হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, যা আদালতের রায়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিতহয়েছে।”
রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের ঘোরতর শত্রু জামায়াতে ইসলামী। ১৯৭১ সালে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জামায়াতেইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
দলটি পাকিস্তানকে অখণ্ড রাখতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ওনিরীহ মানুষদের হত্যাসহ বিভিন্ন মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটন করে।
ওই যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্নসমর্পন করার পর স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্নপ্রকাশ করেবাংলাদেশ। তখন দলটি চাপে পড়ে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যূত্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করার পর জামায়াত ওতার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির নির্বিঘ্নে রাজনীতি করার সুযোগ পায়। ১৯৯১ সালে বিএনপির সাথে সমঝোতার মাধ্যমে ভোট করে জাতীয় সংসদে ১৮টি আসন পানজামায়াত নেতারা। ১৯৯৬ সালে এককভাবে নির্বাচন করে আট দশমিক ৬১ ভাগ ভোট পেলেও সেবার দলটি তিনটিআসনে জয় পায়।
সর্বশেষ ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে চার দশমিক সাত ভাগ ভোট পায় জামায়াত। উচ্চ আদালতের এক রায়ের পর ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেনির্বাচন কমিশন (ইসি)। দলটির ছাত্রসংগঠনের নাম ইসলামী ছাত্রশিবির। ১৯৭১ সালে মহানমুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের অন্তত একডজন শীর্ষ নেতারফাঁসির রায় ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।
তবে জামায়াত নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় সরকার বিরোধীদের ভিন্ন পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তারাবলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনায় চাপে পড়াসরকার এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টি ভিন্নদিকে প্রবাহিত করতে চায়।
এছাড়া সরকারের শক্ত অবস্থান জানান দেওয়া এবং নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করাও লক্ষ্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা এ দলকে ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহারের’ কারণে। এবার দলটিকে নিষিদ্ধ করা হলো জন নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনা করে।