অবৈধ গরুর ব্যবসায় আলীকদমের বিএনপি’র নেতা ইউনুচ মিয়া

অবৈধ পাথর, বালি, কাঠ ব্যবসায়ও জড়িত

NewsDetails_01

বান্দরবানের আলীকদমে দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে অবৈধ গরু পাচার করে আসছে গরু পাচারকারী সিন্ডিকেট। প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থাসহ উপজেলায় সকলের কাছে গরু পাচারকারী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে পরিচিত আলীকদম উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক ইউনুচ মিয়া। দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে প্রাণী সম্পদের স্বাস্থ্য সদন ব্যবহার করে চোরাইপথে অবৈধ গরু পাচার করে আসছিল এই সিন্ডিকেট।

এবার গরু পাচারের সময় উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের উপ-সহকারি প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে পাচারকারী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ইউনুছ মিয়ার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছেন, উপ সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ ইবনে রাওহা পারভেজ।

আলীকদম থানায় গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে মামলাটি পেনাল কোড ১৯৮০ এর ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারায় রুজু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন আলীকদম থানার ওসি।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে অভিযুক্ত ইউনুছ মিয়া প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ে এসে ৪১টি গরুর ‘প্রাণির স্বাস্থ্য সনদ’ চান। উপ-সহকারি প্রাণী সম্পদ কর্মকর্ত এসব গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ১১ টি গরুর অসুস্থ হিসেবে শনাক্ত করেন। এসব গরুর পায়ে ব্যথা, মুখে ও পায়ে ঘা, সেলাইবেশন এবং দুর্বল হওয়ায় এক সপ্তাহ আইসোলেশন ও অবজারবেশনে রাখার জন্য চিকিৎসা সনদ প্রদান করেন।

৪১টি থাইল্যান্ডের গরু মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে উপজেলা সদরে নিয়ে আসে ইউনুচ। ১৫ সেপ্টেম্বরের প্রাণীর স্বাস্থ্য সদনটি ২০ সেপ্টেম্বর জাল করে ভোরে অভিযুক্ত ইউনুচ ৪১টি গরু ৩টি ট্রাকে করে পাচারের সময় কানামাঝি আর্মি চেকপোস্টে পৌঁছালে খবর পেয়ে বিজিবি ও ইউএনওসহ গঠিত ট্রাস্কফোর্স ঘটনা স্থলে গিয়ে গরুগুলো আটক করেন।

এরপর গরু ব্যবসায়ী ইউনুচ মিয়া আটককৃত গরুর মালিকানা দাবী করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ট্রার্স্কফোর্সের অন্যান্য কর্মকর্তার নিকট বিভিন্ন ভূয়া কাগজপত্র উপস্থাপন করে। কাগজপত্র গুলো যাচাই-বাছাই করে উপস্থাপিত ৪১টি গরুর স্বাস্থ্য সনদের তারিখ ও স্বাক্ষরের জায়গায় ঘষামাঝা দেখতে পান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

NewsDetails_03

স্বাস্থ্য সনদ ঘষামাঝা ফলে সন্দেহ হলে উপ-সহকারি প্রাণী সম্পদক কর্মকর্তা পারভেজকে ডেকে পাঠানো হয়। সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা গরুর স্বাস্থ্য সনদের তারিখ ও স্বাক্ষরটি তার নয়। এটি জাল বলে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নজরে নিয়ে আসেন এই সহকারী কর্মকর্তা।

এবিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী উপ সহকারী প্রাণী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ ইবনে রাওহা পারভেজ শুক্রবার বলেন, ১১টি গরু অসুস্থ হওয়ায় আইসোলেশনে রাখার জন্য ইউনুচকে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি স্বাক্ষর ও তারিখ জাল করে গরুগুলো আলীকদম থেকে ট্রাকযোগে নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় বিজিবি ও ইউএনও সেসব গরু আটক করেন।

এ ব্যাপারে আলীকদম থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন সরকার মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ইউনুস মিয়াকে আটকের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানান।

অভিযোগ রয়েছে, প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের চিকিৎসা সনদ জালসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে বড় বড় কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে আলীকদম উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস দীর্ঘদিন ধরে গরু, পাথর, বালি ও কাঠ ব্যবসার নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্তা বাবুদের বিশেষ মাসোহারা দেওয়ার জন্য চকরিয়া এক কাঠ ব্যবসায়ীর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করায় ইউনুচ মিয়া বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অসাধু কর্তাদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরী হওয়ার সুবাধে মাতামুহুরি রিজার্ভ থেকে পাথর, বালি, কাঠ উত্তোলন ও পাচার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।

তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ব্যবসায়ীরা অবৈধ গরু আনলে ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কিছু কর্মকর্তার সাথে সু-সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে হুমকি ধুমকিসহ গরু ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অভিযুক্ত ইউনুচ মিয়া নামমাত্র মূল্যে গরু কিনে আলীকদম থেকে চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ বিভিন্ন এলাকায় পাচার করেন।

এদিকে ২০ সেপ্টেম্বর গরু আটকের পর ট্রার্স্কফোর্সের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের কাছে তার উপস্থাপিত কাগজপত্র জাল প্রমাণিত হলে। জাল সনদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কর্মকর্তার মাধ্যমে নিশ্চিত করার সময় ইউনুচ মিয়া পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি করে পালিয়ে যান। এসময় ইউনুস মিয়াকে পালাতে সহযোগিতা করেন, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শফিউল আলম।

আরও পড়ুন