অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেন তারা
অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলাম আমরা দুইবোন। বিকট শব্দে কানও ভারি হয়ে ওঠেছিল। মিনিট খানেক কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম না। ভয়ে আতঙ্কে ঝাপসা চোখে পেছনে ঘুরে দেখতে পেলাম-আগুনের ধোঁয়ার মত মাটি থেকে বের হয়ে ছিল,একেবারে দম বন্ধের অবস্থা তখন। এসব বর্ণনা দিয়ে কথা বলেছিলেন, অংমাচিং মারমা(৩০)। সে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় তারাছা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ছাংউক্ষ্যং পাড়ার বাসিন্দা।
গত বুধবার (২ফেব্রুয়ারী) দেড়টার দিকে বান্দরবান-রুমা সড়কে রোয়াংছড়ির তারাছা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের এলাকায় পাইক্ষ্যং ঝিরিতে বেইলী সেতু দিয়ে মাল বোঝাই ট্রাকটির যাওয়ার সময় সেতুটি ভেঙ্গে যায়। এতে বিকট শব্দ হয়।
ওই সময় অংমাচিং ও তার বড়বোন উসোয়াং মারমা (৩৯) বেইলি সেতুর খুব কাছে ছিলেন। বেইলি সেতু ভেঙ্গে পড়ার ঘটনায় ট্রাক ড্রাইভার আবদুর গফুর নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এ প্রতিবেদক বুধবার(২ফেব্রুয়ারী) সরেজমিনে গেলে বেইলি সেতু ভেঙ্গে পড়ার স্থানে পৌঁছেন দুইটা ৫০মিনিটে। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে স্থানীয় এলাকার লোকজনের ভীর জমছিল। ঘটনা বিবরণ জানার চেষ্টায় উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন এপ্রতিবেদক। তখন ঝিরি থেকে উপরে রাস্তায় ওঠে আসছিলেন এই দুই নারী। ওদের দেখতে আরও কয়েকজন বলল, এই দুইজনও সেতু ভাঙ্গা থেকে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। এ কথা শুনে পিছনে তাকালেন দুইজন নারী। হাতে দা ও মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি করা বিশেষ ঝুঁড়ি। প্রাণে বেঁচে যাওয়া মানে এট্রাকে ছিলেন কিনা জানতে চাইলে সাফ জবাব- না। দুইজনের হাতে বাঁশের ঝুড়ি দেখে ছবি ধারণের জন্য সামনে আগাতেই সরিয়ে মানুষের ভীরে চলে যান একজন। বলেন,ছবি তুলতে দেবনা।
এ প্রতিবেদকের পিছনে দুই, নাকি তিনজন (কন্ঠ বয়স্ক) বলে ওঠেছিল, হৈ উসোয়াংচিং ছবি তুললে কিছু হবে না, এই বেটা সাংবাদিক। তোর ছবি ফেসবুকে (সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক) ওঠবে। আর তারা বললেন, তোমার (এ প্রতিবেদক) পাশে তার ছোটবোন আছে। দেখি, তার মুখটা একটু ভয়ের ছাপ, আতঙ্কের চেহারা তখনও।
অংমাচিং মারমা (৩০) এর ভাষ্যমতে, আমি ও আমার দিদি দুপুর খাওয়ার পর য়াক্সে (বাঁশের ঝুড়ি) দিয়ে মাছ ধরতে নামছি -পাইক্ষ্যং ঝিরিতে। নিজ পাড়ার ঘাট থেকে শুরু করে বেইলি সেতু পর্যন্ত পৌঁছেন। একটু বেশি শীতের অনুভব হচ্ছিল, তাই সেতুর নিচ থেকে একটু আগে বের হয়েছি। ঝিরিতে দাঁড়িয়েছিলাম- সেতুর দিকটি পিছনে রেখে। হঠাৎ ধুম করে বিকট শব্দ। খানিকটা সময় দুইবোন হতভম্ব হয়ে পড়ি। কতবার চিৎকার করে ভগবানকে ডাকছি, হিসাব নাই।
পিছনে ফিরে দেখতে পেলাম সেতুটি ভেঙ্গে পড়েছে, ট্রাকটি উল্টে পড়ছে। ভয়ের চোখের ঝাপসা দৃষ্টি শেষ না হতে আমার বড় বোনের চোখ পড়ে যায় একটি পায়ের দিকে। কোন শরীর দেখতে পায়নি। ওই সময় আশপাশে কোন লোককেও দেখতে পায়নি। এতে আমরা দুইবোন ভয়ে আতঙ্কে কি অবস্থা, সব বলতে পারবেন না বলে জানালেন অংমাচিং মারমা।