লক্ষ্মীপুরবাসীকে আগামী প্রত্যেক নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়। আওয়ামী লীগ যখন ছিল না তখন দেশের উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগের কাছে কখনও চাইতে হয়না, এ ভরসাটা রাখবেন। আগামীতে যত নির্বাচন আসবে প্রত্যেক নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ করে দেবেন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো। বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত করতে চাই, শান্তি নিরাপত্তা আনতে চাই।’ মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুরের জেলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একদিন দেশের সব মানুষকে বিনা পয়সায় ঘরবাড়ি বানিয়ে দেবো। আমরাই দেশে বিনা পয়সায় বই বিতরণ করছি। আমরা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। আমরাই বর্গা চাষীদের বিনা সুদে ঋণ দেওয়া শুরু করি।’
জনসভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী দেশকে স্বাধীন করতে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সব উন্নয়ন থেমে যায়। ২১ বছর এ দেশের উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন শুরু করে।
তিনি বলেন, ২০ লাখ মাকে মোবাইল ফোন দিয়েছি। উপবৃত্তির টাকা যাবে এসব মোবাইল ফোনে। প্রতিটি উপজেলায় ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগের কোনও নেতা-কর্মী ঘরে থাকতে পারেনি। এসময় নুরুল ইসলাম, সামসুদ্দোহা পাটোয়ারী, মিজানসহ ১৭ জন নেতা-কর্মীকে বিএনপির সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী এলাকার পেশাজীবী, সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতাদের আহ্বান করে বলেন, ‘আপনারা নিজ নিজ এলাকার সব ছেলে মেয়ের খোঁজ রাখবেন। তারা যেন জঙ্গিবাদের পথে না যায়। কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম কোনও মানুষকে হত্যা করতে বলেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামের উন্নয়নে আমরা প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি মসজিদ ও ইসলামি কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করবো।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে ভারতের কাছ থেকে এক ফোঁটা পানিও আনতে পারেনি। তারা কোনও স্থল চুক্তি করতে পারেনি, শান্তি চুক্তি করেনি। আমরা ক্ষমতায় এসে সব করেছি।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ইতোপূর্বে লক্ষ্মীপুর সফরকালে তার দেওয়া উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রতিশ্রুতি ও তার বাস্তবায়ন চিত্র তুলে ধরেন এবং নতুন নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
উন্নয়নের অঙ্গীকার করে লক্ষ্মীপুরবাসীর কাছে দোয়া, ভালোবাসা ও নৌকায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোট দেবেন তো?’ এ সময় সবাই হাত উঁচু করে ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই মিলে দেশকে গড়ে তুলি। আমার ব্যক্তিগত কোনও চাওয়া পাওয়া নেই। আমি তো সব হারিয়েছি। বাংলাদেশে এসেছি কেবল দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করতে। আমি বাবার মতো, আমার পরিবারের মতো, আপনাদের কল্যাণে নিজের জীবন বিলিয়ে দেবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকা, নূহ নবীর কিস্তি। বিপদে নৌকা মানুষকে রক্ষা করে। জনগণ নৌকায় ভোট দিয়ে সত্তুরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করেছে বলেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আপনারা ভোট দিয়েছেন বলেই দেশের উন্নয়ন করতে পেরেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর ছিলো অবহেলিত জায়গা। এখানে যা যা করা দরকার তা সব করে দেবো। এমনকি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা পর্যন্ত পাকা রাস্তা করে দেবো। যাতে এলাকাবাসীকে কাদা মাটিতে থাকতে না হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ধর্মে নিশ্বাস করে না। ২০১৫ সালে তারা আন্দোলনের নামে কোরআন পুড়িয়েছে, মসজিদে আগুন দিয়েছে। বগুড়ায় মসজিদের কোরআন তেলওয়াতকালে এক কৃষক লীগ নেতাকে খুন করেছে। যারা এ রকম করে তারা কিসের ধর্মে বিশ্বাস করে? নিরীহ মানুষকে যারা হত্যা করে তারা জান্নাতে নয়, দোযখে যায়।’
তিনি বলেন, ‘যারাএ পর্যন্ত মারা গেছেন তারা বেহেশতে গিয়েছে-এ খবর কি তারা পাঠিয়েছে?’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় গিয়ে তারা দুর্নীতি ও লুট করে। আর বিরোধী দলে গিয়ে মানুষ হত্যা করে। ২০১৩ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে জ্বালাও পোড়াও করেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা গুলশানের কার্যালয়ে বসে ও তার খেলে কুলাঙ্গার বিদেশে বসে হুকুম দিয়েছে, আর তাদের ক্যাডার বাহিনী সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার, হত্যা ও নির্যাতন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যই হলো উন্নয়ন করা। আর বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা। তারা ক্ষমতায় আসলে জনগণের নাভিশ্বাস ওঠে, কারণ তারা দেশে ত্রাশের রাজনীতি করে।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় হেলিকপ্টারে করে লক্ষ্মীপুরে নামেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে তিনি সার্কিট হাউজে জোহরের নামাজ শেষ করে ও দুপুরের খাবার খেয়ে জনসভাস্থলে যাবেন। ২টা ৫০ মিনিটে স্টেডিয়ামে নির্মিত নৌকা আকৃতির মঞ্চে উপস্থিত হন এবং ৩টা ২৫ মিনিটে বক্তব্য শুরু করে ৪০ মিনিট বক্তব্য দেন।
জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সফরে প্রধানমন্ত্রী রামগতি ও কমলনগর মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, চিফ জুডিশিয়ার ম্যাসিস্ট্রেট আদালত ভবন, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, উপজেলা পরিষদ ভবন (সদ), গসউপজেলা পরিষদ ভবন (কমলনগর), উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম (কমলনগর), লক্ষ্মীপুর পৌর আইডিয়াল কলেজ ভবন, মোহাম্মদীয় বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণ, উপজেলা প্রাণি সম্পদ দফতর ও প্রাণি হাসপাতাল (কমলনগর) উদ্বোধন করেন।
এছাড়াও আড়ইশ শয্য বিশিষ্ট হাসপাতাল, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, পুলিশ অফিসার্স মেস, লক্ষ্মীপুর সদর খাদ্য গুদাম, ১৩২/১৩৩ কেবি গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ, লক্ষ্মীপুর জেলা ও আশপাশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর সভাপতিত্বে অনুষ্টিত জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন নাহার লাইলী, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম ও লক্ষ্মীপুরের পৌর মেয়র মো. আবু তাহের প্রমুখ। খবর-বাংলা ট্রিবিউন এর