আজ ২১ আগস্ট। দেড় দশক আগে এই দিনে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালায় হরকাতুল জিহাদের একদল জঙ্গি, যা ছিল ছয় বছর ধরে এই জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলা ও শেখ হাসিনাকে হত্যার ধারাবাহিক চেষ্টার এক চূড়ান্ত রূপ। পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই দিনটি গ্রেনেড হামলা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের ইতিহাসের আরেকটি কলঙ্কজনক ও রক্তাক্ত দিন এটি। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ৩০ বছর পর সেই আগস্ট মাসেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা-গ্রেনেড হামলা ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এক সমাবেশের আয়োজন করে। বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষ করে শান্তি মিছিল বের করার কথা ছিলো। কিন্তু সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতি,তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে একের পর এক গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকে জঙ্গিরা।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা নারী নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত ও অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হন। কেউ কেউ সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান।
সেদিন যা ঘটেছিল
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর স্থাপিত মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্য শেষ করার পর পরই বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে অতর্কিতে চারিদিক থেকে গ্রেনেড এসে পড়তে থাকে। বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, গুলিস্তান, পল্টনসহ আশপাশের এলাকা। এ সময় মঞ্চে উপবিষ্ট দলের জাতীয় নেতারা পরিস্থিতি বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে মানববর্ম রচনা করে সভাপতি শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন।
শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে সেদিন শুধু গ্রেনেড হামলাই চালানো হয়নি, তিনি যখন গাড়িতে করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করছিলেন, তখনও তাকে লক্ষ্য করে গাড়িতে গুলি চালানো হয়েছিলো। হামলাকারীদের টার্গেট শুধু শেখ হাসিনাই ছিলেন না, তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদেরকেও হত্যার উদ্দেশ্যে এই গ্রেনেড হামলা পরিচালিত হয়।
সেই নৃশংস গ্রেনেড হামলায় সেদিন যারা আহত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, দলের বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য (তখনকার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য) আমির হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক(প্রয়াত),সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত (প্রয়াত),ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ, দলের বর্তমানে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের,তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিরোধী দলের নেতার রাজনৈতিক সচিব সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ, উম্মে রাজিয়া কাজল, মাহবুবা পারভীন, সাহেদা তারেক দিপ্তি প্রমুখ।
বর্বরোচিত এ গ্রেনেড হামলায় মারা যান আইভি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুন্সী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া।
আহত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অনেকে এখনো স্পিটারের আঘাত নিয়ে ধুকে ধুকে জীবন কাটাচ্ছেন। সেদিন যারা আহত হয়েছিলেন তাদের অনেককেই সারা জীবন গ্রেনেডের স্পিন্টার বহন করে চলতে হচ্ছে। কেউ কেউ সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব নিয়েই বেঁচে আছেন।