আনাই ও আনুচিং মগিনীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পিতা মাতা

NewsDetails_01

প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির ছোট্ট একটি গ্রাম সাত ভাইয়াপাড়া। এ গ্রামের কৃতি সন্তান আনাই মগিনীর একটি গোলে বাংলাদেশ পেয়েছে বিজয়। এ বিজয়ে দেশবাসীর সাথে পুলকিত ও উচ্ছ্বসিত তার পিতা মাতা ও গ্রামবাসী।

গত বুধবার (২২ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেই এক গোল করেছেন আনাই মগিনী। তার এক গোলে বাংলাদেশ পেয়েছে বিজয়। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে দেশের হয়ে ভারতের বিপক্ষে একমাত্র গোলটি করার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন এই নারী ফুটবলার। আনন্দ-উল্লাসে মেতেছেন পরিবারের সদস্য ও গ্রামের বাসিন্দারা।

জানা যায়, আনাই মগিনী খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গোলাবাড়ি ইউনিয়নের সাত ভইয়াপাড়া এলাকার রেপ্রু মগের মেয়ে। সাত ভাইবোনের মধ্যে ছোট দুই বোন আনাই মগিনী ও আনুচিং মগিনী। তারা বাংলাদেশ ফুটবল টিমে খেলেন। বাকি দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তিন ভাইও বিয়ে করেছেন। ২০০৩ সালের ১ মার্চ খাগড়াছড়ির সাত ভাইয়াপাড়ায় আনাই মগিনী ও আনুচিং মগিনী জন্মগ্রহণ করেন। সাত ভাইয়াপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে সুযোগ পান তারা। বর্তমানে দুই বোন মহালছড়ি উপজেলার মহালছড়ি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী।

স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশের হয়ে খেলতে গিয়ে একমাত্র গোল করেছেন আমাদের এলাকার মেয়ে আনাই মগিনী। এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। খেলা দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছি। এ বিজয় সারাদেশের। আমরা চাই তারা দুই বোন আরও এগিয়ে যাক। তাদের মাধ্যমে আজ আমাদের গ্রাম সবার কাছে পরিচিতি পাচ্ছে।

NewsDetails_03

আনাই মগিনীর বড় ভাই আম্রা মগ বলেন, আমার বোন গতকাল ভারতের বিপক্ষে খেলে একটি গোলে জয় লাভ করেছে। এটা আমাদের কাছে অনেক আনন্দের। আমার বোনের জন্য সবাই আশীর্বাদ করবেন, সে যেন আরও ভালো খেলতে পারে।

আনাই মগিনীর মা আপ্রুমা মগিনী ও বাবা রেপ্রু মগ জানান, অভাবের সংসারে ছেলে-মেয়েদের তেমন ভাবে লেখাপড়ার খরচ ও ভরনপোষণ দিতে পারিনি। সারাদিন কাজ করে যা পেতাম তাতে সংসারও ঠিকমতো চলতোনা। ছোট দুই মেয়েকে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করাচ্ছি। ছোট থেকেই তাদের খেলার প্রতি অনেক আগ্রহ ছিল। খেলতে খেলতে জাতীয় দলে স্থান পেয়েছে। দেশের সবাই আমাদের মেয়েদের চিনে। গতকালের খেলার পর সকাল থেকে বাড়িতে অনেক মানুষ আসছে, আনন্দ-উল্লাস করছে সবাই। এতে আমরা অনেক খুশি।

এ সময় তারা আরও বলেন, আমরা অনেক গরিব। বাড়িতে আসার মতো রাস্তা নেই আমাদের। বাঁশের সাঁকো দিয়ে বাড়ি আসতে হয়। এই জায়গা থেকে আমাদের দুই মেয়ে বাংলাদেশ দলে খেলে এলাকার এবং দেশের সুনাম রক্ষা করেছে। এটা আমাদের সবার জন্য আনন্দের। আমার মেয়েদের জন্য সবাই দোয়া করবেন, তারা যেন আগামীতে আরও ভালো সফলতা অর্জন করতে পারে। দেশ ও এলাকার সুনাম আরও উজ্জ্বল করতে পারে। আমার মেয়েদের যেন সরকার ভবিষ্যতের জন্য কিছু করে দেয়। এটাই আমাদের চাওয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তাহলে অন্তত তাদের জীবন তারা সাজিয়ে নিতে পারবে।

খাগড়াছড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা বলেন, আনাই মগিনী খাগড়াছড়ির কৃতি সন্তান। তার একমাত্র গোলে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে আমরা আনাই মগিনীকে অভিনন্দন জানাই।

আরও পড়ুন