আলীকদমের চিকিৎসক দম্পতির জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণা

6_65665বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় এক চিকিৎসক দম্পতির জীবিত নবজাতককে মৃত্যুর সনদ দিয়ে হাসপাতাল থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার নগরীর বেসরকারি সিএসসিআর হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। ওই নবজাতক এখন জীবিত আছে। এদিন রাত সাড়ে সাতটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নবজাতককে ম্যাক্স নামে নগরীর আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালের এনআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। ওই নবজাতকের বাবা হলেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. নুরুল আজম ও মা বান্দরবান আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেন্টাল সার্জন ডা. রিদওয়ানা কাউসার।
জীবিত নবজাতককে মৃত উল্লেখ করে ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় সিএসসিআর কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাল আহমেদ বলেছেন, যেহেতু একটি বাচ্চা প্রসবের সময় চিকিৎসক, নার্স, এন্থেসিস্টসহ অনেকের দায়িত্ব থাকে। কার অবহেলায় এমনটি ঘটেছে তা তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডা. রিদওয়ানা কাউসার তুষার সোমবার রাত একটায় নগরীর প্রবর্ত্তক মোড়ে অবস্থিত বেসরকারি সিএসসিআর হাসপাতালে ‘নরমাল ডেলিভারি’র মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। ডা. রিদওয়ানা জানান, জর দু’ঘণ্টা পর একটি প্যাকেটে ভরে হাসপাতালের কর্তব্যরতরা তার নবজাতককে নিয়ে আসেন তার কেবিনে। বলা হয় তার সন্তানটির মৃত্যু হয়েছে। তা বিশ্বাস না হওয়ায় প্যাকেট খুলে বাচ্চার মুখ দেখতেই বিস্মিত হয়ে যান তিনি। দেখলেন তার বাচ্চা দিব্যি নড়াচড়া করছে। ততক্ষণে বাচ্চার শরীর খুবই ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। পরিবর্তন এসেছে গায়ের রংয়ে। বিষয়টি দ্রুত হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকদের জানানো হলেও তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। সিএসসিআর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ‘বাচ্চা নড়াচড়া করছে না, তার গায়ের মাংস নড়ছে’ বলে প্রসূতিকে সান্ত্বনা দেন। তাকে ধরিয়ে দেন সন্তানের ‘ডেথ সার্টিফিকেট।’ উপায়ান্তর না দেখে প্রসূতি নিজেই বাচ্চাকে নিয়ে গেলেন চাইল্ড কেয়ার নামে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে। ওই হাসপাতালের ওয়ার্মারে দেয়ার পর শরীর স্বাভাবিক হয়। কিন্তু সেখানে বেড খালি না থাকায় নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে বাচ্চাকে ভর্তি করা হয়।
বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেন্টাল সার্জন ডা. রিদওয়ানা কাউসার সিএসসিআর হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, দেহে প্রাণ থাকার পরও যথাযথ চিকিৎসাসেবা না দিয়ে তার নবজাতক বাচ্চাটিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে সিএসসিআর হাসপাতালের দায়িত্বরত ডাক্তার। সিএসসিআর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতকের চিকিৎসায় যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে ‘মেডিকেল এথিকস’ মানেনি বলেও অভিযোগ করে তিনি জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
যদিও সিএসসিআর হাসপাতালের দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা. তানভির জাফর বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম, ‘হাসপাতালে ওয়ার্মার খালি নেই। তাই শিশুটির প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে না। পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দিই।’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতকটিকে মৃত ঘোষণা করেনি বলে দাবি করেন তিনি। মঙ্গলবার বিকালে নগরীর ম্যাক্স হাসাপাতালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এই হাসপাতালের এনআইসিইউতে রাখা হয়েছে নবজাতকটিকে। সেখানে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। এনআইসিইউ ইনচার্জ ডা. বসুবন্ধু বড়ুয়া বলেন, গর্ভে আসার ২৭ সপ্তাহের মধ্যেই এই নবজাতক প্রসব হয়। ওজন ৫০০ গ্রাম। নবজাতককে বাঁচাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। নবজাতকটিকে ওয়ার্মার, অক্সিজেন, আইডি স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিক, কন্টিনিউয়াস প্রেসার ভেন্টিলেশন (সিপিভি) দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, নবজাতকটি বাঁচবে কিনা এটি পরের কথা, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বাচ্চাটি এখনও বেঁচে আছে। সূত্র : যুগান্তর

আরও পড়ুন