বান্দরবানের আলীকদমে অবাধে পাথর উত্তোলনের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্খা করছে স্থানীয়রা। উপজেলার বিভিন্ন ঝিরি, খাল ও পাহাড় থেকে অবৈধ ভাবে জেলার আলীকদম এবং কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার পাথর ব্যবসায়িরা পাথর উত্তোলন করলেও প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ না থাকায় বন্ধ হচ্ছেনা অবৈধ পাথর উত্তোলন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আলীকদম-থানচি সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৪৬ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করে নিলামে বিক্রি করে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নায়েরুজ্জামান। নিলামে ৪৬ হাজার ঘনফুট পাথর নিলাম পান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন। বাঘের ঝিরি এলাকায় আরো ৩ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। এসব নিলামের কাগজ দেখিয়ে দশগুন বেশি পাথর পাচার করছে সিন্ডিকেটটি।
জানা গেছে, আলীকদম-থানচি সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যবহারের অজুহাতে কয়েকজন ব্যক্তি সড়কটির আশেপাশের ঝিরি, পাহাড় ও ঝর্ণা খুঁড়ে হাজার হাজার ঘনফুট পাথর উত্তোলন করে স্তুপ গড়ে তোলে। সে সময় পাথরদস্যুতার সাথে জড়িত ছিলেন উপজেলার হেলাল সওদাগর, চকরিয়ার কলিম উদ্দিন ও হুমায়ুনসহ কয়েক জন ব্যক্তি। অপরদিকে, উপজেলার বাঘেরঝিরি এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে জড়িত জাহিদ, কবির, মাহাবুব, সুজিত ও মহিউদ্দিন। লামা বন বিভাগের মাতামুহুরী রিজার্ভের তুলাতলী, বুজি ও ধুমচি খাল এলাকা থেকে নির্বিচারে পাথর তুলছে স্থানীয় ও বহিরাগত কতিপয় ব্যক্তি।
আলীকদম উপজেলার পানবাজার এলাকার উদয় মনি তংচঙ্গ্যা বলেন, অবৈধভাবে পাথর আহরণে যারা জড়িত ছিলেন ঘুরে ফিরে তাদেরকেই নিলাম দেওয়া হয়। ভ্রাম্যমান্য আদালত পাথর জব্দ করলেও অবৈধ কারবারে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি আইনী ব্যবস্থা। তাই দিন দিন অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বেড়েই চলেছে।
বিদুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, জ্বালানী ও খনিজ সম্পাদ বিভাগ থেকে জারিকৃত খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা-২০১২ এর ৯৫ বিধি অনুসারে খাল,ঝিড়ি ও নদীতে ভাসমান পাথর ব্যাথিত মাটি খুঁড়ে ও পাহাড় কর্তন করে পাথর উত্তোলন করা যাবেনা শর্ত আরোপ করে পাথর আগরণের অনুমতি প্রদান করা হলেও তা মানছেনা স্থানীয় পাথর ব্যবসায়িরা।
কুরুকপাতা ইউপি চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো বলেন, মাতামুহুরী রিজার্ভ এলাকা থেকে কতিপয় ব্যক্তি পাথর আহরণের ফলে পরিবেশে ভারসাম্য নষ্ট হবার পাশাপাশি মাটি খুড়ে পাথর আহরণের ফলে স্থানীয়রা পানি সংকটে ভুগবেন।
স্থানীয় ব্যবসায়িদের তথ্য মতে, প্রতি ফুট পাথর ১৫০ টাকা করে বিক্রি করা হয়, প্রতিটি টিএইছ ট্রাকে করে ১৬০ ফুট পাথর পরিবহন করা যায়, যা ট্রাক প্রতি বিক্রি হয় পঁচিশ হাজার টাকার বেশি দামে।
এই ব্যাপারে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, ভ্রাম্যমান আদালত পাথর জব্দের পাশাপাশি জড়িতদেরকে জরিমানা করা হয়েছে।
স্থানীয় পরিবেশবাদীদের অনেকে মনে করেন, সা¤প্রতিক বছরগুলোতে পাহাড়ধস ও ও নদীর নাব্যতা সংকটের পেছনে অন্যতম কারণ নির্বিচারে পাথর উত্তোলন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ঝিড়ি ঝর্ণা থেকে ও মাটি খুঁড়ে পাথর উত্তোলন, আহরণ বা পরিবহণ নিষিদ্ধ জরুরী হয়ে পড়েছে।
এই ব্যাপার বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, আলীকদমে পাথর আহরণের কোনো অনুমতি নেই, যারা এসব করছে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।