বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় গ্রাম্য মাতব্বরদের নেতৃত্বে বিয়ে পড়ানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খুন হয়েছেন আব্দু শুক্কুর (২৪) নামের এক যুবক। খুনের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হয়। এমন অভিযোগে গতকাল শুক্রবার বিকেলে কথিত স্ত্রী মরিয়ম খাতুন, ঘটনার উস্কানীদাতা মাস্টার জিয়াউল হকসহ ৮ জনকে আসামী করে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন নিহতের বড় ভাই মো. উছমান।
থানায় প্রদত্ত এজাহারে প্রকাশ, গত ২৬ জুন সন্ধ্যায় উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের খোরশেদ আলমের ছেলে মো. আব্দু শুক্কুর সদর ইউনিয়নের দানু সর্দার পাড়ার মৃত মো. হোসেনের মেয়ে মরিয়ম খাতুনের (২৮) বাড়িতে বেড়াতে যায়। এরপর মরিয়ম পূর্বপরিকল্পনামতে বাস টার্মিনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হকের সহায়তায় এজাহারে বর্ণিত আরো ৬ আসামীকে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়ে যায়। মরিয়ম ও মাস্টার জিয়াউল হকের নির্দেশে অপর আসামীরা আব্দু শুক্কুরকে ঘরের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখেন। রাত দশটার সময় আব্দু শুক্কুরের বড় ভাই মরিয়মের বাড়িতে গিয়ে ছোটভাইকে ছেড়ে আনতে চেষ্টা করেন।
মামলার বাদী মো. উছমান বলেন, আমি এ সময় কক্ষের ভেতর থেকে আমার ভাই আব্দু শুক্কুরের আর্তগোঙানীর আওয়াজ শুনতে পাই। আমি আমার ভাইকে ছেড়ে দিতে বললে মাস্টার জিয়াউল হক হুমকি দিয়ে বলেন, মরিয়মকে তোর ভাইয়ের বিয়ে করতে হবে, নতুবা আমাদেরকে নগদ ২ লাখ টাকা দিতে হবে। অন্যথায় তোর ভাইকে এখানে মেরে লাশ বানিয়ে ফেলব।
এজাহারে আরো প্রকাশ,এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আবু ছালাম আটক আব্দু শুক্কুরকে তার ভাইয়ের জিম্মায় ছেড়ে তিনি অনুরোধ করেন। কিন্তু মাস্টার জিয়াউল হকের নির্দেশে অন্য আসামীরা শুক্কুরকে ছেড়ে দেয়নি। রাত তিনটার দিকে শুক্কুরের আত্মীয়-স্বজন ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
এদিকে, পরদিন ২৭ জুন স্থানীয় কাজী কুতুব উদ্দিনকে মরিয়মের বাড়িতে নিয়ে মরিয়মের সাথে আব্দু শুক্কুরের বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ের কাবিন নামায় মামলার বাদীকে অভিভাবকের স্বাক্ষর করতেও বাধ্য করেন বিবাদীরা। কথিত বিয়ে পড়ানোর পরেও বুধবার সারাদিন ও দিবাগত রাতে আব্দু শুক্কুরকে আটক রাখা হয় মরিয়মের বাড়িতে। এজাহারে প্রকাশ, ২৭ জুন দিবাগত রাতের যেকোন সময়ে মরিয়ম ও জিয়াউল হকের সহায়তায় আব্দু শুক্কুরকে অন্যান্যরা আসামীরা অন্ডকোষ চেপে এবং গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে। পরে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে আসামীরা হত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে মৃতদেহটি উপজেলা স্বস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, হাসপাতালে আনার পূর্বের শুক্কুর মারা যান। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মারা যাওয়ার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
কাজি মাওলানা কুতুব উদ্দিন জানান, বুধবার সকালে আমাকে আফসার নামে একব্যক্তি বিয়ে পড়ানোর জন্য ডেকে নিয়ে গেলে আমি এ বিয়ে পড়াই। ওয়ার্ড মেম্বার আবু ছালাম বলেন, ঘটনা শুনে ২৬ জুন রাতে আমি মরিয়মের বাড়িতে যাই। তখন আব্দু শুক্কুরকে তার ভাই ও ভগ্নিপতির জিম্মায় ছেড়ে দিতে বলি। কিন্তু মরিয়মরা তাকে ছাড়তে রাজি হয়নি। পরে ঘটনাটি আমি থানায় ও চেয়ারম্যানকে জানাই।
এ ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত জিয়াউল হক সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার দিন রাতে আমাকে কিছুলোক মোবাইল করলে আমি বান্দরবান আছি। এরপর ওয়ার্ড মেম্বার আবু ছালাম ফোন করলে, আমি বাসায় আছি বলি। পরে মেম্বারের ডাকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ১০-১২ জন লোক উপস্থিত। আমি মরিয়ম ও শুক্কুরকে কিছু গালি দিয়ে সেখান থেকে চলে যাই। পরে কি হয়েছে তা আমি কিছুই জানি না।
এই ব্যাপারে আলীকদম থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. আজমগীর বলেন, এ ঘটনায় একটি এজাহার পেয়েছি, আব্দু শুক্কুরের লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।