আলীকদমে ম্রো’দের বাগান ধ্বংস করলো বন বিভাগ
বান্দরবানে আলীকদম উপজেলায় ম্রো জনগোষ্ঠীর সৃজিত কলাবাগান কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের বিরুদ্ধে। উপজেলার ৩ নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের কইঁয়া ঝিড়ির মেনথক ম্রো পাড়া ও কাইংওয়াই ম্রো পাড়ায় চারটি কলা বাগানে ১২০০টি কলাগাছ ও উচ্চফলনশীল ৪ টি পেঁপে গাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ২১ জুন ২০২৫ তারিখে লামা বন বিভাগের অধীন আলীকদম রেঞ্জের কর্মকর্তা ও বন প্রহরীদের একটি দল কোনো প্রকার নোটিশ কিংবা আলোচনা ছাড়াই এসব ফলজ গাছ কেটে ফেলে। পরে ওই জমিতে বনবিভাগ বিভিন্ন প্রজাতির বনজ চারা রোপণ করে যায়।
এই বিষয়ে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত মেনথক ও কাইংওয়াই ম্রো পাড়ার বাসিন্দা ইয়াং বো ম্রো, রেংথাং ম্রো, ডিং ওয়াই ম্রোয়ের আনুমানিক ছয় একর জায়গা জুড়ে প্রায় ১২০০ টি কলাগাছ ও ৪ টি উচ্চফলনশীল পেঁপে গাছ কেটে ফেলেছেন বনবিভাগের সদস্যরা। কলাবাগান কেটে কড়ই, গামারি ও কৃষ্ণ চূড়ার গাছ রোপণ করে বনবিভাগের সদস্যরা।
ক্ষতিগ্রস্ত ডিং ওয়াই ম্রো বলেন, “এখানে আমরা চৌদ্দ পুরুষ ধরে বসবাস ও জুমচাষ করে আসছি। দুই বছর আগে আমরা চার পরিবার মিলে এখানে প্রায় ১৪৫০ মতো কলাগাছ রোপণ করেছি। আমাদেরকে কোনো প্রকার নির্দেশনা ছাড়া কলাবাগান কেটে ফেলেছে। কলাবাগানে কলা ধরেছে এমন কলা গাছগুলোও কেটে নিয়ে গেছে বনবিভাগের সদস্যরা।

অন্যদিকে, ইয়াং বো ম্রো জানান, দুই মাস আগে রোপণ করা নতুন জুমের ধান গজাতে শুরু করেছিল। বন বিভাগের লোকজন ওই জমিতেও চারা রোপণ করতে গিয়ে ধানের চারাগুলো পাড়া দিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে জানান, গাছ কাটার কারণ জানতে চাইলে বন বিভাগের এক কর্মকর্তা হুমকি দেন—“এই বিষয়ে সাংবাদিক বা অন্য কারও কাছে অভিযোগ করলে রিজার্ভ বন ধ্বংস ও গাছ পাচারের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে।” ভয়ে প্রথমে মুখ না খুললেও, পরে স্থানীয়ভাবে আলোচনার পর পাড়াবাসীরা গণমাধ্যমে বিষয়টি জানানোর উদ্যোগ নেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাতামুহুরির রেঞ্জ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন এলাহি বলেন, এখানে কোনো প্রকার বাগান ছিলো না, আমরা জঙ্গল সাফ করে বাগান করেছি।
সরেজমিনে গিয়ে কলাবাগান কেটে ফেলার চিত্র পাওয়া গেছে এমন প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন, আমি এতকিছুই জানি না। সরকার যেখানে বন সৃজন করতে চায়, সেখানে গাছ লাগানো স্বাভাবিক। আমরা যুগ যুগ ধরে এই কাজ করছি ।
এই বিষয়ে লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।