আশানুরুপ বৃষ্টি হয়নি, পাহাড়ের জুমিয়াদের দু:শ্চিন্তার শেষ নেই

পাহাড়ের উঁচু নিচু জমিতে জুম চাষ একটি ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদ। চলতি বছরের বৃষ্টি না হওয়ায় জুমের ফসল ভালো হচ্ছেনা। এর ফলে বান্দরবানের থানচি উপজেলার ১১টি পাহাড়ী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির মানুষ সামনের বছরে তাদের পরিবার কিভাবে চালাবে সেই দু:শ্চিন্তায় দিন পার করছে। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া খরচ চালাবে কি করে, সে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পাহাড়ে প্রতিটি জুম চাষীদের।

থানচি লিক্রে সড়কের পাশে ১০/১২ জন জুম চাষী বলছিলেন জুমের ধানসহ নানান জাতের চাষের ফলন মরে যাচ্ছে কথাগুলো বলেছিলেন থানচি সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে কাইথং ম্রো পাড়ার ও কুংহ্লা ম্রো পাড়া বাসিন্দা মেনলাও ম্রো, মেনথং ম্রো’সহ অনেকে।

সরেজমিনে সিংক্লান ম্রো পরিবারের বৃদ্ধ, বাবা, মা, ছেলে, মেয়েসহ ৮ জন সদস্য রয়েছে, তিনি বলেন, গত বছরে পাহাড়ী জমিতে মোট ১৩ হাঁড়ি বীজ ধান রোপন করেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বৃষ্টি ও হয়েছে, সে বছরে ফলন হয় ৫শত হাঁড়ি ধান, এছাড়াও কুমড়া, জুম কুমড়া, তিল, ভূট্টা, মরিচ, ফল (মার্ফা) বিক্রি করে ভালো লাভবান হয়েছেন। পরিবারের ভরণ পোষনের কোন অসুবিধা হয়নি।

চলতি বছরে লিটক্রে সড়কে পাশে মোট ১২ হাঁড়ি ধান লাগানো হয়, তবে বৃষ্টি না হওয়া খরায় ধান এবং অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়। লাল হয়ে গেছে ধান ও নানান ফসল। বৃষ্টি নির্ভরশীল জুম চাষের বৃষ্টি না হলে ১শত হাঁড়ি ধান পাবে কিনা সন্দেহ করছেন তিনি। তার মতে, কুংহ্লা পাড়া ৫০ পরিবার, কাইথং পাড়া ৮০ পরিবার একই অবস্থা পরিনতি হবে।

একই সাথে সড়কে দুই পাশে রুমা ও থানচি উপজেলা সীমান্ত রেখার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে রাংদিয়া পাড়া বাসিন্দা বীর বাহাদুর ও অনেকে একই কথা জানালেন। তারা বলেন, গত ফেব্রুয়ারী/মার্চ দুই মাস পাহাড়ের জঙ্গল কাটা শুরু করেন। এপ্রিল মাসে আগুন লাগাই, মে মাসে বীজ ধান ও অন্যান্য ফসল রোপন করি। জুন, জুলাই ২ মাস পরিচর্চা করেন তারা। আগষ্ট মাসের কিছু কিছু ধান পাকার কথা, সম্পুর্ন ধান পাকতে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর লাগবে। জুমের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে নভেম্বর, ডিসেম্বর লাগবে। এবারে পাহাড়ের মানুষের খাদ্য সংকট বা অভাব দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী বলে মনে করছেন তারা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের তথ্য মতে, থানচি উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৩১৬৭ পরিবার সাধারন কৃষক রয়েছে। এর মধ্যে উঁচু ভূমিতে জুম চাষ করেন ৯৫ শতাংশ পরিবার, বাকিরা বিভিন্ন ঝিড়ির মাঝ দিয়ে সমতল ভূমিতে চাষ করে থাকেন।

NewsDetails_03

তাদের মতে, মোট ২৪৮৪ হেক্টর জমি রয়েছে, সেখানে ২৪৬২ হেক্টর উঁচু জমিতে জুম চাষ করেন। বাকি ২২ হেক্টর জমি কৃষি কাজে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া জুমের ধান ছাড়া ও অন্যান্য ফসল মধ্যে মরিচ, তিল, ভূট্টা, শাক সবজি, কুমড়া, কুমড়া, মার্ফা ফল ইত্যাদি।

কৃষি বিভাগ জরিপে উঁচু ভূমিতে আদা ৩৪২ হেক্টর, হলুদ ৩৫৭ হেক্টর, তিল ২৭১ হেক্টর, মরিচ ৮০ হেক্টর, শাক সবজি ২১২ হেক্টর জমিতে কৃষকরা ব্যবহার করে থাকেন। চলতি বছরে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০২১.৮২ মে: টন। গতবছরে ৬৪৩৯.৩৯ মে: টন ফলন হয়েছিল ৬৬৮৯.৪৮ মে: টন লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে ২০০ মে: টন বেশী উদপাদন হয়েছে বলে দাবী কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিশ্বজিত দাশ গুপ্ত বলেন, চলতি বছরে ১০০ জন কৃষক পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রনোদনা হিসেবে ব্রি-বীজ ধান ৫ কেজি, ১০ কেজি এমওপি, ২০ কেজি ডিএফপি সার বিনামূল্যে বিতরন করেছেন। এছাড়া কৃষি জমির জন্য ১০ পরিবারকে প্রদর্শণী প্লট হিসেবে সহযোগীতা করা হয়েছে।

কুংহ্রা পাড়া বাসিন্দা সিংক্লাং ম্রো জানান, কৃষি অফিসারদের আমরা চিনিও না, জানিও না। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলেও আমাদের পাড়ায় কোন দিন আসেনা।

তিন্দু ইউনিয়নের বাসিন্দা থাংলং ম্রো জানান, জুম চাষের উপর বর্তমান ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষন পেলে বা সার, কীটনাষক, কৃষি উপকরন পেলে জুম চাষে পদ্ধতিগত ভাবে এগিয়ে যেতে পারতাম।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মজ্ঞুরুল আরিফিন সবুজ বলেন, সামনে বৃষ্টি হলে লক্ষ্যমাত্রা পৌছতে পারবো বলে দৃঢ় আশা করছি, কিন্তু বৃষ্টির এমন অবস্থা থাকলে লক্ষ্যমাত্রা পৌছতে কষ্ট হবে।

আরও পড়ুন