ইউএনও ও পরিচালনা কমিটির সহযোগিতা এসএসসি পরীক্ষায় ৬ পরীক্ষার্থী
ইউএনও এবং স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির তৎপরতায় অবশেষে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছে ৬ জন ছাত্রী। এর আগে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও দায়িত্বহীনতা এসব শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। এ ঘটনা ঘটেছে বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির ভাষ্য ও তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় আলীকদম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন আব্দুল হামিদ। তিনি ১১২ জন ছাত্রীর ফরম ফিলাপ করেন। প্রকৃতপক্ষে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো ১১৭ জন। তবে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও ফরম ফিলাপ নিয়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যে গরমিল পাওয়া যায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধান শিক্ষক বদিউল আলম ২৭ এপ্রিল থেকে ফরম ফিলাপ না হওয়া ছয় শিক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র দিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছে। ২৯ এপ্রিল বিকেলে প্রধান শিক্ষক এসব শিক্ষার্থীদের জানায়, ‘সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ আমাদের ফরম পূরণ করে নাই, আমরা পরীক্ষা দিতে পারব না।’ এদিকে, রানরাও ম্রো নামের একজন ছাত্রীর প্রবেশপত্র আসলেও অজ্ঞাত কারণে তাকে প্রবেশপত্র না দিয়ে তাড়িয়ে দেন প্রধান শিক্ষক।
সাহাব উদ্দিন নামের একজন ছাত্রী অভিভাবক জানান, ‘প্রধান শিক্ষকের অবহেলায় প্রবেশপত্র সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, আমরা এর বিচার চাই।’
সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ বলেন, গত ২৭ এপ্রিল থেকে আলীকদম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র বিতরণ শুরু হয়। এরমধ্যে ৫ জন ছাত্রীর এসএসসি’র ফরম ফিলাপ না হওয়া ও প্রবেশপত্র শিক্ষাবোর্ড থেকে না আসার বিষয়টি প্রধান শিক্ষক মোঃ বদিউল আলম অবগত ছিলেন। কিন্তু আমাকে এবং স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে বিতর্কিত করতে তিনি বিষয়টি গোপন রাখেন। আমাকে বিষয়টি জানানো হলে, আমার নিজ দায়িত্বে শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে বিষয়টি সমাধান করতাম।
বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোঃ বদিউল আলমের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলেও কথা শুনা যাচ্ছে না বলে কেটে দেন। পরবর্তীতে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলতে চাইলে কথা না বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরিচালনা কমিটি ও ইউএনও সমস্যা সমাধান করেছেন বলে জানান। একপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি উত্তর দেব না,আপনাদের যা ইচ্ছে তা করেন।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন জানান, ৫ জন শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র জটিলতার বিষয়টি প্রধান শিক্ষক প্রথমে আমাদের জানাননি। আমরা ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিষয়টি অভিভাবকদের কাছ থেকে জানতে পারি। তাৎক্ষণিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি দুংড়ি মং মার্মাসহ আমি ইউএনও’র সহযোগিতা নিয়ে বোর্ডে যোগাযোগ করে রেজিস্ট্রেশন ও প্রবেশপত্র সংগ্রহে তৎপরতা চালাই।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দুংড়ি মং মার্মা বলেন, ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় অভিবাবকদের কাছ থেকে অবগত হয়ে স্কুলে উপস্থিত হই। ইউএনও’র সহযোগিতা নিয়ে অবশেষে বোর্ড থেকে পরীক্ষার দিন সকাল ৮টায় প্রবেশপত্র সংগ্রহ করি। ফলে ৫ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে।
তিনি জানান, দায়িত্ব অবহেলার কারণে সাবেক এবং বর্তমান প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাবের মোঃ সোয়াইব জানান, ৬ শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র না আসার বিষয়টি পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকরা সন্ধ্যার পর জানিয়েছে।অল্প সময়ে মধ্যে বোর্ডে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এদিকে ৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা শেষে পরিচালনা কমিটি পরীক্ষার বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। এসময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পরিচালনা কমিটির সভাপতি দুংড়িমং মারমা ও সদস্য জমির উদ্দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একেই সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।