খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের ছাত্রী ইতি চাকমা’র খুনীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবিতে আজ বুধবার খাগড়াছড়িতে ডিসি অফিসের সম্মুখে অবস্থান ধর্মঘট ও জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, নারী আত্মরক্ষা কমিটি, সাজেক নারী সমাজ ও ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বিভিন্ন নারী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা স্বনির্ভর, মধুপুর, মিলপুন, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল সহকারে ডিসি অফিসের সম্মুখে মিলিত হয়ে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করে। এসময় ইতি চাকমার পরিবারের লোকজনও এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নীতি শোভা চাকমা প্রেরিত এক বার্তায় জানা যায়, অবস্থান ধর্মঘটে হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কাজলী ত্রিপুরা ও পিসিপি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা, ইতি চাকমার মা ভদ্রপুদি চাকমা।
বক্তারা বলেন, ইতি চাকমা হত্যাকে আমরা বিচ্ছিন্ন, আলাদা বা সর্বশেষ কোন দুঃখজনক মর্মান্তিক ঘটনা বলে মনে করি না। কারণ আমরা ধারাবাহিকভাবে এ ধরণের ঘটনা পরিলক্ষিত করছি। আমরা তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বারে বারে এও প্রত্যক্ষ করছি যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী নির্যাতন-হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় কিন্তু হত্যা-নির্যাতনে জড়িতদের কোনো যথাযথ বিচার ও শাস্তি হয় না।
বক্তারা অভিযোগ করে আরো বলেন, ইতি চাকমা হত্যার ঘটনা তদন্তের উছিলায় তার ঘনিষ্ঠ সহপাঠী ও বন্ধুদের আটক-জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। যা পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত এবং হত্যাকান্ডের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা। বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইতি চাকমা খুনের দুই সপ্তাহের অধিক অতিক্রান্ত হলেও ঘটনায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের এখানো আটক করা হয়নি। এছাড়া ইতি চাকমার মোবাইলসহ যাকে আটক করা হয়েছে তাকেও আটক দেখানো হয়নি।
নিহত ইতি চাকমার মা ভদ্রপুদি চাকমা তাঁর মেয়ের হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি করেন। তিনি ভবিষ্যতে তাঁর মেয়ের মতো কারোর মেয়ে বা ছাত্রী যাতে নির্মম হত্যার শিকার না হয় সেজন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।
অবস্থান ধর্মঘট চলাকালীন হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর সভাপতি নিরূপা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সহ-সভাপতি জ্যোৎস্না রাণী চাকমা, নারী আত্মরক্ষা কমিটির আহবায়ক এন্টি চাকমা, সাজেক নারী সমাজ-এর সভাপতি নিরুপা চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি কাজলী ত্রিপুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। জেলা প্রশাসক রাশেদুল ইসলাম স্মারকলিপিতে উত্থাপিত দাবি বাস্তবায়নে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে ৫ সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেন।
অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি থেকে ইতি-তনু’র খুনী ও কল্পনা অপহরণকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে আগামী ২৯ মার্চ ২০১৭ পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কালো ব্যাজ ধারণ ও ১ ঘন্টা ক্লাশ বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচীতে খাগড়াছড়ি জেলার ৫ শত নারী ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।