ঈদের ছুটিতে করোনার কারনে রাঙামাটির পর্যটন স্পটগুলো নিরব নিস্তব্দ হয়ে পড়ে আছে। যেখানে এই ঈদের মৌসুমে রাঙামাটির পর্যটন ঝুলন্ত ব্রীজ, প্রকৃতির ভূ-স্বর্গখ্যাত সাজেক ভ্যালী, পুলিশ পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক পিকনিক স্পট, ডিসি বাংলোসহ সবকটি পর্যটন কেন্দ্র যেখানে পর্যটকের ভীড়ে জমজমাট থাকে সেখানে মহামারী করোনার রাঙামাটি জেলার সব পর্যটন স্পটগুলো গত ৩১ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় মারাত্মক অর্থ সংকটে পড়েছেন পযটন ব্যবসায় জড়িত ব্যবসায়ীরা। আয় রোজগার না থাকায় অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটচ্ছেন।
বাঘাইছড়ির সাজেকের শান্তি ছায়া ও মেঘের পালকি রিসোর্টের মালিক মো: সাহাবুদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন,করোনায় গত ঈদের সময়েও এবং এবার ঈদেও আমাদের ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। এই ঈদের মৌসুমে সাজেকে প্রায় ১০০-১৫০ জীপ,মাইক্রোবাস,মোটর সাইকেল নিয়ে প্রতিদিন প্রায় হাজারো টুরিষ্ট সাজেক বেড়াতে আসতেন । এতে আমাদের দৈনিক গড়ে ৫০ হাজার টাকার মতো ব্যবসা হতো। কিন্তু এখন কিছুই নেই।
রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক ইউপি সচিব বিশ্বজিৎ চক্রবর্ত্তী বলেন, প্রতিবছর ঈদের দিন থেকে শুরু করে সাজেকে সপ্তাহব্যাপী টুরিষ্টরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাজেকের অপরুপ সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে আসেন । কিন্তু গত বছর এবং এবারও করোনার কারনে সরকারী নির্দেশনার কারনে পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ থাকায় কোন টুরিষ্ট সাজেক ভ্রমন করতে পারছেন না। এতে করে পর্যটক এবং সাজেকের ব্যবসায়ীরা প্রচুর।ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
রাঙামাটি পর্যটন সূত্রে জানা গেছে,করোনা মহামারীর কারণে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসা। গত ৩১ মার্চ থেকে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়ায় এখানকার রির্সোট, হোটেল মোটেল ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খালী পড়ে আছে।
এদিকে, রাঙামাটি স্থানীয় ব্যবসাীয় মো: মেজবাহ উদ্দিন ও মো: হান্নান জানান, আমরা রাঙামাটিতে বসবাস করলেও ব্যবসা বাণিজ্যের কারনে পরিবার নিয়ে নিয়ে কোথাও তেমন ঘোরাঘুরি হয়নি। প্রতি বছর ঈদের সময় চেষ্টা করি পরিবারের সকরকে নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরে আসতে। কিন্তু করোনার কারনে এই ঈদের দিনে বাসায় বসে ঈদ উদযাপন করতে হচ্ছে।
রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার এলাকার হোটেল মতিমহলের স্বত্তাধিকারী শফিউল আজম বলেন, গত দেড়মাস ধরে আমরা খুবই আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। করোনার কারনে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় রাঙামাটিতে কোন টুরিস্ট আসছে না। এর ফলে প্রায় দুইমাস ধরে কয়েক লক্ষ টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে।
প্রায় দুই মাস ধরে রাঙামাটি একেবারে পর্যটক শূন্য। ফলে পর্যটনের সাথে জড়িত নৌ পরিবহন, ও হোটেল রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায় মারাত্মক ধস নেমেছে। করোনার দাপটে লকডাউনের কারণে কাজ হারিয়েছেন অনেক মানুষ। লকডাউনে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে স্থানীয় টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরাও ।
এই মৌসুমে মাসের পর মাস ব্যবসা বন্ধ থাকায় মাথায় হাত পড়েছে তাদের। একইভাবে করোনায় ভাটা পড়েছে রাঙামাটির হোটেল-মোটেল ব্যবসা। ফের ব্যবসা দাঁড় করাবেন কিভাবে তা নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। সে অপেক্ষায় দিন গুণছেন তারা।
রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি এলাকার স্থানীয় টেক্সটাইল কাপড় ব্যবসায়ী অনুপম ত্রিপুরা বলেন, প্রতিবছর ঈদে রাঙামাটিতে অনেক পর্যটক ঘুরতে আসে । এতে আাদের অনেক বেচাকেনা হয়। কিন্তু দুইবছর ধরে ঈদের মৌসুমে আমাদের ব্যবসা নেই বললে চলে।
রাঙামাটি পর্যটন নৌ ঘাট এর ম্যানেজার রমজান আলী বলেন, কারোনার কারনে পর্যটন নৌ ঘাটের সকল নৌযান শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। গতবার কারোনাকালীন লকডাউনের সময় সরকারী কিছু অনুদান পেলেও এবার কোন সহায়তা কারো কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত পায়নি। তিনি বলেন, পর্যটন ঘাটের বেশ কয়েকজন বোট চালক মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি আবাসিক হোটেল বহুমুখী সমবায় সমিতির সা: সম্পাদক মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে রাঙামাটির সব হোটেল মোটেল ও টুরিষ্ট বোট বন্ধ রয়েছে। এতে করে আমাদের অনেক র্কমচারীদের বাধ্যতামূলকভাবে ছুটি দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর করেনাকালীন সময়ে সরকারীভাবে বেশ কিছু সহায়তা পেলেও এবার এখনও কোন কিছু পাইনি।পর্যটন ব্যবসা বন্ধ থাকায় কয়েকশ কোটির টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
এদিকে, রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদও সার্কেল) তাপস রঞ্জন ঘোষ বলেন, করোনার মহামারীর কারনে রাঙামাটির পুলিশ পলওয়েল পার্কসহ সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, যাতে করে আজকে ঈদের দিনেও কোন পর্যটক টুরিষ্ট স্পটগুলোতে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন যথেষ্ট সজাগ রয়েছে।
রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়–য়া বলেন, লকডাউনের পর থেকে রাঙামাটি পর্যটনের কার্যক্রম শুন্য অবস্থায় রয়েছে। আজেকর এই ঈদের দিনে রাঙামাটি পর্যটনের ঝুলন্ত সেতুতে প্রচুর টুরিষ্ট বেড়াতে আসেন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কিন্তু করোনায় সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের অনেক কর্মচারী আর্থিক সংকটে আছে। এখানকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন,পর্যটন বন্ধ থাকায় আমরা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। সৃজন বিকাশ বড়–য়া বলেন, পর্যটন বন্ধ থাকায় আমাদের প্রতিমাসে ৩৫ লক্ষ টাকার লোকসান হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে কখন উত্তরণ পাবো তার কোন দিনক্ষণ জানা নেই।
রাঙামাটি পর্যটন ঝুলন্ত সেতু।