ঈদের ছুটিতে লামার মিরিঞ্জা পর্যটনে

purabi burmese market

বান্দরবানের লামা উপজেলার মিরিঞ্জা পর্যটন কেন্দ্র
প্রকৃতির সাজানো সুউচ্চ সবুজ পাহাড়, বনানী ঘেরা উঁচু নিচু পাহাড়ের গায়ে আঁকাবাঁকা পথ, আকাশ, নদী, উপত্যাকা আর সাড়া জাগানো টাইটানিক জাহাজের মনোরম ভাস্কর্যে বান্দরবানের লামার মিরিঞ্জা পর্যটন এনে দিয়েছে নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য। প্রকৃতি যেন তার উদার হাতে সুনিপুণ কারিগরের ন্যায় মুকুটশিখর মিরিঞ্জা পাহাড়কে মোহনীয় করে সাজিয়ে রেখেছে। ঘন সবুজের আবরণে আবৃত বান্দরবানের লামা উপজেলার মিরিঞ্জা পর্যটনে অবসরের প্রতিটিক্ষণ আপনজনকে নিয়ে কাটানোর জন্য বেড়িয়ে আসতে পারেন।
নির্মল আনন্দের রাজ্যে নগরের যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে গড়ে উঠেছে প্রকৃতির বুকচিরে আকাশ ছোঁয়া চিরসবুজ শান্তির সলিল ধারা। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম সৌন্দর্য্যরে সমন্বয়ে গড়া এ পর্যটন হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণ পিপাসুদের। এখানে না আসলে মনে হবে যেন, আপনার ভ্রমণটাই অপূরণই রয়ে গেল। তাই দেরি না করে ঈদে বাড়তি আনন্দ উপভোগ করতে আসুন চিরসবুজ মিরিঞ্জা পর্যটনের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য।
সাগর পৃষ্ট থেকে প্রায় ১৫শ ফুট উঁচু মিরিঞ্জা পর্যটন পাহাড়। এখানে ওঠা মাত্রই দৃষ্টি গোচর হয় লতাগুল্মের দৃশ্য শোভা, পাখ-পাখালির কল-কাকলি। এসব চোখ, কান, মন সব ভরিয়ে তোলে। মাথার উপর টুকরো নীল আকাশ, প্রতিনিয়ত মেঘ ছূঁয়ে যায় মিরিঞ্জা পাহাড়ের গায়। লতাগুল্মের কারুকার্যময় অনেক বড় বড় গাছের উপর আকাশ যেন ছাঁদ। এছাড়া জংগলি ফুলের ম ম গন্ধে মাখামাখি, পাহাড়ের নীচে লুকানো ঝর্না, চূড়ায় আদিবাসীদের আদলে টংঘর, জুম চাষ আর অরণ্যরানীর ঐতিহ্যের পোষাক। তাদের পায়ের খারুর ঝনঝন আরও কত কি! পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয় করে তুলতে গড়ে তোলা হয়েছে সাড়া জাগানো টাইটানিক জাহাজের ভাস্কর্য।
এ পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করার সময় মনে হয় যেন পশ্চিম দিগন্তে দিব্য চোখের করায়ত্ব, দিগন্ত রেখায় ডুবন্ত রবির রক্তিম আবহ দর্শন। এখানে রয়েছে পশ্চিমের পাহাড়-টিলার দৃষ্টি নন্দন চির সবুজ পোষাক। সূ-উচ্চ পাহাড়ের শিখর থেকে কক্সবাজার সাগর সিন্দুর উত্তাল তরঙ্গমালার মনোমুগ্ধকর নৃত্য ও সাগরের উপর চলমান জাহাজের সম্মুখ যাত্রার দূর্লভ দৃশ্য। এছাড়া এ পাহাড়ে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম কক্সবাজারের সাগর সৈকত ও বঙ্গোপসাগরে রাত্রিকালীন অলংকার লাইট হাউসের আলোর ঝিলিক দেখার সুযোগ। যা ভ্রমণ পিপাসুদের মনকে উদ্ধেলিত করে তুলবে। মেঘমুক্ত আকাশে তারার মেলা, মনে হয় সূ-উচ্চ মিরিঞ্জা’র হাতের নাগালে। কখনো বা পাহাড়ের সাথে মেঘের লুকোচুরি।
পার্বত্য লামা-আলীকদম উপজেলার ভূমির অসংখ্য উৎস্য থেকে জন্ম নেয়া স্রোতম্বিনী মাতামুহুরী নদীর স্বপ্নীল গতিধারা ভ্রমণ পিপাসুদের মুগ্ধ করার আপেক্ষ রাখেনা। পাহাড়ের দক্ষিন প্রান্তে সেই ১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবন্ত টাইটানিক শিপের পুনরুত্থিত পাহাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে সাড়াজাগানো সেই ইতিহাসের টাইটানিক শিপ’র ভাস্কর্য। এ শিপের পশ্চিম দিগন্তের মাথিতে দাঁড়ালে প্রেমিক প্রেমিকাদের মনে করিয়ে দেয় হাজার বছর পূর্বের টাইটানিক চিত্র কাহিনী। আর এখানে দাঁড়ালে মন হারিয়ে যায় প্রেম সাগরে। এ চূড়া থেকে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র সৈকতের ঢেউ, ভাসমান জাহাজ স্বচক্ষে দেখার জন্য বসানো হয়েছে বায়নোকুলার। এটি ভ্রমণ পিয়াসীদের আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
নির্মাণ করা হয়েছে সুরম্য গিরিদ্বার, রেষ্ট হাউজ কাম ওয়েটিং সেড বনরত্ন। আপনজনকে নিয়ে নির্জনে বসে গল্প করার স্থান সংযোগ সেতুসহ দুই স্তরের গোলঘর মালঞ্চ। নির্মাণ করা হয়েছে টেলিস্কোপ ঘর এবং প্লাট ফরম। জোৎস্মা রাতে চাঁদ দেখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে চন্দ্রমা গোলঘর। শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে মিনি শিশুপার্ক। এখানে রয়েছে শিক্ষা সফর ও পিকনিক পার্টি আয়োজনের সুব্যবস্থা। ভ্রমণ পিপাসুদের নিরাপত্তার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে স্পেশাল পুলিশ ফাঁড়ি। এ পর্যটন কমপ্লেক্সকে পর্যটন শিল্পে গড়ে তোলার জন্য কার ক্যাবল, পৃথিবীর দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু আর দীর্ঘ প্রায় ৩ কি. মি. লেক নির্মাণের পরিকল্পনাও হাতে নেয়া হয়েছে।
পর্যটনের পূর্ব দিগন্ত জোড়া সবুজ পাহাড়ের সারিতে চোখের পলকও থেমে যায়। ছোট ছোট কুঁড়েঘর। প্রায় ১হাজার ফুট গভীর ঝিরি থেকে উৎঘিরিত জল সিঞ্চনের বিরামহীন কলরব। লক্ষ্য করা যায়- বন মোরগ, খরগোশ, মায়াবী বনো হরিণের অবাধ বিচরণ-ডাক ছাড়াও এখানে রয়েছে আরো কতকি ? টংঘরে পাহাড়ী নর-নারীর সরল জীবন যাপন, এ যেন এক অনন্য ভূবন। অরণ্যে পাহাড়ী মিরিঞ্জা চূড়াকে এত সবুজ মায়া, টিলা-টক্কর, পাহাড়ী ঝরণা, কাঁকর বিছানো পথে এত আমোদ করা আন্তরিকতা এখানে না আসলে বোঝাই যাবে না। এখানকার মানুষের হৃদয়ে রয়েছে দিগন্তের বিস্তার আর আতিথ্যের ঐশ্বর্য্য। শীতের এ মৌসুমে গাছে গাছে নতুন পল্লাব, প্রকৃতি নতুন উদ্যমে সেজেছে। এখনই বেড়ানোর প্রবল ইচ্ছা মনের ভেতর ঘুরেফিরে।
পর্যটনের কাছেই উপজেলা সদরে আরো থাকছে, মুরুং, মার্মা, ত্রিপুরাসহ ১১ ভাষার স¤প্রদায়ের সংস্কৃতি ও লোকাচারের সান্নিধ্য। শতশত বর্ষ আগের বিশাল আকৃতির বৌদ্ধ মূর্তি। থাকছে সুঃখী ও দুঃখী নামের দুটি ১’হাজার ফুট সুউচ্চ ২টি পাহাড়ের বুকচিরে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা মাতামুহুরী নদী। এছাড়াও মিরিঞ্জা ঘুরে ১ ঘন্টার মধ্যে সরাসরি ডুলহাজারার সাফারি পার্কসহ পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার চলে যাওয়া যায়। এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিনওয়ান নু জানান, ভ্রমণ পিপাসুদের কক্সবাজারের পাশাপাশি বাড়তি আনন্দ দেবে মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্সর অপরুপ সৌন্দর্য। এখানে পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে।

আরও পড়ুন
1 মন্তব্য
  1. Hridoy Marma বলেছেন

    tnx

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।