উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া এক নতুন দীঘিনালা

NewsDetails_01

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যে ভরা পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ৯টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। একসময়ের পিছিয়ে পরা এ জেলায় লেগেছে ধারাবাহিক উন্নয়নের ছোঁয়া। শুধু জেলা সদরেই নয়, বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডগুলো একেকটি শহরে রুপান্তরিত হচ্ছে। খাগড়াছড়ি জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল উপজেলার নাম দীঘিনালা। এটি মাইনী নদীর তীরে অবস্থিত। ৫টি ইউনিয়ন সহ ২১টি মৌজা নিয়ে গঠিত এ উপজেলা।

১৯১৬ সালে দীঘিনালা থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। বাংলা উইকিপিডিয়া তথ্য মতে, দীঘিনালা উপজেলার মোট আয়তন ৬৯৪.১২ বর্গ কিলোমিটার।এটি আয়তনের দিক থেকে খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা।

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দীঘিনালা উপজেলার জনসংখ্যা ১,০৭,৩৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৫,০৯২ জন এবং মহিলা ৫২,২৭১ জন। মোট জনসংখ্যার ৩১.৭৩% মুসলিম, ৯.১৭% হিন্দু, ৫৭.৯৮% বৌদ্ধ এবং ১.১২% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। এ উপজেলায় চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা প্রভৃতি উপজাতি জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

২৯৮ নং খাগড়াছড়ি আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি’র পৈতৃক ভিটা দীঘিনালায়। এছাড়াও সাবেক সাংসদ, মন্ত্রী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, কবি, সাংবাদিক সহ অনেক সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার জন্ম এ দীঘিনালায়।

উপজেলার অধিকাংশ জনগনের দাবী বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সারাদেশে উন্নয়নের গনজোয়ার বইছে৷ এরই ধারাবাহিকতায় শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ও দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মোহাম্মদ কাশেম’র আন্তরিক প্রচেষ্টায় ধারাবাহিক অগণিত উন্নয়নে পাল্টে যাচ্ছে দীঘিনালা।

পাশাপাশি উপজেলার শান্তি, শৃঙ্খলা, উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় দীঘিনালা উপজেলা প্রশাসন, দীঘিনালা থানা ও দীঘিনালা সেনা জোনের গুরুত্ব অপরিসীম।

সূত্র মতে, দীঘিনালায় একটি মাত্র বেসরকারি (এমপিওভুক্ত) কলেজ ছিল। এ কলেজকে সরকারি করনের পাশাপাশি আরও দুটি কলেজ স্থাপন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। পাশাপাশি এসব কলেজে দৃষ্টিনন্দন একাডেমিক ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও দীঘিনালা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নতমানের একাডেমিক ভবনের কাজ নির্মাণাধীন৷ দীঘিনালার সকল বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও দাখিল মাদ্রাসায় দৃষ্টিনন্দন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, সরকারি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি অত্র উপজেলার শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা প্রদান লক্ষে ও বেকারত্ব দূরীকরণে একটি অত্যাধুনিক মানের ট্যাকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের কাজ নির্মাণাধীন। দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের বঙ্গবন্ধু বৃত্তি ও উপবৃত্তি সহ বিভিন্ন শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। এ উপজেলায় স্বাক্ষরতার হার এ এক যুগে দ্রুত এগিয়ে গেছে৷

দীঘিনালায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি আধুনিক হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। তাছাড়া ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে একাধিক কমিউনিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে পাড়ায় পাড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

NewsDetails_03

দীঘিনালায় মাইনী নদীর উপর থানাবাজার ও ছোটমেরুং বাজার সংলগ্ন এলাকায় ইতোমধ্যে দুইটি সেতুর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হাচিনসনপুরে অত্যাধুনিক মানের ব্রিজ নির্মাণকাজ চলতি বছরেই শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দীঘিনালায় উন্নতমানের মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজও অচিরেই শুরু হবে৷

এছাড়াও অত্যাধুনিক মানের দীঘিনালা উপজেলা সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন, থানা সম্প্রসারিত ভবন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, রেস্ট হাউজ, হাট-বাজারে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ সহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা নির্মাণ করেছে এ সরকার। পাশাপাশি দীঘিনালা উপজেলা কমিউনিটি সেন্টারের কাজও শেষ পর্যায়ে। তাছাড়া ছোটমেরুং পুলিশ ফাঁড়ি ও আনসার হেডকোয়ার্টারে ভবন নির্মাণ, অসংখ্য রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালবার্ট নির্মাণ, সরকারি অর্থায়নে অসংখ্য মন্দির-মসজিদ বিহার-গীর্জা নির্মাণ, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গণশৌচাগার নির্মাণ, খেলার মাঠ ও পার্কসহ দীঘিনালা উপজেলায় অসংখ্য ও অগণিত উন্নয়ন দৃশ্যমান।

মুজিববর্ষে দীঘিনালায় প্রায় সহস্র ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে একটি ঘর ও ২ শতক জমি (জনপ্রতি) প্রদান করা হয়েছে। যেসকল প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছেনি সে সকল এলাকার জনসাধারণকে বিনামূল্যে সৌরবিদ্যুত প্রদান করা হয়েছে৷ দুর্ঘম ও পাহাড়ি জনপদে সরকারি অর্থায়নে টিউবওয়েল স্থাপন করে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে আওয়ামী লীগ সরকার৷

তাছাড়া বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের প্রায় শতভাগ ভাতার আওতায় আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দুস্ত ও অসহায় মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা, হতদরিদ্রদের ভিজিডি ও ভিজিএফ সকল প্রকার সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। কৃষকদের চাষের সুবিধার্থে সেচ নালা নির্মাণ, কৃষি প্রনোদনা, বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ, জেলে ও মৎস্যজীবীদের প্রনোদনা, মৎস্য উপকরণ বিতরণ, ক্রিক বাঁধ নির্মাণ, যুব উন্নয়ন সহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের আওতায় নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।এককথায় বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নে যেভাবে পাল্টে যাচ্ছে দীঘিনালা উপজেলা তেমনি সকল নাগরিক সুবিধা পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে দীঘিনালা উপজেলাবাসী৷

দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শফিক বলেন, দীঘিনালা উপজেলার প্রতিটি গ্রাম একেকটি শহরে পরিনত হচ্ছে। এ এক যুগের ধারাবাহিক উন্নয়নে পাল্টে গেছে দীঘিনালা।

দীঘিনালা থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম পেয়ার আহমেদ সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেন, দীঘিনালার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ সর্বোপরি কাজ করে যাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, দীঘিনালাবাসীর সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নে দীঘিনালা একটি আধুনিক উপজেলায় রূপান্তরিত হচ্ছে।

দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মোহাম্মদ কাশেম বলেন, দীঘিনালার শান্তি, শৃঙ্খলা, উন্নয়ন ও নিরাপত্তাকে বজায় রাখতে হলে আওয়ামীলীগ সরকারের বিকল্প নাই। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রম ও একান্ত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়েছে। এছাড়া শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি’র আন্তরিক সহযোগিতায় দীঘিনালায় অকল্পনীয় উন্নয়ন সংগঠিত হচ্ছে।আশাকরি খুব দ্রুত দীঘিনালা একটি আধুনিক ও মডেল উপজেলায় রূপান্তরিত হবে। (ইনশাআল্লাহ)

শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেন, শুধু দীঘিনালা কিংবা খাগড়াছড়িই নয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা মমতাময়ী মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়েছে। এদেশে আর কেউ না খেয়ে থাকেনা। আজ মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের সংকট নেই। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম আজ উন্নয়নের রোল মডেল।

আরও পড়ুন