সুমনা ভান্তে (সুমন বড়ুয়া) ওরফে কালাইয়া ভান্তে। বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু উ চ হ্লা ভান্তের প্রধান সশস্ত্র ক্যাডার, বর্তমানে থাকেন বান্দরবানের রাম জাদিতে। চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার এই ক্যাডার ভান্তের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের নেতৃত্ব দিতেন। ভান্তে মারা যাওয়ার পর ফের তৎপর হয়ে উঠেছে আলোচিত এই ব্যক্তি। আর এ নিয়ে পাহাড়বার্তা’র অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।
সূত্রে জানা যায়, বৌদ্ধ ধর্ম মতে ভিক্ষুরা হলেন বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুশাসনের ধারক-বাহক। ভিক্ষুকদের বিনয় শাস্ত্র মেনে চলতে হয়। বিনয় শাস্ত্র অনুযায়ী ভিক্ষুকদের লোভ-দ্বেষ-মোহ এসব কিছুর উর্ধ্বে থাকতে হয়। তারা সংসার ত্যাগী ও জাগতিক ভোগ-বিলাসের জীবন হতে মুক্ত। জমিজমা আত্তীকরন তাদের জন্য বিনয় বিরোধী আচরণের শামিল। ভিক্ষুরা পরম সহিঞ্চুতার মূর্ত প্রতিক। তারা কারো সাথে বিরোধে জড়াবেনা। কিন্তু আলোচিত সুমনা ভান্তে রামজাদীর জন্য অবৈধ ভাবে ভূমি দখল করে সরকারী কর্মকর্তাদের উপর হামলা করে ব্যাপক ভাবে আলোচনায় আসেন। উ চ হ্লা ভান্তে মারা যাওয়ার পর ভান্তের এই শীর্ষ ক্যাডার তার অন্তত ৫০জন তরুণ ক্যাডারদের নিয়ে স্বর্নজাদী, রাম জাদীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, এর অংশ হিসাবে উ চ হ্লা ভান্তের শিষ্যরা একটি গোপন বৈঠক করে। জেলা শহরের ভান্তের অন্যতম শিষ্য থোয়া চ প্রু মাষ্টার, বাংলাদেশ ব্যাংক এর কর্মকর্তা মং ক্যশৈনু নেভী গত সোমবার সকালে (৪ মে) রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ক্যাংয়ে গোপন বৈঠক করে। এসময় বাঙ্গাল হালিয়া আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা ভদন্ত ক্ষ্যামা থারা মহাথের, ভান্তের শীর্ষ ক্যাডার সুমনা ভান্তে (সুমন বড়ুয়া) কালাইয়া ভান্তেসহ কয়েকজন ভান্তে উপস্থিত ছিলেন।
আরো জানা গেছে, এসময় তারা মিয়ানমার থেকে উচহ্লা ভান্তের প্রধান শিষ্যকে নিয়ে এসে বান্দরবানের খিয়ংওয়া কিয়ংসহ স্বর্ণজাদী, রামজাদীসহ বিভিন্ন জাদীতে তাদের কৃতিত্ব প্রতিষ্ঠা করে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। ঐতিহ্যবাহী খিয়ংওয়া কিয়ং সবাইকে, বৌদ্ধ ভিক্ষু পরিষদ ও জেলার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সিনিয়র নেতাদের না জানিয়ে অত্যান্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করে আলোচিত এই গোপন মিটিং এর আয়োজন করে ভান্তের শিষ্যরা।
রাজস্থলী উপজেলার স্থানীয় বৌদ্ধঅনুসারী উখ্যানু মার্মা বলেন, ভান্তের মৃত্যু রহস্য নিয়ে শিষ্যরা যা করছে তা কখনো কাম্য নয়, বিহার নিয়ে এখন যা করছে সেটিও কোন ভাবে মানা যায়না।
আরো জানা গেছে, ২০০৬ সালে উ চ হ্লা ভান্তে তার সশস্ত্র ক্যাডারদের নিয়ে রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়নের অধিগ্রহন ভুক্ত ও বেসরকারী মালিকানাধীন ও নিরীহ বড়ুয়া সম্প্রদায়ের ভূমি দখল করে। বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে যৌথ বাহিনী কর্তৃক অবৈধ উচ্ছেদ করতে গেলে উচ্ছেদ টিমের প্রধান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিল্লুর রহমানের উপর লাঠিসোটা ও ধারালো কিরিচ নিয়ে হামলা করে। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ আহত হয় অর্ধশত মানুষ। এসময় সুমনা ভান্তে (সুমন বড়ুয়া) কালাইয়া ভান্তেকে গ্রেফতার করা হলেও কিছুদিনের মধ্যে সে বেকসুর খালাস পায়।
উজানী পাড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উচাইম্মা ওয়ারা মহাথের তার এক লেখায় বলেন, একজন ভিক্ষু জমিজমা নিয়ে কারো সাথে বিবাদে জড়ানো এবং জমি দখল করে রাখার মতো গর্হিত ধর্ম বিরোধী কার্যে অভিযুক্ত হওয়া একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুর জন্য কাম্য নহে।
তৎসময়ে এই প্রসঙ্গে বান্দরবানে দায়িত্ব পালনরত জেলা প্রশাসক তরিকুল ইসলাম জানান, বিজিবি সেক্টর স্থাপনের জন্য তারাছা মৌজার ১০ একর খাস জমি, ১০ একর মৃত মং শৈ অং পেশকার, খ্রীষ্টান মিশনের ৩ একর অন্যান্য ব্যক্তির দেড় একরসহ ২৫ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে রামজাদীর কোন ভূমি না থাকলেও তারা বাধা দেন।
আরো জানা গেছে, এসব বাধার প্রধান নেতৃত্ব দেন সুমনা ভান্তে (সুমন বড়ুয়া) কালাইয়া ভান্তে। তাদের সহযোগী হিসাবে কাজ করে ভান্তের শিষ্য থোয়াই চ প্রু মাষ্টার, খিয়ংওয়া কিয়ং রাজ বিহারের সাধারণ সম্পাদক বাঁচা মং মার্মা, বাংলাদেশ ব্যাংক এর কর্মকর্তা মং ক্যশৈনু নেভীসহ অনেকে।
অন্যদিকে সেই সময় বান্দরবানের পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টচার্য বলেন, তিনি ধর্মীয় গুরু,তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিষয়ে আমাদের সজাগ দৃষ্টি আছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৫ এপ্রিল বান্দরবান ফাতিমা রাণী গীর্জার ৫ দশমিক ৫৭ একর ধানী জমি জোর করে দখল করে নেয় উচহ্লা ভান্তেসহ তার শিষ্যরা। এই জমিতে উৎপাদিত শস্য থেকে তিন শতাধিক অসহায় শিশু কিশোরদের অন্নের যোগাড় হতো যা বর্তমানে জোর করে উচহ্লা ভান্তে ভোগ করে যাচ্ছে, আর এতে বান্দরবান ফাতিমা রাণী গীর্জার অসহায় শিশু কিশোরদের অন্নের যোগাড় করতে কষ্ট হচ্ছে। বান্দরবান বড়ুয়া কল্যাণ সমিতির ৮৮ পরিবারের ক্রয়কৃত জায়গা ও বান্দরবানের বিভিন্ন জনগণের জমি উপঞঞা জোত মহাথের প্রকাশ উচহ্লা ভান্তে জোর করে দখল করে রেখেছে, আর এতে কষ্টে দিনযাপন করছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
চট্টগ্রাম ক্যাথলিক ধর্ম প্রদেশ এর (ভূমি কমিশন) সেক্রেটারি ফাদার জেরম ডি রোজারিও পাহাড়বার্তা’কে বলেন, বিষয়টি আদালতে মামলা চলমান আছে, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইন অনুসারেই আমরা পাবো বলে মনে করছি।