বান্দরবান পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহী রাজকর আদায়ের উৎসব, রাজ পূণ্যাহ মেলা প্রতিবছর ডিসেম্বরে আয়োজন করা হলেও গতবছরের মতো এ বছরও ১৪৪তম রাজপূণ্যাহ’র আয়োজন হবেনা বলে জানিয়েছে রাজ পরিবার সূত্র। আর এনিয়ে এস বাসু দাশ এর প্রতিবেদন।
বোমাং রাজ পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান শহরের স্থানীয় রাজার মাঠে প্রতিবছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ৩ দিনব্যাপি রাজ মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে, কিন্তু এবার করোনা ও দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে গত বছরের মতো এবারও রাজপূণ্যাহ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোমাং রাজা।
প্রতিবছর মেলাকে ঘিরে জেলার ১১টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য মন্ডিত মনোজ্ঞ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এ সময় পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মিলন মেলা পরিণত হয়, পর্যটকসহ দেশি-বিদেশী লক্ষাধিক মানুষ ভীর জমায় পর্যটন শহর বান্দরবানে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রবীণ নেতা হিসাবে বোমাং রাজার আর্শিবাদ পাওয়ার জন্য তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম পাহাড়ী এলাকা থেকে পাহাড়ীরা রাজ দরবারে এসে ভীর জমান।
বোমাং রাজ পরিবার সূত্র আরো জানায়, বৃটিশ শাসন আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি ৩ জেলাকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করে খাজনা আদায় করা হতো। ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত চাকমা রাজা পার্বত্য এলাকা শাসন করতো। ১৮৬৭ সালে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ অঞ্চলের মারমা অধ্যুষিত এলাকাকে বোমাং সার্কেল, ১৮৭০ সালে রামগড় ও মাইনি উপত্যকার এলাকাকে নিয়ে মং সার্কেল গঠিত হয়।
বান্দরবান শহরের বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম পাহাড়বার্তা’কে বলেন, রাজ পূণ্যাহ’র আয়োজন না থাকার কারনে জেলার মানুষ তাদের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন ভুলতে বসেছে, এই ঐতিহ্য সবার ধরে রাখা উচিত।
বর্তমানে রাঙ্গামাটিকে চাকমা সার্কেল, বান্দরবানকে বোমাং সার্কেল এবং খাগড়াছড়িকে মং সার্কেল হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রায় ১৭৬৪ বর্গমাইল এলাকার বান্দরবানের ৯৫টি, রাঙামাটির রাজস্থলি ও কাপ্তাই উপজেলার ১৪টি মৌজা নিয়ে বান্দরবান বোমাং সার্কেল। দুইশত বছরের ঐতিহ্য অনুসারে বছরে একবার এই মেলা আয়োজন করা হয় বোমাং সার্কেলের পক্ষ থেকে।
বান্দরবানের বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরী’র সহকারী অং ঝাই খ্যায়াং পাহাড়বার্তা’কে বলেন, করোনা পরিস্থিতি ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে রাজপূণ্যাহ মেলার আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোমাং রাজা মহোদয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে অজ্ঞাত কারনে বান্দরবানের বোমাং রাজ পরিবার জেলার ঐতিহ্যবাহী রাজ পূণ্যাহ মেলার আয়োজন না করলেও রাজ কর আদায় করে এবং ২০২০ সালে রাজপূণ্যাহ‘র আয়োজন করা হয়নি, এবারও রাজপূণ্যাহ’র আয়োজন না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে অনেকে।