এবার হবেনা বান্দরবানের ১৪৩ তম রাজ পূন্যাহ মেলা

বান্দরবান পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহী রাজকর আদায়ের উৎসব রাজ পূন্যাহ মেলা প্রতিবছর ডিসেম্বরে আয়োজন করা হলেও এই বছর করোনা পরিস্থিতির কারনে ১৪৩তম রাজপূন্যাহ’র আয়োজন হবেনা।

বোমাং রাজ পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান শহরের স্থানীয় রাজার মাঠে প্রতিবছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তিন দিনব্যাপি রাজ মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে, কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতি মেলার আয়োজনে কাল হয়ে দাড়িয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারনে জেলা প্রশাসন থেকে রাজ পূন্যাহ মেলা আয়োজনের অনুমতিও মিলবেনা, তাই রাজপূন্যাহ মেলা হবেনা।

বান্দরবানের বোমাং রাজা উ চ প্রু চৌধুরী’র সহকারী অং ঝাই খ্যায়াং বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারনে মেলার আনুষ্ঠানিক আয়োজন না থাকলেও ঘরোয়া ভাবে রাজকর আদায়ের অনুষ্ঠান করতে পারে, তবে এখনও এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।

প্রতিবছর মেলাকে ঘিরে জেলার ১১টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য মন্ডিত মনোজ্ঞ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এ সময় পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মিলন মেলা পরিণত হয়, দেশি- বিদেশী পর্যটকরা ভীর জমায় পর্যটন শহর বান্দরবানে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রবীণ নেতা হিসাবে বোমাং রাজার আর্শিবাদ পাওয়ার জন্য তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম পাহাড়ী এলাকা থেকে পাহাড়ীরা রাজ দরবারে এসে ভীর জমান।

NewsDetails_03

বোমাং রাজ পরিবার সূত্র আরো জানায়, বৃটিশ শাসন আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি তিন জেলাকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করে খাজনা আদায় করা হতো। ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত চাকমা রাজা পার্বত্য এলাকা শাসন করতো। ১৮৬৭ সালে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ অঞ্চলের মারমা অধ্যুষিত এলাকাকে বোমাং সার্কেল, ১৮৭০ সালে রামগড় ও মাইনি উপত্যকার এলাকাকে নিয়ে মং সার্কেল গঠিত হয়।
বর্তমানে রাঙ্গামাটিকে চাকমা সার্কেল, বান্দরবানকে বোমাং সার্কেল এবং খাগড়াছড়িকে মং সার্কেল হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রায় ১৭৬৪ বর্গমাইল এলাকার বান্দরবানের ৯৫টি, রাঙামাটির রাজস্থলি ও কাপ্তাই উপজেলার ১৪টি মৌজা নিয়ে বান্দরবান বোমাং সার্কেল। দুইশত বছরের ঐতির্য্য অনুসারে বছরে একবার এই মেলা আয়োজন করা হয় বোমাং সার্কেলের পক্ষ থেকে।

এই ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, জেলা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে রাজপূন্যাহ মেলা হয়ে থাকে, তবে এবার মেলা আয়োজনের বিষয়ে অবহিত করা হয়নি।
এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর ডিসেম্বরে রাজ পূন্যাহ মেলা আয়োজনের জন্য নভেম্বরের শেষ দিকে জেলা প্রশাসনের অনুমতির জন্য বোমাং সার্কেলের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও এবার মেলা আয়োজনের জন্য আবেদন করা হয়নি।

এই বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম বলেন, বোমাং সার্কেলের রাজ পূন্যাহ মেলা আয়োজনের বিষয়ে আমি অবগত নয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালেও অজ্ঞাত কারনে বান্দরবানের বোমাং রাজ পরিবার জেলার ঐতিহ্যবাহী রাজ পূন্যাহ মেলার আয়োজন করেনি।

আরও পড়ুন