এলজিইডি আলীকদম অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে থানা পরিষদ প্রকল্পের নামে দুই হাজার মিটার রাস্তা মেরামতের কাজটি বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি। বান্দরবানের কে-হোসাইন অ্যান্ড কোং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজটি করছেন সাব ঠিকাদার নাছির উদ্দিন ও আবু বক্কর।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, থানা পরিষদ প্রকল্পের রাস্তার কার্পেটিং কাজ চলাকালে এলজিইডির কর্মকর্তা উপস্থিত থাকা সত্তে¡ও সাব ঠিকাদার ও সাব ঠিকাদারের নিয়োজিত শ্রমিকরাই কাদাঁ মাটি ও ভেজা রাস্তার উপর কার্পেটিং এর কাজটি করে। তারা আরো অভিযোগ করেন, ১০/৫ মিলি,৬ মিলি,১০ মিলি পাথর ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও ১০ মিলি কিছু পাথর লোক দেখানোর জন্য জমিয়ে রেখে সিলেটি বুজুরি মেন্টেনেজের কার্পেটিং কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ও ডাস ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না এবং বিটুমিন খুবই হালকা ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়াও কার্পেটিংয়ের ১২ মিলিমিটার প্রলেপ দেওয়ার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না সে নিয়মও। কোনো ধরনের ‘ট্যাক কোট’ না মারার কারণে বৃষ্টির পানিতে উঠে যাচ্ছে উক্ত মেন্টেনেজের কার্পেটিং।
স্থানীয় বাসিন্দা মো: মিজানুল ইসলাম জানান,গত ১জুন দুপুরে ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মুবিনকে নিয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম ও শ্রমিকদের কাঁদামাটি পরিষ্কার না করে ও রাস্তা না শুকানো পর্যন্ত উক্ত স্থানে কাজ না করতে অনুরোধ করি। কিন্তু পরের দিন ২রা জুনে গিয়ে দেখি ভেজা ও কাঁদামাটির উপর দিয়ে মেন্টেনেজ কার্পেটিং এর কাজ করে গেছেন। যার ফলে অল্প বৃষ্টিতে রাস্তার কার্পেটিং গুলো উঠে যাচ্ছে। এতে করে সরকারের উন্নয়ন মুলক কাজের স্থায়ীত্বও কমে যাচ্ছে।
মোঃ মিজানুল ইসলাম আরো বলেন, নাছির উদ্দিন দলীয় প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর সহযোগীতায় তড়িঘড়ি করে কার্পেটিংয়ের কাজটি করছেন বলে জানায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব ঠিকাদার নাছির উদ্দিন বলেন, আমরা কে-হোসাইন অ্যান্ড কোং লাইন্সেস এর নামে কার্পেটিংয়ের কাজটি কিনে নিয়ে সাব ঠিকাদারিতে বাস্তবায়ন করছি। তবে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার ও কাদাঁ মাটির উপর কাজ করার কথা অস্বীকার করে তিনি আরো বলেন, উক্ত কাজের স্থানে সর্বদা এলজিইডির কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন,কোন অনিয়ম হলে কেন তারা বাধা দিচ্ছেন না।
এলজিইডির আলীকদম উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী অরুণা বিশ্বাস ভেজা ও কাদাঁ মাটি উপর কার্পেটিং কাজের কথা স্বীকার করেন। অরুণা বিশ্বাস আরো বলেন, আমরা শত ভাগ পরিষ্কার ও নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে চাইলেও আমাদের পরিসীমা বাইরে কিছু করতে পারি নি। সরকার দলীয় লোকের চাপাচাপিতে আমাদের অনেককিছু মেনে নিতে ও তাদের সাথে আপোষ করতে বাধ্য হই।
স্থানীয়া উক্ত কাজ ভাল ভাবে করার অনুরোধ করলে বা কোন বিষয়ে জানতে চাইলে ১ নং আলীকদম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাম বলার কারণ জানতে চাইলে অরুণা বিশ্বাস বলেন, ১ নং আলীকদম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন উক্ত কাজের বড় অংশীদার। আপনারা সরকারের নিয়োজিত কর্মকর্তা, আপনাদের সরকারে উন্নয়ন মূলক কাজগুলো সঠিক ভাবে ও নিয়ম মাফিক করার জন্য উক্ত উপজেলায় প্রেরণ করেছেন,আপনারা স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের নিয়োজিত কর্মকর্তা নন,আপনারা সরকারের নিয়োজিত কর্মকর্তা, তাই সবার আগে সরকারের স্বার্থ দেখা জরুরী।
কিন্তু বার বার স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম বলার কারণ জিজ্ঞাসা করলে অরুণা বিশ্বাস বলেন,আমরা উপজেলার কর্মকর্তা, আমাদের উপর আছে জেলা কর্মকর্তা,আমাদের অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করে, কিন্তু আমাদের সীমাবদ্ধতার বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারি না। কিন্তু স্থানীয় প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হাত অনেক দুর বিস্তৃত।স্থানীয় প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের হস্তক্ষেপের কারণে কোন কাজ সঠিক ভাবে তদারকি করতে পারেন না বলে উক্ত কর্মকর্তা জানান।
এদিকে উক্ত বিষয়ে ১ নং আলীকদম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন,আমি সাব ঠিকাদারের কোন অংশীদার নই,কেন বার বার উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী আমার নাম ব্যবহার করছে জানি না। বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।
জামাল উদ্দিন আরে বলেন, আমি একজন নির্বাচিত ও সরকারের প্রতিনিধি। আমার যদি উক্ত কাজে অংশীদারিত্ব থাকতো তাহলে আমি এই অনিয়ম ও প্রশ্নবিদ্ধ হয় এমন কাজ কখনোই করতে দিতাম না। আমি একজন প্রতিনিধি হিসেবে সরকার ও জনগণের নিকট দায়বদ্ধ বলে তিনি জানান।
এলজিইডির প্রকৌশলী শান্তুনু ঘোষ সাগর রাস্তা মেরামতের এক সপ্তাহের মধ্যে কার্পেটিং উঠে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন এবং কাজ চলা কালে তিনি আলীকদমের বাইরে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ছিলেন বলে জানান।