রাঙ্গামাটির কাপ্তাই এর চাঞ্চল্যকর খলিল হত্যা মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত পলাতক প্রধান আসামী শাহাদাত হোসেন ওরফে গালকাটা শাহদাত’কে দীর্ঘ ৫ বছর পর কুমিল্লা’র লাকসাম হতে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭। এ ব্যাপারে র্যাব-৭ এর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এতথ্য জানানো হয়।
রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই থানাধীন কর্নফুলী পেপার মিলস্ এলাকায় মাদক ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কথিত শাহাদাত গ্রুপ এবং নুরুল ইসলাম গ্রুপ এর মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ চলে আসছিলো। গত ২০১৪ সালে ভিকটিম খলিলসহ তার গ্রুপের প্রধান সহযোগীদের মাধ্যমে তাদের বিরোধী পক্ষের শাহাদাত গ্রুপের প্রধান শাহাদাতকে মারধর করে গুরুতর জখম করে। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে শাহাদাত গ্রুপের প্রধান শাহাদাত তার অন্যান্য সহযোগীদের মাধ্যমে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ১ম দফা এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ২য় দফায় ভিকটিম ইব্রাহীম খলিল এর লিডার নুরুল ইসলামকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরবর্তীতে নুরুল ইসলাম নিজ এলাকা ছেড়ে পংগু অবস্থায় কুমিল্লা জেলায় তার শ্বশুর বাড়ীতে অবস্থান করে চিকিৎসা গ্রহণ করতে থাকেন।
শাহাদাত গ্রুপের শাহাদাত আহত হওয়ার পর হতেই ভিকটিম ইব্রাহীম খলিল শাহাদাত গ্রুপের ভয়ে কাপ্তাই থানা এলাকা ছেড়ে রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে দিন মজুরের কাজ করতে থাকেন। গত ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ইং তারিখে ভিকটিম ইব্রাহীম খলিল রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু এলাকা হতে কাপ্তাই তার খালার বাড়ী বেড়াতে আসে। ইব্রাহিম খলিল কাপ্তাই এলাকায় আসার খবর পেয়ে শাহাদাত তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ইব্রাহিম খলিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং পরিলকল্পনা মোতাবেক ভিকটিম ইব্রাহিম খলিলের গতিবিধি অনুসরণ করতে থাকে।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল বিকাল আনুমানিক ৪ টার সময় ভিকটিম ইব্রাহিম খলিল তার খালাকে রাংগুনিয়া হতে নিয়ে আসার জন্য বাড়ি হতে বের হয়। পথিমধ্যে ইব্রাহিম খলিলকে খুন করার উদ্দেশ্যে শাহাদাত গ্রুপের লোকজন সিএনজি নিয়ে অবস্থান করে। ঐদিন সন্ধ্যা অনুমানিক ৭ টা থেকে ৭ টা ৩০ মিনিটের সময় ইব্রাহিম খলিল রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই থানাধীন কেপিএম এলাকায় কাপ্তাই – চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর পৌছামাত্র পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তার ঘাড়ে কিরিচ দিয়ে কোপ দেয়। উক্ত কোপে ইব্রাহিম খলিলের ঘাড়ের ডানপাশে ঘাড়সহ গলা কেটে যায়। সাথে সাথে তার মৃত্যু হয়।
উক্ত ঘটনায় নিহতের ভাই মোঃ ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই থানায় ০৩ জনকে নামীয় এবং অজ্ঞাতমানা আরও ২/৩ জন আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বর্ণিত চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরধারী এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে যে, বর্ণিত হত্যা মামলার এজাহারনামীয় ১নং আসামী মোঃ শাহাদাত হোসেন আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে ছদ্মনামে কুমিল্লা জেলার লাকসাম এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ১০ জুন অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ শাহাদাত হোসেন কে কুমিল্লা’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে বর্ণিত হত্যা মামলার প্রধান এজাহারনামীয় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী মর্মে স্বীকার করেন এবং সে ভিকটিম ইব্রাহিম খলিল (২৭) কে নির্মম ও নৃশংসভাবে কিরিচ দিয়ে কোপ মেরে গলা কেটে হত্যা করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আর জানায়, আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে সে ছদ্মনাম ধারণ করে নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাঠের ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশায় আত্মগোপন করে বসবাস করছিল।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।