কাপ্তাইয়ের মর্জিনার মা খ্যাত আয়েশা বেগম পেলো জয়িতা সম্মাননা
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কাপ্তাই থানার বিপরীতে কাপ্তাই সড়কের পাশে ছোট্ট একটি হোটেল। এলাকার সকলে ” মর্জিনার মা’র” হোটেল নামে চিনে এটাকে। ভেতরে চাকচিক্য না থাকলেও রান্নার বেশ জুড়ি আছে এই হোটেলের। তাই অফিসগামী ক্রেতা সহ অনেকে এই হোটেলে দুপুরের খাবার গ্রহন করে থাকে। অফিস সময়ে ভোজনরসিকদের ভীড় লেগে থাকে প্রায়শঃ।
এই “মর্জিনার মা’র নাম হলো আয়েশা বেগম। এই হোটেলের মালিকও তিনি, ক্যাশিয়ারও তিনি পাচকও তিনি। মাত্র ২ জন কর্মচারী নিয়ে হোটেলে আগত ক্রেতাদের পরিবেশন করছেন তিনি। যিনি এই বছর “অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী” হিসাবে কাপ্তাই উপজেলায় প্রশাসন এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক জয়ীতা নারীর সম্মাননা পেয়ে সকলকে অভাগ করে দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে “বেগম রোকেয়া দিবসে “তাঁর হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনতাসির জাহান। এইসময় অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
কাপ্তাই উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রিনি চাকমা শুনান, মর্জিনার মা খ্যাত আয়েশা বেগম এর দুঃখ এবং সংগ্রামের নানা দিক। যার কারনে এই বছর “অর্থনৈনিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী” হিসাবে তিনি পেয়েছেন জয়িতা নারীর সম্মাননা।

আয়েশা বেগম ১৯৭৮ সালে ১১সেপ্টেম্বর, চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লিচুবাগান বনগ্রামে দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হুমায়ুন কবির একজন দিনমজুর ছিলেন। কিশোর বয়স পার না হতেই অভাবের তাড়নায় ম-বাবা তাকে বড়ইছড়ির মোঃ ইউছুফ এর সাথে বিবাহ দেয়। স্বামী দিনমজুর, দৈনিক কামলা হিসাবে কাজ করতেন। বিবাহের পর থেকে সে কাপ্তাই উপজেলা সদর বড়ইছড়িতে বসবাস শুরু করেন। তাদের অভাবের সংসারে জন্মগ্রহণ করেন ২টি মেয়ে সন্তান। স্বামী অসুস্থ ও দিনমজুর হওয়ায় সে বিভিন্ন বাসায় কাজের বুয়া হিসেবে কাজ করতেন। আয়েশা বেগমের স্বামী কাজের চাপে অভাব অনটনে চিকিৎসার অভাবে দিনদিন অসুস্থ হতে থাকেন। ২০১১ইংসালে হঠাৎ স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন তাঁর স্বামী।
স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই মেয়ে সন্তান নিয়ে আয়েশা বেগম দিশেহারা হয়ে পড়েন। তার ঘর উপজেলার নিকটে হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন স্টাফ মেসে তিনি রান্নার কাজ করতেন। তা দিয়ে দুই মেয়েকে লেখাপড়া ও সংসার খরচ কোনভাবে চালাতেন। দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ, সংসার খরচ নিয়ে সে হিমশিম খেতেন। যেহেতু আয়েশা বেগম বিভিন্ন বাসায় ও মেসে রান্নাবান্না করতে সে অভিজ্ঞতা কজে লাগিয়ে কিছুদিন পর ধারদেনা করে উপজেলার সামনে থানার নিচে তার নিজ বসতঘর সংলগ্ন সে ভাতা রান্না করে বিক্রি করা শুরু করেন। আস্তে আস্তে ভাত রান্নার ঘর থেকে হোটেলে রুপান্তর করেন। হোটেলটি বর্তমানে কাপ্তাই উপজেলার “মর্জিনার মায়ের হোটেল” নামে সুপরিচিত। তার ২য় মেয়ে মর্জিনা আক্তার এর নামে এই হোটেল। হোটেলটি উপজেলার সদরে অবস্থিত হওয়ায় সবসময় খুব ব্যস্ত থাকতে হয় তাঁকে। হোটেলের আয় দিয়ে আয়েশা আক্তার তার দুটি মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে ভাল জায়গা বিবাহ দেন। বর্তমানে মেয়ে দুটি সুখে শান্তিতে সংসার করছেন। আয়েশা আক্তার তার কুড়ে ঘরকে বর্তমানে সেমি পাকা করেছেন। বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে তিনি সম্পূর্ণ স্বাবলম্বী ও স্বচ্ছল এক নারী।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনতাসির জাহান এই প্রসঙ্গে জানান, আয়েশা বেগম আমাদের সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য একটি উদাহরণ। শত দুঃখ কষ্টকে জয় করে যিনি এগিয়ে যাচ্ছেন অদম্য মনোবল নিয়ে।
আজ শুক্রবার আয়েশা বেগমের সাথে তাঁর দোকানে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, এই সম্মাননা আমাকে আরোও অণুপ্রেরণা যুগাবে। সেই সাথে তিনি উপজেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।