কাপ্তাই কর্ণফুলী পেপার মিলের ৫০ কোটি টাকার কাগজ বিক্রি হবে কখন?

NewsDetails_01

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত এশিয়া বিখ্যাত কর্ণফুলী পেপার মিল যা কেপিএম নামে সবাই চিনে। একসময় স্থানীয় বাজারে এই মিলের উৎপাদিত কাগজের ব্যাপক চাহিদা ছিল। এই মিলের উৎপাদিত কাগজের গুনগত মান বিশ্ব বাজারে প্রশংসিত হয়ে আসছে বছরের পর বছর। কিন্তু গত কয়েক দশকে বেসরকারি বিভিন্ন কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারছিলেন না স্বনামধন্য বিসিআইসির এই প্রতিষ্ঠানটি। ফলে হাজার হাজার শ্রমিক বদলি এবং অস্থায়ী শ্রমিক কর্মচারী ছাঁটাই করার পরও এটি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অর্থাভাবে নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছে না শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন। তাছাড়া মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে গত দেড় বছরে উৎপাদিত ৫ হাজার মেট্রিক টন সাদা কাগজ। যা কেপিএম গোডাউনে অবিক্রিত পড়ে আছে দিনের পর দিন। পড়ে থাকা এই কাগজের মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা বলে জানান কেপিএম এর মহা ব্যবস্থাপক( উৎপাদন) গোলাম সরওয়ার।

তিনি জানান,টাকার অভাবে শ্রমিক কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের ২ মাসের বেতন প্রদান বন্ধ রয়েছে। এই ৫ হাজার টন কাগজ বিক্রি করা সম্ভব হলে সকলের বেতন প্রদানসহ কারখানার অন্যান্য খরচ মিটানোও সম্ভব হতো। কাগজ বিক্রি না হওয়ায় উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্বেও বর্তমানে গড়ে ১০ মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদন সীমিত রাখা হয়েছে।

গত সোমবার কেপিএম পরিদর্শনে দেখা গেছে, কেপিএমের গুদামগুলো বর্তমানে রীম কাগজে ভরাট হয়ে আছে বিভিন্ন স্থানে। গুদামে কাগজ রাখার জায়গা না থাকায় মেশিন হাউজের বিভিন্ন স্থানে স্তুপ করে কাগজ রাখা হয়েছে।

কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক( এমডি) প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস জানান, এই কাগজগুলো বিক্রি করা সম্ভব হলে কেপিএম আর্থিক ক্ষতি হতে রক্ষা পেত। তিনি আরোও জানান, করোনার কারনে গত দেড় বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই এই মুহূর্তে বাজারে কাগজের চাহিদা কম, ফলে এর প্রভাব কেপিএম এর উপর পড়েছে।

NewsDetails_03

কেপিএম এর প্রকৌশলীরা জানান,জাতীয় পাঠ্য পুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কেপিএম উৎপাদিত কাগজের প্রধান ক্রেতা। প্রতি বছর সরকার কোটি কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে যে পাঠ্য বই উপহার হিসেবে তুলে দিচ্ছে সেই কাগজ এনসিটিবিকে সরবরাহ করে থাকে কেপিএম। কিন্ত বর্তমানে এনসিটিবি কেপিএম থেকে কাগজ নিচ্ছেনা। যার ফলে কেপিএমে কাগজের পাহাড় জমে গেছে। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড, বিএসও, বিশ্ববিদ্যালয় সমুহ অন্যান্য বছর কেপিএম থেকে কাগজ কিনে নিলেও বিগত প্রায় দেড় বছর তারাও কাগজ নিচ্ছেনা বলে জানা গেছে।

কেপিএম কারখানা সুত্র আরো জানায়, কাগজ উৎপাদনের জন্য কেপিএম নগদ মূল্যে বিদেশ থেকে পাল্প (মন্ড) আমদানি করে থাকে। এছাড়াও অন্যান্য কাঁচামালও কেপিএম নগদ মূল্যে ক্রয় করে থাকে। এনসিটিবিসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি যথাযথ নিয়মে কেপিএম থেকে স্বাভাবিক ভাবে কাগজ সরবরাহ নিতো তাহলে কেপিএমে এভাবে কাগজের পাহাড় জমে থাকতোনা এবং কেপিএম আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থও হতোনা।

কেপিএম সিবিএ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তারা দিনরাত পরিশ্রম করে কাগজ উৎপাদন করছে। উৎপাদনের স্বার্থে শ্রমিকরা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কয়েক ঘন্টা বেশি শ্রম দিচ্ছেন। এত পরিশ্রম করার পরও যদি সময় মতো বেতন পাওয়া না যায় সে ক্ষেত্রে দুঃখ কষ্টে তাদের দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। এই শ্রমিক নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকার পরও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা কেপিএম হতে কাগজ কিনছে না।

বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান শাহ্ মোঃ এমদাদুল হক গত ২২ আগস্ট কেপিএম কারখানা পরিদর্শন করেন। তিনি কেপিএম কারখানা ঘুরে উৎপাদিত কাগজের মান দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। সরকারের অন্যান্য সংস্থাগুলো যাতে কেপিএমের কাগজ নেয় সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তিনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে।।

আরও পড়ুন