কার কাজ কে করে ? থানচিতে নির্মাণ হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় নিন্মমানের কালভার্ট সেতু

NewsDetails_01

বান্দরবানের থানচি উপজেলাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে অর্থায়নে ২০১৯-২০ অর্থসালে মোট ৪টি কালভার্ট সেতু নির্মানের কার্যাদেশ এক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হলেও কাজ করছেন অন্যরা। প্রতিটি কালভার্ট সেতুতে ৩৬ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা করে মোট ১ কোটি ৪৬ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। তৎমধ্যে ১টিতে জনস্বার্থে হলেও অপ্রয়োজনিয় ৩টি কালভার্ট সেতু নির্মানাধীন রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোটা অংকের টাকা নিয়ে কাজগুলো অন্য ঠিকাদারকে বিক্রি করে দেওয়ায় মূলত নির্মাণ কাছের হাত বদল হওয়ার কারনে নির্মান কাজের নতুন ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টরা যোগসাজসে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে এই সেতুগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থসালে থানচির বলিপাড়া ইউনিয়নের বিদ্যামনি পাড়াবাসী জুমে যাওয়ার রাস্তার ঝিড়িতে ১টি কালভার্ট সেতু নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দিয়েছিলেন বান্দরবানে বাসিন্দা সুলতানের প্রতিষ্ঠানকে কিন্তু কাজটি তিনি বিক্রি করে দেওয়ার কারনে নির্মাণ কাজ করছেন উপজেলা জনসংহতি সমিতির সংগঠন যুব সমিতির সভাপতি নুমং প্রু মারমা। এর আগেই ২০১৭-১৮ সালে একই ঝিড়িতে থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা ব্যয়ে এলজিইএসপি প্রকল্পের আওতায় একটি কাঠের ব্রিজ টেন্ডারের মাধ্যমে নির্মান করা হয়েছিল কিন্তু ঠিকাদার সংস্থা সেটি ভেঙ্গে দিয়েছে ।

চাইথোয়াইহ্লা পাড়া খাদিঅং মারমা ও কোয়াইসাং প্রু মারমা বলেন, ঐ সেতুটি নির্মাণ হলে আমাদের কোন কাজেই আসবেনা, জুমে যাওয়ার জন্য আংশিক সুবিধা হবে।

থানচি সদর ইউনিয়নে আমতলী পাড়াবাসী নদীতে গোসল করার রাস্তার উপর মরা ঝিড়িতে ১টি কালভার্ট সেতু নির্মানের কার্যাদেশ দিয়েছিলেন বান্দরবানে বাসিন্দা ইভা এ্যান্টারপ্রাইজ এর মালিক মিন্টু দাশকে কিন্তু কাজটি বিক্রি করার কারনে উপজেলা বিএনপি’র এক নেতা আবদুর রহিম নির্মান কাজ করছেন ।

বিদ্যামনি পাড়া কারবারী যাদুরাম ত্রিপুরা বলেন, সেতুটি নির্মিত হলে কয়েকটি ম্রো পরিবার বাজারে যাওয়ার উপকার ছাড়া কিছু নেই । তবে ঠিকাদার সংস্থা জনসংহতি সমিতি নেতা হওয়া কথা বলতে ভয় পেয়েছেন তিনি।

তিন্দু ইউনিয়নে চাইথোয়াইহ্লা পাড়াবাসীদের জুম ঘরের যাওয়ার রাস্তার উপর ঝিড়িতে ১টি কালভার্ট সেতু নির্মানের কার্যাদেশ দিয়েছিলেন থানচি উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যান ছোট বোন চনুচিং নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। নামে লাইসেন্সর কর্নধার হিসেবে রয়েছেন জনসংহতি সমিতি সভাপতি চসাথোয়াই মারমা। নির্মাণ কাজটি পরিচালনা করছেন ভাইস চেয়ারম্যানের ছোটভাই পিসিপি নেতা হ্লামং প্রু মারমা (মংব্রাসে) ।

NewsDetails_03

এই প্রতিবেদককে পনেডং পাড়া বাসিন্দা মংশৈ প্রু মারমা ও আদোমং কারবারী জানান, কালভার্ট সেতু নির্মানের জন্য ঠিকাদার চিংক্য মারমা মংশৈ প্রু মারমা এর ঘর অর্ধেক ভেঙ্গে দিয়েছে। ক্ষতিপূরন দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়নি। সেতুটি অতীব প্রয়োজন তবে নিন্মমানের রেমাক্রী খালের বালি-পাথর দিয়ে রাতে আঁধারে রাজমিস্ত্রি ঢালাই কাজ করেই যাচ্ছে।

রেমাক্রী ইউনিয়নে পনেডং পাড়া হয়ে ডলিয়ান পাড়া যাওয়ার রাস্তায় উপর ক্যংহ ম্রং ঝিড়িতে ১টি কালভার্ট সেতু নির্মানে কার্যাদেশ দিয়েছিলেন কক্সবাজার বাসিন্দা আল নূর এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কিন্তু কাজটি বিক্রি করার কারনে কিনে নিয়ে করছেন থানচি হেডম্যান পাড়া বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রনি মারমা এর জামাতা চিংক্য মারমা।

সেতু নির্মান কাজের শ্রমিকদের মাঝি মহুবা হোসেন জানান, পিআইও সাহেবকে কোনদিন দেখেনি এখানে,ইতিমধ্যে আমরা নির্মাণ কাজের ঢালাই করে ফেলেছি ।

কালভার্ট সেতু নির্মান কাজ ঠিকাদার ও সরকারের সাথে চুক্তিনুযায়ী কার্যাদেশ অনুসারের ৬ আগেষ্ট ২০১৯ হতে ৬ মাস চুক্তিতে জানুয়ারী ২০২০ সালে সম্পন্ন করা কথা থাকলেও নির্মাণ কাজ শেষ করার সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যে ঠিকাদার সংস্থাকে অধিকাংশ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ।

থানচির বিদ্যামনি পাড়াবাসীর জুম ঘরে যাওয়ার রাস্তার উপর নির্মানাধীন কালভার্ট সেতু তৈরী করা হচ্ছে নিন্মমানের পাথর দিয়ে। ছবি-পাহাড়বার্তা

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ঐসব ঝিড়িতে কালভার্ট সেতু নির্মানের আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্ধারন করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি ভাবে টেন্ডার সিডিউল করার আগে অফিসের কাজের চাপের পরিদর্শণ করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, সেতু নির্মানের যে স্থানের নির্ধারন করা হয়েছে সেখানে নিন্মমানে নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ছাড়া গুনগতমান সম্পন্ন নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার সম্ভব নয়।

সম্প্রতিক কালে সরেজমিনে গেলে, পানেডং পাড়া ক্যংহ্ ঝিড়িতে কালভার্ট সেতুটি জনসাধারনে স্বার্থে হলেও অপর তিনটি সেতুতে চলাচলের উপকারভোগী নেই বললে চলে শুধুমাত্র পাড়াবাসীদের জুমঘর ও নদীতে গোসল করার যাতায়ত রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ঠিকাদার নুমং প্রু মারমা বলেন,সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে কাজটি সবেমাত্র পেয়েছি, প্রচুর পরিমান টাকা দিতে হয়েছে, থানচির মত জায়গা শতভাগ করার সম্ভব নয়। একইভাবে এ পর্যন্ত ছাংদাক পাড়া, ছোট মদকের ত্রিপুরা পাড়া ও খুমী পাড়া মাঝ খানে সেতু নির্মাণ করেছি।

এই ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঠিকাদার চিংক্য মারমা বলেন, নিয়ম অনিয়ম আমি বুঝিনা,সরকারি কাজে কেউ শতভাগ করতে পারে না, আমাদের উপরে হাত রয়েছে ।

এই ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পরিষদে সমন্বয় সভা অনুমোদনক্রমে কাজটি করা হয়েছে ।

আরও পড়ুন