গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বা ‘শাসন ও উন্নয়ন অধ্যয়ন’ উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বহুমুখী জ্ঞানের ক্ষেত্র। লোক প্রশাসন ও উন্নয়ন অধ্যয়নের মুল বিষয়গুলোকে সন্নিবেশ করেই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে রয়েছে বিষয়টির পরিধি এবং ব্যবহারিক কর্মক্ষেত্র। বিশেষভাবে সামাজিক বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ সব তত্ত্ব ও প্রায়োগিক বিষয়বস্তুর অর্থবহ একত্রীকরণের মাধ্যমে এ বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয়। এটি একাধারে সুশাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে ব্যক্তি, ব্যক্তিগত উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন এমনকি বৈশ্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণের বিষয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক এবং তাত্ত্বিক আলোচনা করে এবং আন্তঃবিষয়ক জ্ঞানের শাখা যা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে।
প্রাথমিকভাবে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক বিভাগ পড়ে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য হলেও বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক—তিনটি বিভাগের শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে পারে।
প্রারম্ভিক যাত্রা
গভর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিষয়টি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেকটা নতুন হলেও বিশ্বে অনেক আগে থেকে এটি বিদ্যমান ছিল। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেশনাল মাস্টার্স বা দুই বছর মেয়াদী কোর্স চালু থাকলেও বাংলাদেশের প্রান্তিক অঞ্চল বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়েই ২০১৯ সালে ৪ বছর মেয়াদী অনার্স কোর্স চালু করা হয়।
কী কী পড়ানো হয়
এ বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাশাপাশি ম্যানেজমেন্ট, কম্পিউটার স্কিলস ডেভেলপমেন্ট , প্রেজেন্টেশন স্কিলস, প্ল্যানিং এন্ড প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, এনজিও এন্ড পভার্টি এলেভিয়েশন, পারফরম্যান্স ম্যানেজমেন্ট, বেসিক স্ট্যাটিসটিকস,অর্গানাইজেশনাল বিহেভিয়ার,পাবলিক পলিসি, ম্যানেজারিয়েলজম এন্ড পাবলিক সেক্টর গভর্ন্যান্স, এন্ট্রেপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট, মাইগ্রেশন ডায়াসপোরা এন্ড রিফিউজি স্টাডিজ, ই গভর্নেন্স, এরিয়া স্টাডিজ, এনথ্রোপলজি, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস, ট্রেড এন্ড পলিটিক্যাল ইকোনমি, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, বাংলাদেশের প্রশাসন,স্থানীয় সরকার ও গ্রামীণ উন্নয়ন, সামাজিক গবেষণা পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হয় যার মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে শাসন ও উন্নয়ন বিষয়ে পরিপূর্ণ শিক্ষার সুযোগ তৈরি হয়। তাছাড়া এ বিভাগে রয়েছে বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের সুযোগ যা তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিকভাবে প্রতিযোগিতামুলক বিশ্বে শিক্ষার্থীদের বাকিদের চেয়ে অগ্রসর হওয়ার সক্ষমতা ও সুযোগ সৃষ্টি করে।
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা
এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থার সাথে সহযোগিতামূলক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করে থাকে। উপরন্তু এনজিওকর্মী, উন্নয়নকর্মী কিংবা উন্নয়ন গবেষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে এ বিষয়ে পড়াশোনার বিকল্প নেই। এছাড়া এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা সরকারি ও বেসরকারি দুই খাতেই তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে কাজে লাগাতে পারে অনায়াসে। এ বিষয়ের স্নাতকেরা পরে অর্থনীতি, রাজনীতি, সামাজিক উন্নয়ন, মানব উন্নয়ন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, পাবলিক পলিসি, জেন্ডার, প্রজেক্ট ব্যবস্থাপনা, দারিদ্রতা ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে পারে খুব সহজেই। সামাজিক বিজ্ঞানের অন্য সব বিষয়ের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি নানান বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়তে যাওয়ার সুযোগ শাসন ও উন্নয়ন অধ্যয়ন বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বেশি।
চাকরির ক্ষেত্র
বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি সংস্থা, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, মানবাধিকার সংস্থা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন, ব্যাংক, বিমাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তবে
এনজিও ও অলাভজনক খাত সম্পর্কে জ্ঞান থাকায় বিশেষ করে দেশি বিদেশি এনজিওতে, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও অন্যান্য উন্নয়নমুখী প্রতিষ্ঠানে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
শাসন ও উন্নয়ন অধ্যয়ন মুলত একটা ডিসিপ্লিন হওয়ায় এখানে অনেকগুলো সাবজেক্ট পড়ানো হয় যার কারণে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন চাকরির জন্য নিজেদের যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারে। এর পাশাপাশি এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা সরকারের মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। এছাড়া শাসন প্রক্রিয়া, উন্নয়ন ও সামাজিক গবেষণা বিষয়ে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক জ্ঞান লাভের কারণে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানেও কাজের সুযোগ লাভ করে থাকে।
সর্বোপরি, বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এ বিষয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার বিস্তর সুযোগের পাশাপাশি চাকরির ক্ষেত্রও প্রশস্ত হয়, যার কারণে এই বিষয়ের গ্লোবাল ডিমান্ড অনেক বেশি। তাই সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যাংকিং সেক্টর, প্রাইভেট সেক্টর এবং এনজিওতেও এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা সফলতার স্বাক্ষর রাখেন।
মুহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান
প্রভাষক
গভর্ন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ
বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়
E-Mail- [email protected]