কে হচ্ছেন পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ?

পাহাড়ে জোর আলোচনা

জাতীয় সাংসদ নির্বাচন শেষ হতে না হতেই জোর আলোচনায় সরগরম পাহাড়ের রাজনীতি। কে হচ্ছেন পাহাড়ের অভিবাবক ? কে পাচ্ছেন পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ? বর্তমান মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং পূর্নবহাল থাকছেন। নাকি দীপংকর তালুকদার বা কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা পার্বত্য মন্ত্রী হচ্ছে? এনিয়ে পাহাড়ের রাজনীতিতে তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে জোর আলোচনা। আর এ নিয়ে এস বাসু দাশ- এর বিশেষ প্রতিবেদন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করে, চুক্তির ধারা অনুযায়ী যে সরকার ক্ষমতায় থাকুক না কেন উপজাতীদের মধ্যে থেকে একজনকে মন্ত্রী করার বিধান রয়েছে। চুক্তির পর ১৯৯৮ সালে খাগড়াছড়ির সাংসদ কল্পরঞ্জন চাকমাকে পুর্নমন্ত্রী, ২০০১ সালে বিএনপি সরকার রাঙামাটির মনিস্বপন দেওয়ানকে উপমন্ত্রী এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে পর রাঙামাটির আওয়ামীলীগের দীপংকর তালুকদারকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে সর্বদলীয় সরকারেও দীপংকর তালুকদারকে প্রতিমন্ত্রী রাখা হয়। এরপর বান্দরবানের বীর বাহাদুরকে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান ৩০০ নং আসনে বীর বাহাদুর উশৈসিং ১৯৯১ সালে, ১৯৯৬ সালে, ২০০১ সালে, ২০০৮ সালে, ২০১৪ সালে , ২০১৮ সালে, সর্বশেষ নির্বাচনে ১ লক্ষ ৭২ হাজার, ৬৭১ ভোট পেয়ে ৭ম বারের মতো জয়ী হয়ে আলোচনায় আসেন। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তি চুক্তির পূর্বে এ সংক্রান্ত সংলাপ কমিটির সদস্য এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, ১৯৯৮ সালে উপমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রথমবার এবং ২০০৮ সালে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় দ্বিতীয়বার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া নবম জাতীয় সংসদের সংসদ কমিটি এবং পার্বত্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। প্যানেল স্পীকার ছিলেন, যার ফলে ২০১৩ সালের ২২ জুলাই তিনি খন্ডকালীন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাই পাহাড়ের স্থানীয়দের আশা, ক্লিন ইমেজের কারনে ফের মন্ত্রী হবেন পাহাড়ের বীর।

এই বিষয়ে বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অজিত দাশ পাহাড়বার্তা’কে বলেন, কাজ ও দক্ষতার কারনে বীর বাহাদুরকে ফের পার্বত্যমন্ত্রী, না হলে অন্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে, এমনটা প্রত্যাশা করি আমরা।

তিন পার্বত্য জেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্ভরযোগ্য সূত্রের কথা উল্ল্যেখ করে কেউ বীর বাহাদুর’কে, আবার কেউ দীপংকর তালুকদার, অন্যদিকে খাগড়াছড়ির কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা পার্বত্য মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করলেও নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য নেই, কে পাবেন পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সরকারের মন্ত্রী পরিষদ গঠন করা হবে, মূলত বৃহস্পতিবার সকালেই তিন এমপির একজন ফোনে বার্তা পাবেন পার্বত্য মন্ত্রী হিসাবে শপথের প্রস্তুতির জন্য।

NewsDetails_03

রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি ২৯৯ নং আসনে দীপংকর তালুকদার ১৯৯১ সাল, ১৯৯৬ সাল, ২০০৮ সাল, ২০১৮ সালে জয় লাভ করেন এবং ২০০১ ও ২০১৪ সালে পরাজিত হলেও ফের ২০১৮ ও সর্বশেষ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ২ লক্ষ ৭১ হাজার ৩৭৩ ভোট পেয়ে ৬ষ্ট বারের মতো জয় লাভ করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স এর চেয়ারম্যান, ১৯৯১ সালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ শিক্ষা কমিটি, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় সংসদ হাউস কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই রাঙামাটির বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের প্রত্যাশা এবার শেখ হাসিনা পার্বত্য মন্ত্রী হিসাবে দীপংকর তালুকদারকেই বেছে নিবেন।

এই বিষয়ে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর পাহাড়বার্তা’কে বলেন, আমরা এবার অবশ্যই আশা করছি, রাঙামাটির সাংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারকে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হবে।

অন্যদিকে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি ২৯৮ নং আসনে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২ লাখ ২০ হাজার ৮১৬ ভোট পেয়ে তিনি ৩য় বারের মতো নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তিনি শরণার্থী পুর্নবাসন টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করেন।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী পাহাড়বার্তা’কে বলেন, তিন পার্বত্য জেলার তিন সাংসদ সদস্যই মন্ত্রীত্ব পাওয়ার যোগ্য, এবার জননেত্রী শেখ হাসিনা কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে পার্বত্যমন্ত্রী করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।

স্থানীয়রা মনে করছে, পাহাড়ের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী, দক্ষ ও তুখোড় রাজনীতিবীদ বীর বাহাদুর উশৈসিং পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে পূর্নবহাল থাকছেন? নাকি পাহাড়ের দাদা নামে পরিচিত দীপংকর তালুকদার, নাকি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা হচ্ছেন পার্বত্যমন্ত্রী এই প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।

আরও পড়ুন