খাগড়াছড়িতে অগোছালো ছাত্রলীগ

২০২০ সালের ডিসেম্বরে তিন মাসের জন্য গঠন করা হয়েছিল জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। এরপর আড়াই বছর পার হলেও হয়নি সম্মেলন। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কেউ কেউ বিয়ে করে ব্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে। অনেকে আবার হয়েছেন নিষ্ক্রিয়।নেতৃত্ব নিয়ে অচলাবস্থায় নতুন ছাত্রদেরও আগ্রহ নেই রাজনীতিতে। আবার বেশ কয়েকটি উপজেলায় তিন বছর ধরে ঝুলে রয়েছে আংশিক কমিটি। অনেকে জড়িয়েছেন গ্রুপিং’এ। এমতাবস্থায় অগোছালো ও হযবরল খাগড়াছড়ি জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা ছাত্রলীগের রাজনীতি।

জানা যায়, দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছর পর ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয় তিন মাসের জন্য। ইতোমধ্যে তা তিন মাস পেরিয়ে আড়াই বছর অতিক্রম করতে চললো। তবে সংগঠনকে গতিশীল করার যে উদ্দেশ্য নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিলো, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সে উদ্দেশ্যও এতোটা আলোর মুখ দেখেনি। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা মাটিরাঙ্গা, দীঘিনালা, পানছড়ি ও রামগড় কিংবা অধিকাংশ কলেজ কমিটি গঠন তো দূরের কথা খোদ সদর উপজেলা কমিটিও গঠন করতে পারেনি এই কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

২০২০ সালে তসলিম উদ্দিন রুবেলকে সভাপতি ও আবু তালেবকে সাধারণ সম্পাদক করে তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি টিকো চাকমা ও জহির উদ্দিন ফিরোজ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মাটিরাঙা উপজেলার ঊনিশ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। সেসময় সম্মেলন ছাড়া প্রেস কমিটিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ মেনে না নিলেও সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সুপারিশ সহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি জেলায় জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানায় মাটিরাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তসলিম উদ্দিন রুবেল। ইতোমধ্যে এক বছর মেয়াদী ওই কমিটিরও গঠনতান্ত্রিক মেয়াদ পেরিয়েছে।

তসলিম উদ্দিন রুবেল বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সরাসরি উপজেলা ছাত্রলীগের বিষয়ে কথা বলতে পারেনা৷ তারপরও উনারা আমাদের অবিভাবক সংগঠন হিসেবে যতটুকু করেছে তা পরবর্তীতে সংশোধন (সিদ্ধান্ত) করছে। তাছাড়া নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে কমিটি এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি। আমরা গত ছয় মাস আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাথে সমন্বয় করে জেলা ছাত্রলীগ বরাবর পূর্নাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছি।

একই বছরের ফেব্রুয়ারীতে জাহাঙ্গীর আলমকে সভাপতি ও নাজমুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট পানছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিলো। নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার। তবে তিন বছরেও সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। মেয়াদও পেরিয়েছে ওই কমিটির। একইসাথে পানছড়ি ডিগ্রী কলেজ কমিটিও আংশিক অনুমোদন দেয়া হয়েছিলো। তিন বছরের মাথায় এসে এ কলেজ কমিটি অনেকটা নিস্ক্রিয় বলছেন পানছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান।

নাজমুল হাসান আরও বলেন, আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীণ। খুব দ্রুত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাথে সমন্বয় করে জেলা ছাত্রলীগ বরাবর পূর্নাঙ্গ কমিটি প্রেরণ করবো। উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের এমন অবস্থার জন্য নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও গ্রুপিংকে দায়ী করেন তিনি।

২০২০ সালে মেহেদী আলমকে সভাপতি ও ওমর ফারুককে সাধারণ সম্পাদক করে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তেরো সদস্য বিশিষ্ট দীঘিনালা উপজেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি টিকো চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন ফিরোজ। ঐ কমিটিতে পদ না পেয়ে সড়ক অবরোধ ও পর্যটকবাহী গাড়ি ভাংচুর করে ছাত্রলীগের একাংশের নেতা অপু চৌধুরী, বাবু চক্রবর্তী ও আমানুল ইসলাম শান্ত ও তাদের সমর্থকরা। পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। সেসময় প্রেস কমিটির প্রতি অনাস্থা দেখিয়ে কয়েকটি উপজেলা থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি টিকো চাকমা ও জহির উদ্দিন ফিরোজকে। সেসময় বিরাজমান পরিস্থিতি এড়াতে উপজেলা আওয়ামীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলায় ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম স্থগিত করে এক প্রেস বিবৃতি দেয়। যা আজও প্রত্যাহার করা হয়নি। এদিকে মেয়াদ পেরোলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি এই শাখার।

NewsDetails_03

এছাড়া দীঘিনালা কলেজ ছাত্রলীগের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি করা হয়েছিলো একইসাথে। তবে উপজেলা কমিটির মতো এটিরও একই দশা।

দীঘিনালা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী আলম এমন পরিস্থিতির জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, আমার ভাই মাহাবুব আলম এরআগে সফলতার সাথে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করে গেছেন। পরবর্তীতে আমাকে এ শাখার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার পর একটি মহল আমাকে মেনে নিতে পারেনি। আমি ও আমার পরিবারকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এসব তাদের পরিকল্পনার অংশ। বর্তমানে তাদের নানা বাধা বিপত্তির কারণে ইউনিয়ন কমিটিগুলোও সাজাতে পারছিনা।

তিনি আরও বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি আমি জেলা ছাত্রলীগের কাছে জমা দিয়েছি৷ তারা আমাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশ সহ কমিটি জমা দিতে বলে। এটাতো সাংগঠনিক নিয়মের বাইরে। সাংগঠনিক গঠনতন্ত্রে ছাত্রলীগের বিষয়ে এভাবে আওয়ামী লীগের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।

নিজেদের ব্যর্থতা ও গ্রুপিংয়ের কথা অস্বীকার করে খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তেপান্তর চাকমা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি উপজেলা ও কলেজ কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন করেছি। পর্যায়ক্রমে সকল উপজেলা ও কলেজ কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিয়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক উবিক মোহন ত্রিপুরা জানান, জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার গ্রুপিংয়ের কারণেই ছাত্রলীগের এই অবস্থা। তারপরও আমরা স্ব স্ব উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে পরামর্শ করে ইতোমধ্যে কয়েকটি উপজেলা ও কলেজ কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন করেছি। পর্যায়ক্রমে মেয়াদউর্ত্তীন্ন সকল শাখা কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি উপজেলা ও কলেজ কমিটিগুলোর সম্মেলন সম্পন্ন হলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পরামর্শক্রমে জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন দিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে আহ্বান জানাবো।

অগোছালো ছাত্রলীগের কমিটি ও গ্রুপিং রাজনীতি আগামী নির্বাচনে কোন প্রভাব পরবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই তার হয়েই কাজ করবো। এক্ষেত্রে গ্রুপিংয়ের কোন প্রভাব নির্বাচনে পরার সুযোগ নেই।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে সম্মেলন দিতে বলে দিয়েছি,আশাকরি তারা খুব দ্রুত খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করবে।

আরও পড়ুন