একটি জীর্ণ ঘরে একই পরিবারের তিন প্রতিবন্ধী সদস্যের মানবেতর জীবনযাপন যেন আধুনিক যুগের ক্রীতদাসের চিত্র। কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে প্রতিবন্ধী এই পরিবারটি চালিয়ে যাচ্ছে তাদের জীবনসংগ্রাম। হৃদয়বিদারক এই ঘটনা খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বোয়ালখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অশ্বিনী মহাজন পাড়ায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের এক পরিবারের।
জানা যায়, উপজেলার বোয়ালখালী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অশ্বিনী মহাজন পাড়ার মৃত সর্প রাম ত্রিপুরার ছেলে চেন মোহন ত্রিপুরা (৬১) প্রায় ১৫ বছর আগে এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়। সুচিকিৎসার অভাবে তার এক পা প্যারালাইসট হয়ে যায়। একই রোগে তার ছোট ছেলে কৃষ্ণ মোহন ত্রিপুরারও (২২) সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় হাত পা প্যারালাইসট হয়ে যায়৷ এছাড়া তার বড় ছেলে জীবন ত্রিপুরা (৩৫) ঢাকার একটি কারখানায় কাজে করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় এক হাত হারান।
সরেজমিনে অশ্বিনী মহাজন পাড়ায় গিয়ে দেখা মিলে চেন মোহন ত্রিপুরার। তিনি ঠিকমতো হাঁটতেও পারেননা। তার ছোটছেলে কৃষ্ণ মোহন ত্রিপুরা হাঁটাতো দূরের কথা ঠিকমতো কথাও বলতে পারেননা। এসময় তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারি সুযোগ-সুবিধা হিসেবে শুধু ওই পরিবারের কৃষ্ণ মোহন ত্রিপুরাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হয়। সেই ৭৫০ টাকা দিয়ে কোনোমতে চলছে তাদের দুঃখের জীবন। আর চেন মোহন ত্রিপুরারকেও প্রতিবন্ধী কার্ড দেওয়া হয়েছে তবে তিনি এখনো ভাতা পাওয়া শুরু করেননি।
চেন মোহন ত্রিপুরা বলেন, আমার বড় ছেলের এক হাত নেই। প্রতিবন্ধী হয়েও সে ঢাকায় গিয়ে কাজ করে সামান্য কিছু টাকা তার স্ত্রী সন্তানের জন্য পাঠায়। সেখান থেকে তার স্ত্রী কিছু টাকা দিলে তা দিয়ে কোনরকম খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাই।
তিনি আরও বলেন, সংসারের খরচ বহন করতে পারিনা বলে একই ঘরে থেকেও গত দুইবছর যাবৎ আমার স্ত্রী আমার সাথে কথা বলেনা। এইবলে তিনি অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
চেন মোহন ত্রিপুরার মেয়ে কবি বাসনা ত্রিপুরা বলেন, আমার বাবা ও দুইভাই প্রতিবন্ধী। অভাবের তাড়নায় আমার মা বাবার সাথে কথা বলেনা। আমার নিজেরও আর্থিক অবস্থা ভালোনা। তাই ইচ্ছা থাকলেও বাবা,মা ও ভাইদের সহযোগিতা করতে পারিনা৷
স্থানীয় বাসিন্দা আয়শ্রী ত্রিপুরা বলেন, আমাদের গ্রামের সবচেয়ে অসচ্ছল পরিবার এটি। আমরা সবসময় সাহায্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। তাদের ঘরটিও জীর্ণ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন চাইলে তাদেরকে সরকারি অর্থায়নে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের সহযোগিতা করতে পারেন।
বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা (কালাধন) বলেন, একই পরিবারে তিনজন প্রতিবন্ধীকে শতভাগ ভাতার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। আর ঘরের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলবো।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম বলেন, একই পরিবারে তিনজন প্রতিবন্ধী বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। উপজেলা প্রশাসন খোঁজ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবে।