গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে অদ্যবদি জেলা বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের দায়ের করা বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলায় খাগড়াছড়ি জেলার প্রায় দুই ডজন সাংবাদিককে আসামি করার অভিযোগ উঠেছে। এসব মামলায় দু’জন সাংবাদিক আটক হলেও বাকি সাংবাদিকরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
আত্মগোপনে থাকা সাংবাদিকদের মধ্যে একজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তঃ উপেক্ষা করে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভুঁইয়া ফ্যাসিস্টদের দোসরদের মতো বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় সাংবাদিকদের আসামি করে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় পেরেক ঠুকে দিচ্ছেন। তিনি তার দলীয় নেতা-কর্মীদের জেলার বিভিন্ন উপজেলা প্রেসক্লাবগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি নিরপেক্ষ ও পেশাদার সাংবাদিকদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আসামি করছেন।
জানা যায়, সম্প্রতি জেলা সদরে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে থেকে বাসায় ফেরার পথে পুলিশের হাতে আটক হন খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি দৈনিক সমকাল ও দীপ্ত টিভির খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি প্রদীপ চৌধুরী। তাকে জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলার ৫ মামলায় আটক দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। এরমধ্যে ৪ মামলাই ৫ আগস্ট পরবর্তী বিএনপি নেতাকর্মীদের দায়ের করা।
এই বিষয়ে সাংবাদিক প্রদীপ চৌধুরীর সহধর্মীনি প্রতিভা ত্রিপুরা জানান, বিভিন্ন হুমকির কারনে কোন আইনজীবি আদালতে দাঁড়াতে না পারার কারনে জামিনও নিতে পারছিনা।
এছাড়া জেলার পানছড়ি উপজেলায় একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে আটক হন জেলা মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকা ক্যানভাসের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি মিঠুন সাহা। পরবর্তীতে তাকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তার নামেও বিএনপি নেতাদের দায়ের করা দু’টি মামলা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্ট পরবর্তী এ পর্যন্ত জেলা সদর ও ৯ উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দরা অন্তত অর্ধশত মামলা দায়ের করেছেন। এসব মামলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাংবাদিক, সরকারি চাকরিজীবী, মানবাধিকার কর্মী, প্রবাসী, সেচ্ছাসেবক ও নিরপরাধ সাধারণ মানুষকেও আসামি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাংবাদিকদের মধ্যে সময় টেলিভিশন ও জনকণ্ঠের জীতেন বড়ুয়া, এটিএন বাংলা ও কালের কন্ঠের আবু দাউদ, দেশ টিভির অপু দত্ত, সমকাল ও দীপ্ত টিভির প্রদীপ চৌধুরী, ভোরের আওয়াজের আজিমুল হক, দি নিউ ন্যাশনের নুরুল আজম, যমুনা টিভির শাহরিয়ার ইউনুস, দৈনিক বাংলা ও নিউজ বাংলার আবদুল জলিল, সমকাল ও পূর্বকোণের জাহাঙ্গীর আলম রাজু, খবরপত্রের এম ইদ্রিস আলী, দৈনিক তৃতীয় মাত্রার মিজানুর রহমান সবুজ, দেশ রুপান্তরের নুর হোসেন, দৈনিক অরণ্য বার্তার জয়নাথ দেব, ঢাকা ক্যানভাসের মিঠুন সাহা, আমার সংবাদের চান মিয়া, দি বাংলাদেশ টুডের দিদারুল আলম সহ জেলা উপজেলার প্রায় দুই ডজন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সাবেক এক নেতা জানান, পরপর মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভুঁইয়া স্বাধীন সাংবাদিকতার কন্ঠরোধ করার মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিয়েছে। এসব মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা থেকে দ্রুত সাংবাদিকদের বাদ দেওয়ার জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান তিনি।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক এসব মিথ্যা মামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান সহ সারাদেশের বিভিন্ন পেশাদার সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরাও। অভিযোগের বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভুঁইয়ার সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি ৷