করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ প্রতিরোধে খাগড়াছড়ি জেলায় জরুরী সেবা প্রতিষ্ঠানের পরিবহন ও ব্যক্তি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। মানবিক দিক বিবেচনায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার শর্তে এতোদিন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জিম্মায় চট্টগ্রাম, ঢাকা, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন শিল্পনগরীতে কর্মরত শ্রমিকদের জেলায় প্রবেশে প্রশাসন অনুমতি দিলেও এসব শর্ত না মানায় গতকাল বুধবার থেকে জেলায় প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে স্থানীয় জেলা প্রশাসন।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরী সভা থেকে কোন শর্তে খাগড়াছড়ি জেলায় কাউকে প্রবেশ করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তারপরও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলার প্রবেশ পথ মানিকছড়ি উপজেলার নয়াবাজার ও রামগড় উপজেলার সোনাইপুলে জড়ো হতে থাকা শত শত মানুষ। তাদের মধ্যে বেশীরভাগই পোষাক শ্রমিক। প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তাদের ফিরে যেতে বলা হলে একপর্যায়ে মানিকছড়ির নয়াবাজার এলাকায় উত্তোজনা হয়। উত্তেজিত জনগণকে শান্ত করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে দুইজন আহত হয়েছে।
আহতরা হলো, খাগড়াছড়ির মহালছড়ির মুবাছড়ি ইউনিয়নের সুমিতা দেওয়ান এবং আরেকজনের নাম জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী তন্টু চাকমা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে কারখানা বন্ধ দেয়ায় বেতন ভাতা না পেয়ে চট্টগ্রাম হয়ে বাধ্য হয়ে গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ির মহালছড়ি যাওয়ার জন্য তারা সকালে মানিকছড়ি আসে। এ সময় তারা পুলিশকে অনুরোধ করার পরও তাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। একপর্যায়ে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেয়। এ সময় তারা দুইজনকে আহত অবস্থায় পায়। চট্টগ্রামে শিল্প কারখানায় কাজ করতো তারা, দুইজনেরই মাথায় আঘাত রয়েছে। তাদের চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বিবিরহাট বাজারে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়।
তবে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ জানান, পুলিশ কাউকে লাঠিচার্জ করেনি। সকাল থেকে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নয়াবাজার চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা কেউকে ঢুকতে দেয়নি। এ সময় কিছু লোকজন পুলিশের ওপর উত্তেজিত হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে উস্কানীমূলক মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গি করলেও মানবিক কারণে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে ফিরে যেতে অনুরোধ করে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, যারা খাগড়াছড়িতে প্রবেশ করতে চাচ্ছে তারা কেউ আমাদের শত্রু নয়। পরিস্থিতির কারণে প্রবেশ ও বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। এ কারণে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যদি বাহির থেকে আগতদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারতো তাহলে কোন সমস্যা ছিলনা। কিন্তু কেউ হোম কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি মানছে না। তাই জেলাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত।
প্রসঙ্গত, সারাদেশে সাধারণ ছুটি চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে খাগড়াছড়িতে আসা ২০৯ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাদের বেশীর ভাগই বিভিন্ন পোষাকশিল্প কারখানার শ্রমিক। এখন পর্যন্ত খাগড়াছড়ি জেলা থেকে ২৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যাদের ২৩ জনের রিপোর্টে করোনা শনাক্ত হয়নি। বাকী ৩ জনের রিপোর্ট এখনও স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে আসেনি।