খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎতের খুঁটি ও সংযোগ বাণিজ্য করে সাধারণ জনগণ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি মহল। রাজনৈতিক ও সরকারি দফতরের চাকরীজীবী একটি সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় কাজ গুলো হচ্ছে পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকায়। সরকার নির্বাচনী ইশতেহার পূরণে খাগড়াছড়ির প্রত্যন্তাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেয়ার কাজ হাতে নিয়েছে। সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকারি বিভিন্ন দফতরের নাম ভাঙ্গিয়ে সিন্ডিকেটটি সাধারণ গ্রামবাসী থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
২ মার্চ খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এমন একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের মধ্যপাড়া গ্রামের ২০-২৫ পরিবারের কাছ থেকে বিদ্যুৎতের খুঁটি দেয়ার নাম করে ১০ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে মাটিরাঙ্গা উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি মো. আবুল কালাম ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের কর্মচারী আবু তাহের। শুধুমাত্র মাটিরাঙ্গার মধ্যপাড়া নয়, খাগড়াছড়ি সদর, রামগড় ও মানিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের কেউ কেউ বিদ্যুৎতের খুঁটি ও সংযোগ এনে দেয়ার নাম করে সাধারণ গ্রামবাসীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অর্থ।
মাটিরাঙ্গার মধ্যপাড়ার দেলোয়ার হোসেন জানান, জেলা পরিষদের কর্মচারী আবু তাহের ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আবুল কালাম গত ৪ বছর আগে বিদ্যুৎ সংযোগ দিবে বলে খরচের টাকা খুঁজে। গ্রামের ২০-২২ পরিবার যার যার সাধ্যমতে টাকা তুলে তাদের হাতে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেয়। ৪ বছর অতিবাহিত হলেও তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। টাকা ফেরত চাইলে এখন নানা রকম হুমকি দিচ্ছে।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মো. মোস্তফা জানান, সরকার যেখানে বিনামূল্যে বিদ্যুৎতের খুঁটি দিচ্ছে সেখানে লাখ লাখ টাকা কেন দিতে হবে জনগণকে। জেলা পরিষদের কর্মচারী আবু তাহেরসহ কয়েকজন মিলে মধ্যপাড়ার বেশকিছু পরিবারের কাছ থেকে বিদ্যুৎতের খুঁটি ও সংযোগ দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকবার বিচার সালিশও হয়েছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি মো. আবুল কালাম বিদ্যুৎ খুঁটি ও সংযোগ এনে দিতে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আবু তাহের বলেছে, তিনি এর আগেও অনেক জায়গা বিদ্যুৎ লাইনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এ কথা মধ্যপাড়া এলাকার মানুষকে বলার পরে তার (আবুল কালাম) মধ্যস্থতায় তাহের টাকা নিয়ে যায়। এরপর খুঁটি না আসায় এলাকাবাসী অনেকবার আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। আবু তাহেরকে টাকা ফেরত নয়ত বিদ্যুৎ খুঁটি এনে দিতে চাপ দিলে কাজ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে বছরের পর বছর। তিনি এর বেশী কিছু জানেন না বলে জানান।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা পরিষদের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আবু তাহেরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাক্ষাতে কথা বলার অফার দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা মিললে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।