খাগড়াছড়ির ফেনী নদী থেকে চুক্তি মেনে পানি উত্তোলনের দাবি

NewsDetails_01

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার গহীন বনাঞ্চল থেকে উৎপত্তি হওয়া ফেনী নদী ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমা রেখা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতি নয়াদিল্লি সফরে গত ৫ অক্টোবর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম শহরের বাসিন্দাদের জন্য পানীয় জলের অভাব মেটাতে সরকারের চাহিদার প্রেক্ষিতে এই নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনে সমঝোতা স্মারক সই হয়। তবে ভারত ২০১০ সাল থেকে কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে ফেনী নদীর ৩৪ স্থানে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প মেশিন বসিয়ে পানি উত্তোলন করে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে যৌথ নদী কমিশন সহ দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক বৈঠকে বাংলাদেশ আপত্তি জানানোর পরও ভারত তা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ নদী হওয়া সত্তে¡ও ফেনী নদীর উপর ভারতের দীর্ঘদিন ধরে এমন হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। মানবিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ পানি উত্তোলনে সম্মতি হলেও চুক্তি কার্যকরের আগে নদীতে স্থাপিত অবৈধ পাম্প অপসারণ ও চুক্তির বাইরে পানি উত্তোলন রোধে তদারকির দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ফেনী নদীর বার্ষিক গড় পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৮৭৮ কিউসেক। শুষ্ক মৌসুমে যেটি গিয়ে দাঁড়ায় ৭৯৪ কিউসেকে। ফলে ভারত যদি চুক্তি মোতাবেক ১.৮২ কিউসেক পানি উত্তোলন করে তবে সেক্ষেত্রে ফেনী নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে কোন প্রভাব ফেলবে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ,২০১০ সাল থেকে যখন ভারত পাম্প বসিয়ে পানি তুলে নেয় তখন শুষ্ক মৌসুমে নদীর বিভিন্ন স্থানে বালুর চর জেড়ে উঠে। নদীর দুই তীরে তখন চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ফেনী নদীর উপর নির্ভরশীল মুহুরী প্রজেক্টের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। মুহুরী প্রজেক্টের আওতায় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনীর ১৫ টি উপজেলার প্রায় ৯ লক্ষাধিক একর কৃষি জমিতে লোনামুক্ত পানি সেচ কার্যক্রম করা হয়। তাই ফেনী নদীর পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে ইতোমধ্যেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে খাগড়াছড়ির রামগড়, মাটিরাঙ্গা ও নদী তীরবর্তী সুফলভোগী বিভিন্ন উপজেলার জনসাধারণের মাঝে।

NewsDetails_03

রামগড়ের মহামুনি সীমান্তে (সীমানা পিলার ২২১৫/২-আর বি) দেখা যায়, আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে নো ম্যান্স ল্যান্ডের ১৫০ গজের ভেতরে পাম্প হাউজ স্থাপন করে ফেনী নদী থেকে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। একই ভাবে বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, রামগড়, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ৩৪ টি পয়েন্টে পাম্প মেশিন বসিয়ে পানি তুলছে বলে অভিযোগ ভারতের বিরুদ্ধে।

মহামুনি এলাকার ভুট্টা চাষী ওমর আলী বলেন, ফেনী নদী বাংলাদেশের নদী হওয়ার পরও ভারতের বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশীদের নদীতে নামতে দেয় না। কিন্তু তারা বছরের পর বছর নদী থেকে পানি তুলে যাচ্ছে। আগামী শীত মৌসুমে যখন নদীতে পানি থাকবে না তখন ধানসহ শাক সব্জী চাষ করতে পারবে না এই পারের কৃষকরা।

ফেনী নদী গবেষক নাজিম উদ্দিন লাভলু বলেন, ভারত যদি ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি উত্তোলন করে তবে তাতে নদীর স্বাভাবিক প্রভাবে তেমন বিরূপ প্রভাব পড়বে না। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে নদীর ৩৪ টি পয়েন্টে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প মেশিন বসিয়ে গড়ে ৩০-৪০ কিউসেক পানি উত্তোলন করছে। যার প্রভাবে শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকে বালুর চরে জেগে উঠে। মানবিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী ভারতে যেমন পানি উত্তোলনে সম্মতি দিয়েছেন তেমন করে অবৈধ ভাবে সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে স্থাপিত পাম্প গুলো অপসারণে ভারতে প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে হবে। নয়তো বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন স্মৃতিজড়িত এই নদীর অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়বে।

রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কার্বারী বলেন, ভারত যেন অনুমোদিত চুক্তির বাইরে পানি উত্তোলন করতে না পারে সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নজর রাখতে হবে।

চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে গত রোববার (৬ অক্টোবর) পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ফেনী নদী থেকে ভারত যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হবে তার পরিমাণ ‘খুব সামান্য’। প্রতিবেশী দেশের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম শহরের খাবার পানি সরবরাহের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জন্য মানবিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী এতে সায় দিয়েছেন।

আরও পড়ুন