গেলো সপ্তাহের বন্যা এবং তার আগে থেকে চলমান সন্ত্রাস আর প্রাণহানির ঘটনায় খাগড়াছড়ির পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব বিরাজ করছিল। একই কারণে জেলার জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোতেও দর্শনার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হ্রাস পায়। কিন্তু চলতি ঈদের বন্ধে পরিস্থিতি সম্পূর্ন পাল্টে গেছে।
রবিবার ঈদের দ্বিতীয় দিন সরেজমিনে আলুাটলা, রিছাং ঝরনা ও জেলা পরিষদ পার্ক ঘুরে দেখা গেছে একেবারে ভিন্নচিত্র। প্রতিটি স্পটেই লোকে লোকারণ্য। স্থানীয়দের পাশাপাশি অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও এসেছেন নারী-পুরুষ-কিশোর-কিশোরীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার দর্শনার্থী।
ফেনী থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আজিম হাসান জানান, সপরিবারে নিজের গাড়িতে খাগড়াছড়ি বেড়াতে এসেছেন। এখানকার স্পটগুলো ঘুরে মিরসরাইয়ের মহামায়া হ্রদ ঘুরে বাড়ি ফিরবেন।
চট্টগ্রাম থেকে আসা স্কুল শিক্ষকা হাসনা হেনা জানান,গণ পরিবহনে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে খাগড়াছড়ির আলুটিলার রহস্যময় সুড়ঙ্গ, রিছাং ঝরনা এবং জেলা পরিষদ পার্ক-এ বেড়াবেন।তিনি জেলা পরিষদ পার্কের ঝুলন্ত ব্রীজটি দেখে খুশি হয়েছেন।
বেসরকারি ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন আলুটিলা’র মতো ব্যস্ততম পর্যটন স্পটে পাহাড় থেকে অবৈধভাবে সংগৃহীত অপরিণত পাথরের স্তুপ দেখে দু:খ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষ এসব পাথর দিয়ে এখানে হয়তো সৌন্দর্য্য বধনের চিন্তা করছেন। এটি স্ববিরোধী এবং একই সাথে আইনের বরখেলাপ।
সরেজমিনে বিকেল তিনটায় রিছাং ঝরনায় দেখা গেছে কয়েক’শ দশনার্থী। যাঁদের অধিকাংশই প্রতিবেশী বিভিন্ন জেলা থেকে দল বেধে বেড়াতে এসেছেন।
মু. শহিদুল ইসলাম, তাঁদেরই একজন। তিনি জানান, এতো সুন্দর প্রাকৃতিক ঝরনা! কতো লোক দেখতে আসেন অথচ আসা-যাওয়ার সড়কটি যেনো একটি মরণফাঁদ। বিকেল পাঁচটা নাগাদ আলুটিলা পর্যটন স্পটের টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী পীযুষ ত্রিপুরা জানান, দেড় হাজারের মতো টিকেট বিক্রি হয়েছে। যা ‘পিক আওয়ার’-এ সর্বোচ্চ।
জেলা পরিষদ পার্কের কর্মকর্তা ইমন ত্রিপুরা জানান, উত্তর-দক্ষিণ দুই কাউন্টারে মিলে বিকেল পাঁচটা নাগাদ দুই হাজার পাঁচ’শর কাছাকাছি টিকেট বিক্রি হয়েছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেবা দানকারীরা জানান, সোমবার থেকে স্থানীয় দর্শনার্থীদের চাপও বাড়বে। একই সাথে বাইরের ভ্রমণ পিপাসুরাও আসতে থাকবেন।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো: রাশেদুল ইসলাম জানান, আলুটিলা এবং রিছাং ঝরনা এলাকায় নিরাপত্তা, পাবলিক টয়লেট, লাইটিং, ওয়াশরুম এবং পার্কিংসহ সব ধরনের সেবার মান বাড়ানো হয়েছে। ফলে দর্শনার্থীরা টিকেটের বিনিময়ে যে টাকা দেন তার চেয়ে বেশি আনন্দ উপভোগ করতে পারছেন।