বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া ৫০ হাজার রোহিঙ্গার মাঝে মারজান বিবির মত বৃদ্ধাদের সংখ্যা অনেক। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় মগরা মিলে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যদের উপর। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়ীঘর। প্রান বাঁচতে পালিয়ে এসেছে এপারে নিরাপদ বাংলাদেশে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একজন মংডুর বাসিন্দা মারজান বিবি (৬৫)।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুনধুম পশ্চিমকুল শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মারজান বিবি অপলক দৃষ্টিতে সীমান্তের ওপারে জ্বলতে থাকা একটি গ্রামের দিকে তাকিয়ে আছেন। আগুনের লেলিহান শিখা এপার থেকেও দেখা যাচ্ছিল অনেকটা স্পষ্ট। উপরে আকাশের মেঘের সাথে মিশে যাচ্ছিল ধোঁয়ার কুন্ডলি। ওপারের পুড়তে থাকা এলাকাটা দেখিয়ে বললেন, সেখানে তাদের বাড়ি। নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন তার স্বামী। সেখানেই মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং মগরা কুপিয়ে হত্যা করে তার বৃদ্ধ স্বামীকে। প্রাণ বাঁচাতে এলাকার আরও কয়েকজনের সঙ্গে নৌকায় করে চলে আসেন এপারে। কথাগুলো যখন বলছিলেন, তখন তার কন্ঠ কেঁপে কেঁপে উঠছিল। আর দেখা যাচ্ছিল, দু’চোখ বেয়ে নামছে অশ্রুধারা।
তিনি বলেন, দুটি সন্তানকেই চোখের সামনে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। গলা কেটে, ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করেছে। বর্তমানে আশ্রয় শরণার্থী শিবিরে ছোট্ট একটি ঝুঁপড়িতে। কিন্তু সন্তানের শোকে দু’দিন যাবত মুখে কোনো খাবারই তুলতে পারছেন না এই মা। মিয়ানমার সন্ত্রাসীদের হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণ বাঁচতে স্রোতের মত রোহিঙ্গা ছুটে আসছে বাংলাদেশে। জাতিসংঘ বলছে, এবারের সহিংসতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যাটা ইতিমধ্যে চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে। নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা আশ্রয় নিচ্ছে বাংলাদেশে এসে।
তবে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থী ক্যাম্পে ৯৫ ভাগ মানুষ নারী, শিশু আর বৃদ্ধ। সক্ষম পুরুষের সংখ্যা নেই বললেই চলে। তারা কোথায়? রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের কী যুবক-তরুণ নেই? এমনকি কিশোর বয়সী কোনো ছেলেকেও দেখতে পাচ্ছিলাম না। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতেই জানা যায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হামলার মূল টার্গেটই হচ্ছে যুবক-তরুণরা। তাদেরকে দেখামাত্র গুলি করে বা ধরে নিয়ে যায়। জবাই করে, পুড়িয়ে মেরে, কিংবা কুপিয়ে জখম করে রপর মৃত্যু নিশ্চিত করে বর্বর মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় বৌদ্ধরা।