ঘর নির্মাণ শেষ হলে ছেলে নতুন বৌ নিয়ে আসবে
কেএনএ'র নিহত সদস্যের মা সুমরেম বম
ঘর নির্মাণ শেষ হলে ছেলে নতুন বৌ নিয়ে আসবে। মাকে এ কথা জানিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিল। তখন মা ছেলেকে বলেছিল, তোর বাবার হাত ভাঙ্গা, সে একা ঘরটি তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারবে না। তুমি কাল পরশু দু-একদিনের মধ্যে ঘরে চলে আসো। হ্যাঁ আসবো মা, এটাই ছেলের সাথে সর্বশেষ কথা হয়েছিল। চার মাস পর দেখলাম ছেলের লাশ, এ কথা বলে কান্না ভেঙ্গে পড়েন, কেএনএফ – কেএনএ’র নিহত সদস্য বয়রামসাং মা সুমরেম বম (৪৩)।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে চারটার দিকে লাশটি রুমা থানা পৌঁছেন। এসময় নিহত কেএনএ’র সদস্য’র মা সুমরেম বম তাঁর ছেলের লাশ বলে শনাক্ত করেন।
সুনরেম বলেন, মুলপি পাড়ার এক মেয়ের সাথে তার ছেলের সম্পর্ক ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে বিয়ে হওয়ার কথা। ওই মেয়ের পরিবারকে কাজে সহযোগিতার কথা জানিয়ে গত ডিসেম্বর মাসে ক্রিসমাস বা শুভ বড়দিনের আগেই ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।
তবে পরে জানতে পারি, আমার ছেলে মুলপি পাড়ায় আদা চাষ করতে জুম কাটছে হবু বৌ’র পরিবার লোকজনের সাথে যৌথভাবে। কথাটি শুনে মনে ভাল লাগছিল আমার। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার বিকালে পানখিয়ং পাড়ার প্রতিবেশিরা তাঁকে জানায়, তাঁর ছেলে গুলি বিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। একথা শুনার পর মন ভেঙ্গে পড়েন। তবে তখনো বিশ্বাস করতে পারেননি- নিহতের মা সুনরেম বম। তিনি দাবি করেন’ তাঁর ছেলে পার্টিতে নেই (কেএনএফ)।
এসময় তাঁর ছেলে বয়রামসাং বম অস্ত্র ধরে ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি দেখলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো ছেলে অস্ত্র ধরে কেউ জঙ্গলে না যায়। আমাদের পবিত্র বাইবেলে কোথাও বলা হয়নি, অস্ত্র ধরে যুদ্ধ করতে হবে।
বান্দরবানের রুমা উপজেলার মুলপিপাড়ার গহীন অরন্যে অভিযান চালিয়ে এক কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) সদস্যের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ ।
গত মঙ্গলবার ভোরে কুকি-চিন চীন ন্যাশনাল আর্মী ও ইউপিডিএফ গনতান্ত্রিক এর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক কেএনএফ’র সশস্ত্র শাখার কেএনএ সদস্য মারা গেছে বলে জানা যায়। পরে নিহত সন্ত্রাসীকে মুলপি পাড়ার পাহাড়ের নীচে গভীর জঙ্গলে মাটি চাপা দেয়।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও রুমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাঈদ মাহবুবুল হক এর নেতৃত্বে রুমা থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আলমগীর হোসেন জানান, দুটি সন্ত্রাসী সংগঠনের মধ্য গোলাগুলির ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে এমন সংবাদ পেয়ে লাশ উদ্ধারে যায় পুলিশ। পরে মুলপি পাড়ার গভীর অরন্য থেকে একজনের লাশ কবর থেকে তোলা হয়। লাশ ময়না তদন্তের জন্য বান্দরবান হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে নিহতের পরিবারকে অনুদান প্রদান করেন রুমা জোনের সেনাবাহিনী।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, নিহত যুবকের নাম বমরামসাং বম (২৩), রোয়াংছড়ি উপজেলার সদর ইউপি পানখিয়ং পাড়া বাসিন্দা লালজৌত্লোয়াং বম এর ছেলে। নিহত ব্যক্তি মায়ের নাম সুমরেম বম।
রুমা জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল শাহরিয়ার ইকবাল বলেন, যতদিন কেএনএফ সশস্ত্র সদস্যরা নিশ্চিহ্ন হবেনা, মুলপি পাড়াবাসী নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী টহল সেখানে থাকবে।
এদিকে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের তান্ডবে গত (২০ এপ্রিল) মুলপি পাড়া থেকে রুমা সদরে পালিয়ে যাওয়া মারমা সম্প্রদায়ের ৪৯ পরিবারের সদস্যরা আজ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে।
ফিরে আসা লোকজন জানায়, তারা সন্ত্রাসীদের গোলাগুলির ভয়ে পালিয়ে গিয়ে রুমা সদরে আশ্রয় নেয়। রুমা উপজেলা প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী তাদের খাবার, ঔষুধ ও নিরাপত্তা দিয়ে সহযোগিতা করেছে।