মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর থেকে সীমান্তে সেনা ও বিজিপি’র তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্তের ওপারে বিভিন্ন স্থানে চৌকি স্থাপন করেছে মিয়ানমার। যার কারনে এপারে অবস্থানরত স্থানীয় মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।
গত (২ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন সীমান্ত এলাকা ঘুরে বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পরপরই ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু কোনারপাড়া, ভাজাবুনিয়া, বাইশপাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে চৌকি স্থাপন করে কাটাতারের বেড়া ঘেষে মিয়ানমার সেনারা অবস্থান নিয়েছে। আর এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু এলাকার নো-মেন্সল্যান্ডে অবস্থানরত শরনার্থীদের উৎকন্ঠা বিরাজ করছে মায়ানমারের ওপারের সেনা অভ্যুত্থানের পরিস্থিতি নিয়ে।
চলমান পরিস্থিতি বিষয় নিয়ে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা জানান, তারা প্রতিনিয়ত উৎকন্ঠায় র্নিঘুম রাত যাপন করছে। সবসময় আতংকে আছেন তারা। সেনা অভ্যুত্থানের পরিস্থিতি আগামীতে কি ঘটতে যাচ্ছে সে বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তিত। মিয়ানমারের ভিতরে আরো অনেক রোহিঙ্গার বসবাস রয়েছে তাদের কি অবস্থায় আছেন? তাদের নিয়ে বেশ চিন্তিত আছেন নো-মেন্সল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা । মায়ানমারে ইন্টারনেট -নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকায় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। তবে বিজিবি এবং পুলিশ সর্তকের সাথে টহল জোরদার অব্যহত রয়েছে সীমান্তের শূন্যরেখায়।
ঘুমধুম ভাজাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহেদ হোসেন বলেন, গত ২ দিন ধরে সীমান্তের ওপারে কাটাতারের বেড়া ঘেষে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অসংখ্য চৌকি স্থাপন করে অবস্থান নেওয়ায় সীমান্ত এলাকায় কৃষি ক্ষেত-খামারে নিয়োজিত শ্রমজীবি মানুষেরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মধ্যে রয়েছে।
বেতবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর বশর মিজান বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সে দেশে ক্ষমতা দখল করার পর থেকে সীমান্তে মিয়ানমার সেনা ও বিজিপি’র তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাতে ওপার থেকে গুলির শব্দ ভেসে আসছে এপারে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ভয়ভীতি কাজ করছে। এমন কি রেজু আমতলী এলাকার অনেক দোকান-পাট বন্ধ রেখেছে স্থানীয়রা।
ঘুমধুমের বাসিন্দা নুরুল আমিন বাপ্পী জানায়, মিয়ানমারের সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর সীমান্তে সেদেশের বাহিনীতের মাঝে ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে সীমান্তের পরিবেশ শান্ত থাকলে স্থানীয় লোকজনের মাঝে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে৷
ঘুমঘুম জলপাইতলি এলাকার জেলে আব্দু শুক্কুর জানান, ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষ নাফ নদী থেকে মাছ শিকার করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে, কিন্তু হঠাৎ সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার সেনা বাহিনীর উপস্থিতির কারনে ভয়ে নাফ নদীতে যেতে পারছেনা। বর্তমানে ওই এলাকার জেলেরা দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে বলে দাবি তার।
কক্সবাজার (৩৪) ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ জানিয়েছেন, মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। সুতরাং আতঙ্কের কোন কারণ নেই।
উল্লেখ্য,গত সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে সেখানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কিছু নেতাদের আটক করেছে সেনাবাহিনী। পুরো দেশটির সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। দেশটির অধিকাংশ স্থানে এখনও টেলিফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রয়েছে বলে গণমাধ্যম সুত্রে জানা গেছে।
এছাড়াও দেশটির সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর ইয়াঙ্গন বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং শহরটির আশেপাশের এলাকাগুলোর সাথে সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে কড়া নিরাপত্তা জোরদার করেছে।