চক্ষু লজ্জায় যে কথা কাউকে বলা সম্ভব হয়নি

NewsDetails_01

পর্যটকদের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে পাহাড়ে বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে পৌছে দিয়ে তাদের সাথে ঘুরে বেড়ানো আর পরিবার নিয়ে খেয়েদেয়ে কোন ভাবে পথচলায় যাদের নেশা ছিলো, আজ তারাই এখন করোনার কারনে কর্মহীন হয়ে পরিবার নিয়ে অনিশ্চিত দিন পার করছে বান্দরবানে থানচি উপজেলার ৪টি পেশার প্রায় ৬শ শ্রমিক। আর এই বিষয়গুলো চক্ষুলজ্জায় যেন কাউকে বলতে পারছেনা।

২০১৩ সাল থেকে এক টানা পর্যটক গাইড পেশায় নিয়োজিত থেকে কাজ করে আসছেন,তাদের হাত ধরে উপজেলাটিতে আবিষ্কার হয়েছে নিত্যনতুন পর্যটন স্পট। তিন
ছেলে মেয়ে নিয়ে পর্যটক গাইড লালথাং বম, সংসার।

থানচি উপজেলা সদরে শাহজাহান পাড়ায় বাসিন্দা লালথাং বম বলেন, করোনা ভাইরাস
সংক্রমন সচেতনতা আর সরকারের নির্দেশনায় নিজ বাড়ীতে লকডাউনে রয়েছেন। গত ২২ মার্চ থেকে থানচিতে পর্যটকদের ভ্রমনে নিরুৎসহিত করায় প্রায় ১৭ দিন ধরে
কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আয় রোজগার করে সংসারে যা ছিল তা দিয়ে চলতে পারছেনা
বলে তার সংসারে অনিশ্চয়তা কথা জানালেন এই প্রতিবেদক কাছে ।

তিনি আরো বলেন, আমাদের পর্যটক গাইড রেজিষ্ট্রেশান ও ননরেজিষ্ট্রেশান সব
মিলে ১২৫জন রয়েছে । গত বৃহস্পতিবার প্রায় ৬০ জনকে জনপ্রতি ১০ কেজি চাল
ডাল, আলু, তেল উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ইউএনও) দিয়েছে। একই কথা
বললেন, লক ডাউন আর পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে ভ্রমনে নিরুৎসহিত করার পর্যটক
গাইড সাইফুর ইসলাম,মর্টিন ত্রিপুরা,মিলন ত্রিপুরাসহ অনেকে।

গাউড থুই হ্লাচিং মারমা বলেন, থানচির সাংগু সেতু উদ্ভোধনের পর থেকে কষ্ট
করে একটি মোটর সাইকেল ক্রয় করে থানচি থেকে বিভিন্ন উপজেলা -জেলা শহরে
জরুরী লোকজনকে দিনরাত পৌছে দিতাম। এখন কর্মহীন, এখনও এক ফোটা ত্রাণ
পাইনি।

NewsDetails_03

তিনি আরো বলেন, আমরা প্রায় ৪০ জন রয়েছি। আমার জানা মতে, সবাই এক ফোটাও ত্রাণ সামগ্রী পায়নি, চক্ষু লজ্জায় যে কথা কাউকে বলা সম্ভব হয়নি।

কথা হয় থানচির ইঞ্জিন বোট চালক মংহাইনু মারমা এর সাথে। তিনি বলেন, ছেলে
মেয়ে লেখা পড়া খরচের কথা চিন্তা করছি, কি করে তাদের মানুষ করবো। ত্রাণ
দেয়া, না দেয়ার বিষয় নয়, সারা দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমাদের ছেলে
মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জন্য অনুদান প্রদান করলে উপজেলা প্রায় ৪শ ইঞ্জিন
বোট চালক ও হেলপারের মাঝে স্বস্তি ফিরবে।

থানচি উপজেলার হাঁট বাজারে কাঠ ও মালামাল উঠানামায় প্রায় শতাধিক শ্রমিকের
একই দশা বলে জানালেন শ্রমিক নজু মিয়া। তাদের মতে, কোন কাজ কর্ম নেই, কোন জায়গা জমিও নেই, উপার্জনে টাকায় বাড়ীতে যা ছিল তাও খেয়ে দেয়ে শেষ পর্যায়ে চলে আসছে।

এই ব্যাপারে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম বলেন, যারা চলমান
পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকটে পড়েছেন অথচ সংকোচের কারণে সরাসরি ত্রাণ সহায়তা
নিতে বিব্রতবোধ করছেন তারা আমাদের হটলাইন নাম্বারের যোগাযোগ করতে পারে।

স্থানীয়রা মনে করছে, জেলার এই দূর্গম উপজেলায় ত্রাণ দেওয়া হলেও যা অপ্রতুল, তাই দ্রুত ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করলেই কেবল এই মানুষগুলোর মধ্যে একটু স্বস্থি ফিরে আসবে।

আরও পড়ুন