জুবাইরা ইয়াসমিনের মা জান্নাত আরা জানায়, ৮ ছেলে এবং ৪ মেয়ের মধ্যে ৩জনের কোন হদিস নেই। স্বামী কামাল হোসেন জুবাইরা ইয়াসমিনকে নিয়ে যায় এবং কিছুদিন পর ছেলে জহিরুল হক তাদের সাথে চলে যায়। জুবাইরার একটি ছেলে হলে সন্তানের দেখাশুনার কথা বলে তার আরেক মেয়ে মনজি বেগমকে (১৬)কে চট্টগ্রামে নেয়। গত ৮ মাস আগে থেকে তাদের কোন খবর পান না বলে জানান তিনি। তিনি আরো জানান, কামাল ও জুবাইরা বেশ ধার্মিক ছিল।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন আহবায়ক তসলিম ইকবাল চৌধুরী পাহাড়বার্তাকে বলেন, বিশেষ করে বাইশারীতে কিছু মৌলবী ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এসব কাজে স্থানীয়দের উদ্ভুদ্ধ করছে, এটা নিয়ন্ত্রনে আনতে হবে। তিনি আরো বলেন, বাইশারীর লোক যে জঙ্গী কাজে জড়িত এই ঘটনায় আমরা বেশ লজ্জিত।
সীতাকুন্ডু পৌরসভার প্রেমতলা ও আমিরাবাদ এলাকার দুটি বাসা ভাড়া নিয়েছিল এই জঙ্গিরা। দুই বাসায় থাকা ছয় জঙ্গির চারজনই আত্মীয়। তাদের মধ্যে দুজন আত্মঘাতী বিস্ফোরণে মারা গেছে। অন্য দুজনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। জুবাইয়ারা ইয়াসমিন ও জহিরুল হক (জসিম) আপন ভাই বোন।
আরো জানা গেছে, এই জঙ্গীরা গত ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামের পটিয়া পৌর সদরের ৩নং ওয়ার্ডের আমির ভান্ডার রেল গেইট এলাকার নুরুল আমিন মুন্সির পাকা ভবনের ৩য় তলায় ভাড়া থাকলেও তারা গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে বাসা ছেড়ে চলে যান, পরে তারা সীতাকুন্ডের এই বাড়ি ভাড়া নেন।
এই ব্যাপারে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মো: নেয়ামত উল্লাহ বলেন, গত শুক্রবার বিকালে পটিয়ায় বাড়ির মালিক নুরুল আমিনকে সীতাকুন্ডে নিহতদের ছবি দেখালে তিনি তার বাড়িতে নিহতরা ছিলেন বলে সনাক্ত করেন।
আরো জানা গেছে, গত ৭ মার্চ টঙ্গীতে ‘জঙ্গি নেতা’ মুফতি হান্নানকে প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার পরের দিন কুমিল্লায় পুলিশের ওপর বোমা হামলা করে দুই জঙ্গি। যাত্রীবাহী বাসে নিরাপত্তা তল্লাশির সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের সহায়তায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জঙ্গি জহির ওরফে জসিম (২৫) এবং হাসান (২৪)কে আটক করে। আর এই হাসানের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারির করলিয়া মোড়া এলাকায়, তার পিতার নাম নুর হোসেন।
এদিকে দেশের আলোচিত এই জঙ্গী হামলা ও নিহত ও আহত হবার ঘটনায় বান্দরবান জেলা জুঁড়ে চলছে তোলপাড়। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির জঙ্গীদের বাসস্থান হওয়ার কারনে অনেক ধারণা করছে জঙ্গিরা মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারি অর্গানাইজেশন (আরএসও)সহ বিভিন্ন শসস্ত্র সংগঠন থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র সংগ্রহ করে জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গী গ্রুপের অনুসারি হয়ে হামলা করছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম পাহাড়বার্তাকে জানান, সীতাকুন্ডের নিহতদের বাড়ি যে বাইশারীতে এটা আমরা নিশ্চিত,পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও বিষযটি নিশ্চিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সীতাকুণ্ড ছায়ানীড় বাড়ি থেকে গ্রেনেড ও বিস্ফোরক উদ্ধার এবং পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে সীতাকুণ্ড থানায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। অন্যদিকে সাধন কুটির থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় জসিম ওরফে জহুরুল ইসলাম এবং আরজিনা ওরফে রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে একই থানায় সন্ত্রাস দমন আইন, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার সঞ্জিত রায় পাহাড়বার্তাকে বলেন, আমরা এই বিষয়ে কাজ করছি এবং নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি বিরোধী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছি, যেকোন সময় এই অভিযান চলবে।