চিম্বুক পাহাড়ে পানির জন্য হাহাকার

আগুনে পুড়েছে পানির উৎসস্থল

NewsDetails_01

বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে আগুনে ম্রো সম্প্রদায়ের ৫০০ একর ফল বাগান পুড়ে গেছে। পুড়েছে দুই হাজার একরের বেশি বনও। গত মঙ্গলবারে দিকে কোয়াইং ঝিরি এলাকায় প্রথম আগুন লাগে, এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে। দুর্গম এলাকার এই আগুন জ্বলতে জ্বলতে এক পর্যায়ে বুধবার সকাল ৯টার দিকে নিভে যায়।

ম্রো সম্প্রদায়ের দাবি, আগুনে তাদের প্রায় ৫০০ একর জমির আম, বরই, ড্রাগন, কমলা ও পেঁপে বাগান পুড়ে গেছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো হলো বাইট্টা পাড়া, রানলাই পাড়া, দেওয়াই হেডম্যান পাড়া, সিংচং পাড়া, মধ্যম পাড়া ও রামরি পাড়া।

সদর উপজেলা টংকাবতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফ্লোকান ম্রো বলেন, কীভাবে আগুন লেগেছে, তা এখনো জানা যায়নি। বাইট্টা পাড়া ও রাংলাই চেয়ারম্যান পাড়ার লোকদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও জানা যায়নি। তিনি বলেন, সিংহভাগ ম্রো এই ফলদ বাগানের ওপর নির্ভরশীল। সেই বাগান আগুনে পুড়ে আজ নিঃস্ব তারা।

রুইয়াং ম্রো বলেন, তাদের রামরি পাড়ার লোকজনের পানির প্রধান উৎস ছড়া বা ঝিরি। ঝিরিতে ছোট বাঁধ দিয়ে সেখান থেকে জিএফএসের (গ্রাফিটি ফ্লো সিস্টেম) মাধ্যমে পাড়ায় পানি নিয়ে আসা হয়। সেই পানির পাইপ লাইনের প্রায় ৬ হাজার ফুট পুড়ে গেছে। এখন পানির সংকটে ভুগছি আমরা।

তাদের অভিযোগ, পাথরের জন্য জঙ্গল পরিষ্কার করতে জয়নাল নামে একজনের শ্রমিকরা এ আগুন ধরিয়ে দেন,পরে তা ছড়িয়ে পড়ে। নেভানোর কোনো উপায় ছিল না।

NewsDetails_03

রামরি পাড়ার গ্রাম প্রধান মেনরুম ম্রো জানান, আগুনে তাদের পাড়ায় ঝিরি থেকে খাবার পানি আনার প্রায় ৬ হাজার ফুট (জিএসএফ) পাইপ পুড়ে গেছে। এতে এলাকায় খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

রামরি পাড়ার থংপং ম্রো, তংরুই ম্রো ও মেনসাই ম্রো জানান, দীর্ঘদিন ধরে জয়নাল নামে একজন কোয়াইং ঝিরি ও উত্তর হাঙ্গর ঝিরি থেকে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করছিলেন। ঝিরির পাথর তুলতে নিষেধ করা হলে ভয়-ভীতি দেখাতেন তিনি।

তারা আরও অভিযোগ করেন, সম্প্রতি কোয়াইং ঝিরির পাথর শেষ হয়ে যায়। এরপর পাহাড়ে থাকা পাথর তোলা ও ভাঙা শুরু করেন আবু জয়নালের শ্রমিকরা। এজন্য কিছুদিন ধরে জঙ্গল পরিষ্কার করছিলেন তারা। এর অংশ হিসেবেই জয়নালের শ্রমিকরাই আগুন ধরিয়ে দেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জয়নাল বলেন, এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, এই ঘটনা আমি ও আমার শ্রমিক কেউ জড়িত না। পরে তিনি বলেন, ‘ভাই আমি পাহাড়ে বেড়ে উঠেছি। এই পাহাড়ের প্রতি আমার টান রয়েছে, আমি এই ঘটনার কিছু জানি না।

বান্দরবান জেলা পরিষদ সদস্য ক্যসাপ্রু জানান, তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন। তার সঙ্গে আমতলী ক্যাম্পের সেনা সদস্যদের পাশাপাশি গ্রাম প্রধানরাও ছিলেন। তারা ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

তিনি জানান, আগুনে ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহের পাইপ পুড়ে গেছে। এ কারণে এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। সংকট সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন