চেনা রুপে ফিরছে বান্দরবানের পর্যটনকেন্দ্র

NewsDetails_01

করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় চার মাস বন্ধ ছিল বান্দরবান পার্বত্য জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলো। বন্ধ হয়ে যায় পর্যটকের আগমন। পাহাড়ের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে নেমে আসে সুনসান নিরবতা । আগামী ১৯ আগস্ট সরকারি ঘোষণায় পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়ার সংবাদে আবারো ভাঙবে পাহাড়ের সুনসান নিরবতা। জেলার নীলাচল, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, চিম্বুকসহ পাহাড়ের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকা অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্রে আবারো দেখা মিলবে পর্যটকের সমাগম। সবুজ পাহাড় আর আকাশের মিতালি, মেঘ-বৃষ্টির খেলা, পাহাড়ের বুক বেঁয়ে পড়া ঝর্ণার সৌন্দর্য্য আবারো উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। এরই মধ্যে পর্যটনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা দিয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। শেষ মুহূর্তে ধোঁয়ামোছার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংশ্লিষ্টরা ।

আবাসিক হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মো: সিরাজুল ইসলাম জানান, বান্দরবান সদরে ৬০টির মত হোটেল-মোটেল রিসোর্ট আছে। দফায় দফায় লকডাউনে হোটেল-মোটেল রিসোর্ট বার বার বন্ধ হয়ে যায়। বড় ধরনের ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হয় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। করোনাভাইরাসের শুরুর লকডাউন থেকে হিসেব করলেই এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও অনিশ্চিয়তার মুখে পড়ে তিন হাজার মানুষের জীবন জীবিকা।

তিনি আরো জানান, অন্যান্য জেলায় শিল্প কারখানা আছে বিধায় পর্যটন বন্ধ হয়ে গেলেও পর্যটনের কর্মচারীরা শিল্প কারখানায় কাজ পান । তবে আমাদের এখানে শিল্প কারখানার সে সুযোগ না থাকায় লকডাউনে বেকার হয়ে থাকতে হয় পর্যটনের কর্মচারীদের।

পর্যটন কেন্দ্র খোলার সংবাদে আবারো প্রাণচঞ্চল দেখা দিয়েছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বলে জানিয়েছেন আবাসিক হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মো: সিরাজুল ইসলাম ।

জানা যায়, করোনা মহামারির শুরুতে গত বছরের মার্চে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সব বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র। সংক্রমণ কমলে গত বছরের ২২ আগস্ট থেকে পর্যটন কেন্দ্র খুলতে শুরু করে। এ বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে গত এপ্রিল থেকে আবার বন্ধ হয়ে যায় পর্যটন কেন্দ্র।

NewsDetails_03

এদিকে হোটেল হিলভিউ এর ব্যবস্থাপক মো: তৌহিদ পারভেজ জানান, আগামী ১৯ আগস্ট থেকে পর্যটকদের বুকিং নেয়া হবে । পর্যটকদের আগমনকে ঘিরে হোটেলে ব্যস্ত সময় পার করছি। ধোঁয়া মোছার কাজই বেশি। হোটেল- রেস্টুরেন্টে ৫০ জন কর্মচারী ছিল। লকডাউনে সবাই বাড়িতে ফিরে গিছে। পর্যটন খোলায় তারা আবারো কাজে ফিরেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হোটেলে পর্যটকদের রাখা হবে।

ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন, লকডাউনে বান্দরবান পার্বত্য জেলার বার্মিজ মার্কেট, হোটেল মোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে জড়িত এসব লোকজন চরম কষ্টে দিযাপন করত। পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে তারা আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। পাহাড়ের পর্যটনসংশ্লিষ্ট অর্থনীতি আবারও চাঙা হবে। পর্যটকদের আগমনে তাদের রোজগার আবারও আগের অবস্থায় ফিরবে বলে আশা করছেন।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে বান্দরবানের চিম্বুক সড়কে গিয়ে দেখা যায়, ১৯ আগস্ট পর্যন্ত পর্যটনকেন্দ্র খোলার থাকলেও তার আগেই বান্দরবানে আসছেন পর্যটকরা । কেউ মোটর বাইকে, কেউ গাড়িতে করে আসছেন। দেখছেন পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকলেও ভীড় করছেন পাহাড়ের পরিচিত শৈলপ্রপাত ঝর্ণায় । কেউ কেউ গাঁ ভাসাছেন ঝর্ণার শীতল পানিতে। পিছনে সবুজ পাহাড় রেখে নিজেকে ফ্রেমে বন্দি করছেন নিজেকে। আবার কেউ কেউ অঝোড় বৃষ্টিতে ভিজছেন, ছবি তুলছেন পাহাড় ঘেঁষে বয়ে যাওয়া মেঘের । পাহাড়ে ঘুড়তে আসলেও তবে অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে আসা সাইমা আক্তার জানান, লকডাউনের কারনে কোথাও ঘুড়তে যাওয়া হয়নি। লকডাউন উঠে যাওয়ায় পাহাড়ে ঘুড়তে আসলাম। সবুজ পাহাড় আর মেঘের ভেসে বেড়ানো আমাকে অনেকটাই মুগ্ধ করেছে।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। কোথাও ভিড় করা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল হক জানান, ১৯ তারিখ থেকে পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হচ্ছে। হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতে ৫০% পর্যটক রাখতে পারবেন। সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করছি। আর পর্যটনস্পটগুলোতে নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে।

আরও পড়ুন