জেনে নিন ৫ টি গর্ভকালীন বিপদ চিহ্ন সম্পর্কে

NewsDetails_01

গর্ভকাল অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা। মনে রাখতে হবে, এই এসময় একই দেহে দু’টি প্রাণের বসত। জন্মদান প্রক্রিয়াও জটিল। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার আগের তুলনায় অনেক কমেছে কিন্তু এখনও যে পর্যায়ে আছে তা যথেষ্ট উদ্বেগের। গর্ভকালীন মাকে বাড়তি যত্ন নিতে হবে তার পরিবার থেকে। মায়ের ও অনাগত শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। তবে নিচের পাঁচটি বিষয় গর্ভবতীর মধ্যে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেগুলো হলো :

১. হঠাৎ রক্তপাত শুরু হলে :
প্রসবের সময় ছাড়া গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় রক্তক্ষরণ বা প্রসবের সময় বা প্রসবের পর খুব বেশি রক্তক্ষরণ বা গর্ভফুল না পড়া বিপদের লক্ষণ। এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে মাকে দ্রুত নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে মা সকে (shock) চলে যাবে অথবা বাচ্চা এবং মা দু’জনের মৃতু হতে পারে।

২. খিচুনি হলে :
গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর যেকোনো সময় যদি খিচুনি দেখা দেয় তবে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষায়িত হাসপাতালে মাকে ভর্তি করাতে হবে। খিচুনি একলামসিয়ার (eclampsia) প্রধান লক্ষণ। তাই দ্রুত পদক্ষেপ ও চিকিৎসায় বাচ্চা এবং মা দু’জনের জীবনকেই রক্ষা করতে পারে। তা না হলে এ রোগে দু’জনই মারা যেতে পারে।

৩. চোখে ঝাপসা দেখা বা তীব্র মাথাব্যথা হলে :
গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর শরীরে পানি আসা, খুব বেশি মাথাব্যথা বা চোখে ঝাপসা দেখা পাঁচটি প্রধান বিপদ চিহ্নের মধ্যে একটি। তাই এ ব্যাপারে মায়েদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। যদিও গর্ভাবস্থায় মায়ের পায়ে সামান্য পানি আসা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। একটু রেষ্ট নিলে এ পানি চলেও যায়। কিন্তু যদি পায়ে অতিরিক্ত পানি আসে এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে ও পা ভারি হয়ে আসে তবে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

NewsDetails_03

৪. ভীষণ জ্বর হলে :
গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর জ্বর বা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব প্রধান বিপদ চিহ্নের একটি। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় যদি কেঁপে কেঁপে ভীষণ জ্বর আসে এবং প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া হয় তবে তা অনেক সময় মূত্রনালির সংক্রমণের ইঙ্গিত বহন করে। সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা যেমন শিবায় এন্টিবাওটিক দিলেই অল্প সময়ে এ জটিলতা দূর হয়ে যায়।

৫. বিলম্বিত প্রসব হলে :
প্রসবব্যথা যদি ১২ ঘণ্টার বেশি হয় অথবা প্রসবের সময় যদি বাচ্চার মাথা ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ বের হয়ে আসে, তবে বাসাবাড়িতে প্রসবের চেষ্টা না করে সবারই উচিত মাকে নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। বিলম্বিত প্রসব হলে জন্মের পর শিশুর শ্বাসকষ্ট ও খিচুনি হতে পারে।

⬛ গর্ভবতীকে লক্ষ রাখতে হবে :
গর্ভবতী মায়েদেরও কিছু বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে গর্ভে শিশুর নড়াচড়া
গর্ভাবস্থায় সাধারণত মা ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহের,(মানে ৫ থেকে ৬ মাসের) মধ্যে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করেন। পেটের ভেতর বাচ্চা ঘুমায় ও খেলা করে, যার অনুভূতি মা বাইরে থেকে বুঝতে পারেন। বাচ্চার নড়াচড়ার একটা নির্দিষ্ট সীমা এবং সময় রয়েছে যা শুধু মা-ই অনুভব করেন। ১২ ঘন্টায় কমপক্ষে১০ বার গর্ভের শিশুর নড়াচড়া স্বাভাবিক। এর কোনো ব্যতিক্রম হলে মা সেটা খুব দ্রুত বুঝতে পারেন। বাচ্চার নড়াচড়া কম হলে ডাক্তারকে দেখানো উচিত। গর্ভে শিশুর কম নড়াচড়া মানে শিশুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, এমন অবস্থায় দরকার হলে হাসপাতালে ভর্তি ও অক্সিজেন নিতে হবে।

⬛ নিয়মিত গর্ভকালীন চেক-আপ
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩০ সপ্তাহে (মানে ৭ মাস) নূন্যতম প্রতি মাসে একবার এবং ৩০ সপ্তাহের পর প্রতি সপ্তাহে একবার করে মাকে ডাক্তার দেখানো উচিত। প্রতি চেক আপে ডাক্তার গর্ভবতীর ওজন, রক্তশূন্যতা, পায়ে পানি আসা, রক্তচাপ, বাচচার পজিশন নিশ্চিত করবেন। নিয়মিত গর্ভকালীন চেক-আপ করা জরুরি চেক-আপের মাধ্যমে এই ৫ টি বিপদ থেকে মুক্ত থাকা যাবে।

ডাঃ সাবরিনা বরকত
এমবিবিএস (ঢাকা)এফসিপিএস (গাইনী & অবস্)
স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন
প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক, মুন্নু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ।
কনসালটেন্ট, ইমানুয়েল মেডিক্যাল সেন্টার,বান্দরবান।

আরও পড়ুন