দি ডেইলী স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

NewsDetails_01

গত ১৪ মে ২০২০ ইং তারিখে আপনার বহুল প্রচারিত দি ডেইলী স্টার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে “প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তি সিলগালা করলেন আ. লীগ নেতা” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। প্রকৃত ঘটনাকে সম্পূর্ণ আড়াল করার চেষ্টাসহ মিথ্যে ও অসম্পূর্ণ তথ্য পরিবেশন করে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মতো একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ ও ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে আমাকে জনসমক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় সংবাদটি পরিবেশন হয়েছে বিধায় আমি প্রকাশিত সংবাদের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

প্রকাশিত সংবাদে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের একটি চলমান ও ইতিবাচক উদ্যোগকে সম্পূর্ণভাবে আড়ালে রেখে বৌদ্ধ মূর্তি সিলগালার সংবাদটি পরিবেশন করা হয়েছে। বান্দরবান পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারখ্যাত খিয়ংওয়াক্যাং (রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার) এর সুপ্রাচীন ইতিহাস এবং প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তির প্রতি স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আবেগ ও অনুভূতি জড়িয়ে রয়েছে। এ কারণে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ তার দায়িত্ব ও পরিধির আওতায় প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তিটি নয় শুধু, রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারের সদ্য প্রয়াত প্রধান ধর্মীয় গুরু ভদন্ত উ পঞাঞাঁজোত মহাথের এর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদনসহ বৌদ্ধ বিহারের সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর পরিসম্পদ সুরক্ষার জন্য একটি ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করে। যেটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট এবং স্থানীয় ভাবে সর্বজনবিদিত। যেখানে প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুধুমাত্র বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ নয়, এর সুরক্ষা ও কল্যাণে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত যেমন- পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদ, রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটি, রাজপরিবারের সদস্যবর্গ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি, আইন-শৃংখলা রক্ষার সাথে যুক্ত পুলিশ বিভাগসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ নেয়া হলেও প্রকাশিত প্রতিবেদনে তাকে সম্পূর্ণভাবে আড়ালে রাখা হয়েছে।

আ.লীগ নেতা গিয়ে বৌদ্ধ বিহার সিলগালা করেছে এমন শিরোনামে সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনমনে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার একমাত্র চেষ্টায় সংবাদটি তৈরি ও পরিবেশিত হয়েছে।

বান্দরবান রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারের প্রধান ধর্মীয় গুরুভদন্ত উ পঞঞাঁজোত মহাথের গত ১৩ এপ্রিল ২০২০ চট্টগ্রামে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে বৌদ্ধ বিহারের সম্পদ বেহাত হওয়ার বিভিন্ন আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠলে, বিশেষ করে হাজার বছরের পুরনো পবিত্র বুদ্ধ মূর্তি সুরক্ষা জরুরী হয়ে উঠায় সর্বমহলের সম্মতি সাপেক্ষে গঠিত খিয়ংওয়াক্যং (রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার) বান্দরবান এর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ কমিটি গত ৭ মে সকাল ১১ টায় বৌদ্ধ বিহারটি পরিদর্শন করে। পরিদর্শন শেষে বর্তমান ইনচার্র্জ ভদন্ত গুণবদ্ধন পঞঞা মহাথের ও ক্যাং পরিচালনা কমিটির সদস্যদের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে স্থাবর-অস্থাবর পরিসম্পদের হালনাগাদ বিবরণ ও বাস্তবতার নিরিখে করণীয় বিষয়ে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দাখিল করে।

NewsDetails_03

অত এব শুধুমাত্র প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তি সিলগালা করার বিষয়টি নয় শুধু, একই সাথে বৌদ্ধ বিহারের সকল অমূল্য সম্পদ সুরক্ষার লক্ষ্য নিয়ে কমিটি কাজ করছে। সকলের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ এর সাথে নানাভাবে সম্পৃক্ত সকলের মতামতের ভিত্তিতে ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে এখানে উল্লেখ না করলেই নয়, রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার,বান্দরবানে রক্ষিত প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তিটি প্রত্নতত্ত্বে ও অনন্য একটি নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস থেকে গত ১৪ মে ২০২০ ইং তারিখে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ এর পক্ষ থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে সহযোগিতা চেয়ে একটি পত্রও প্রেরণ করা হয়েছে। একই সাথে অত্র অঞ্চলে বসবাসরত সকল বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রচলিত রীতিনীতির প্রতিশ্রদ্ধা ও সম্মান রক্ষার তাগিদ থেকে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ বৌদ্ধ বিহারের সকল শুভাকাঙ্খীর সমন্বয়ে বিহারের প্রয়াত প্রধান ধর্মীয় গুরুভদন্ত উ পঞঞাঁজোত মহাথের এর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সহযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রকাশিত সংবাদে সকল ইতিবাচক তথ্য আড়ালে রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের বরাতে পরিবেশিত তথ্য অসম্পূর্ণ ও মনগড়াভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি জনাব থোয়াাংচ প্রু মাস্টার দাবী করেন তার বরাতে পরিবেশিত তথ্য অসত্য। সমস্ত ইতিবাচক উদ্যোগকে আড়ালে রেখে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ নিয়ে এবং ব্যক্তিগত অন্য কোন হীনউদ্দেশ্য থেকে সংবাদটি পরিবেশিত হয়ে থাকতে পারে। আর এখানে উল্লেখ্য যে, শুধুমাত্র মাহাসাংগ্রাই পোয়েঃ উপলক্ষে বছরে শুধুমাত্র একটি দিন স্নান এর জন্য পবিত্রবুদ্ধ মূর্তি বের করা হয়। সর্বোপরি প্রত্নতত্ত্ব একটি অনন্য নির্দশন হিসেবে পরিগণিত হওয়ার মত প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তি ও বিভিন্ন সম্পদ বেহাত হওয়ার বিভিন্ন আলামত নিয়ে ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ে আশংকা স্পষ্ট হয়ে উঠার পর বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ তার আইনানুযায়ী এ বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা পালনে উদ্যোগী হয়ে উঠে।

উল্লেখ্য, যেহেতু বোমাং রাজা রাজগুরু বিহারে প্রথাগতভাবে প্রধান দায়ক সেহেতু বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও রাজার প্রতিনিধির সমন্বয়ে ১৩/০৫/২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বুদ্ধমূর্তি আসাংম্রাই -এর আসনের ফটকের সীলগালাকৃত তালার চাবিসমূহ বোমাং রাজার হেফাজতে সংরক্ষণ ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১৪/০৫/২০২০ তারিখ অপরাহ্নে রাজার নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। বিদ্যমান অবস্থায় বৌদ্ধ বিহার ও এর সুরক্ষায় সংশ্লিষ্টদের সাথে এর প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতার সাথে কোন প্রকার সামঞ্জস্য না রেখে সংবাদটি পরিবেশন হওয়ায় আমার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মতো একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে বিধায় আমি প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

(ক্য শৈ হ্লা)
চেয়ারম্যান
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ।

⬛ বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন