আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২য় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ ধাপে খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা ও পানছড়ি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরইমধ্যে দীঘিনালা উপজেলায় নির্বাচন জমে উঠেছে। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের একজন আনারস প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ কাশেম। অপরজন মোটর সাইকেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ধর্মজ্যোতি চাকমা।
দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীই নির্বাচনী প্রচার জোরদার করার পাশাপাশি নিজ নিজ কৌশল প্রয়োগ করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনের শেষ প্রান্তে এসে নানামুখী মেরুকরণ হচ্ছে। প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হিসেবে সামনে আসছে বিভিন্ন সমীকরণ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আনারস ও মোটর সাইকেলের মধ্যে ভোটের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। শেষ পর্যন্ত ফলাফল কি হয় তা দেখার জন্য উপজেলাবাসীর চোখ এখন নির্বাচনের দিনের দিকে। নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। তাই দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়া চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্ধারিত এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। বাসায় ফিরে পরের দিনের কর্মসূচী নিয়ে পরিকল্পনা করছেন। এর ফলে তাদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কে কার চেয়ে বেশি কৌশল প্রয়োগ করে নিজের অবস্থান জোরদার করবেন এ নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। আর এ কৌশল প্রয়োগ করেই ব্যাংক ভোটের বাইরে থাকা ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা চলছে। আর এ নির্বাচনের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে নির্বাচন কমিশন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। প্রশাসনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে।
ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই জয়-পরাজয়ের ফ্যাক্টর হিসেবে সামনে আসছে বিভিন্ন সমীকরণ। ছোট-বড় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়িক ও সামাজিক সংগঠনের সমর্থন এবং প্রশাসনিক লোকজনের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে নানামুখী সমীকরণ আলোচনায় আসছে। প্রার্থীদের মধ্যে কার পাল্লা ভারি তাও নির্ভর করছে এই সমীকরণের ওপর। এখন পর্যন্ত দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরিবেশ প্রশংসনীয়। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনের লোকজন নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই সুষ্ঠু ভোট হলে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীই বিজয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এটি একটি ইতিবাচক দিক বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার প্রচারযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ কাশেম। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ধর্মজ্যোতি চাকমাও প্রচারযুদ্ধে পিছিয়ে নেই।
ভোটারদের একাংশ বলছেন, সততা, নিষ্ঠা ও পরিচ্ছন্নতায় এগিয়ে আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ কাশেম। তার চলতি মেয়াদে দীঘিনালায় অকল্পনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মোঃ কাশেম এর বিকল্প নাই।
অপর দিকে ভোটারদের আরেক অংশ বলছেন, মন মানসিকতা, সততা ও যোগ্যতায় ধর্মজ্যোতি চাকমাও অনেক এগিয়ে আছেন। কাজেই তারা কে কোন দলের প্রার্থী সেটা বিবেচনায় নিতে চান না। তারা ভোট দেবেন প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজ, সততা ও যোগ্যতা দেখে।
বিগত ৫ বছরের ধারাবাহিক উন্নয়নের বর্ননা তুলে ধরে আনারস প্রতীকের প্রার্থী মোঃ কাশেম জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ধারাবাহিক উন্নয়নে পাল্টে গেছে এ উপজেলার দৃশ্যপট। বিশেষ করে তিনি ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতায় উপজেলায় শান্তি সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নানা অবকাঠামো উন্নয়ন করেছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নিতকরণ,মাইনী নদীর উপর সেতু নির্মাণ,অসংখ্য মসজিদ, মন্দির ও বিহার নির্মাণ, বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণ, রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালবার্ট সহ অগনীত উন্নয়ন দৃশ্যমান। এছাড়া কৃষিখাতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে দীঘিনালাবাসী পূনরায় তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।
মোটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী ধর্মজ্যোতি চাকমা জানান,উপজেলার খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য একটি অসাম্প্রদায়িক উপজেলা গঠনই তার মূল লক্ষ্য। যেখানে থাকবেনা কোন জাতি-গোষ্ঠী ও ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ।
তিনি আরও জানান, তিনি নির্বাচিত হলে উপজেলাকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতি হিসেবে গড়ে তুলবেন। প্রান্তিক কৃষকদের কৃষি উপকরণ সরবরাহ এবং সরকার প্রদত্ত ভর্তুকি প্রকৃত কৃষকদের বন্টনের ব্যবস্থা করবেন। বেকার যুবকদের তথ্য ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও সড়কের উন্নয়ন, প্রকৃত ভাতাভোগীদের প্রাধান্য দিয়ে ভাতার সুষম বন্টন, জমি জাল-জালিয়াতকারী এবং ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করাসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের মান উন্নয়নকরণ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহ-অবস্থান নীতি বজায় রেখে শান্তি প্রতিষ্ঠাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও মন্দিরসমূহের মান উন্নয়ন, শিক্ষা শিল্প-সাহিত্যসহ অন্য ক্ষেত্রে অবদান রাখায় গুণীজনদের সম্মাননা প্রদান করা হবে। সর্বোপরি জনগণের সার্বিক উন্নয়ন এবং ব্যক্তি পর্যায়ের বিকাশে সব পক্ষকে নিয়ে দলমত নির্বিশেষে কাজ করা। এ ছাড়া স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক সমৃদ্ধ দীঘিনালা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জোনায়েদ কবির সোহাগ জানান, আগামী ২১ মে দীঘিনালায় ৩৬ টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মোট ভোটার রয়েছে ৯০ হাজার ১৯৪। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ৪৬০৮১, মহিলা ভোটার রয়েছে ৪৪ হাজার ১১২ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ১ জন।অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা ক্ষেত্রে সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান তিনি।