দীঘিনালায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পানি শোধানাগার কেন্দ্র চালু হয়নি এক দশকেও

NewsDetails_01

দীঘিনালায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পানি শোধানাগার
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষে ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত পানি শোধানাগার কেন্দ্রটি চালু হয়নি এক দশকে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর-এর উদ্যোগে নির্মিত শোধানাগারটি নির্মাণকালীন সময় থেকেই কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠায় অনেকটা কাজ অসমাপ্ত রেখেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের পক্ষে শোধনাগারটি যথাসময়ে যথাযথ তদারকি, রক্ষণাবেক্ষন এবং সংস্কার না করায় কেন্দ্রটি অনেকটা পরিত্যক্ত প্রতিষ্ঠানের রুপ পেয়েছে।
নির্মাণের এক দশক পরও কেন্দ্রটি চালু না হওয়ায় বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলা সদরের প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দা। দীর্ঘদিনেও শোধানাগারটি চালু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
সরকারি অর্থের এমন অপচয়ের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে শোধানাগারের অনেক যন্ত্রাংশ । এজন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অনিয়ম ও গাফিলতিকে দুষলেন জনপ্রতিনিধিরা। রক্ষনাবেক্ষনের অবহেলার কারণে অনেক যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় শ্যাওলা ধরেছে পানি শোধানাগারে পাকা দেয়ালে। এছাড়া পানি শোধানগারটির চারপাশে জরাজীর্ণ অবস্থা।
স্থানীয় বাজার চৌধুরী জেসমিন চাকমা ও ব্যবসায়ী জীবন চৌধুরী উজ্জল বলেন, পার্বত্য এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে এলাকায় পানি বাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। পানি শোধানাগার চালু হলে এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ পানি পান করত। ’
তাঁরা বলেন, পানি শোধনাগার চালু হলে উপজেলার থানা পাড়া, মাস্টার পাড়া, টিএন্ডটি এবং সরকারি আবাসিক বাসিন্দারা বিশুদ্ধ পানি পেত। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ না থাকায় দূরবতী নলকূপ থেকে আমাদের পানি সংগ্রহ করতে হয়। সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে পানি শোধানাগার কেন্দ্র চালু না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে জনপ্রতিনিধিরা।
বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা বলেন, জনস্বার্থে পানি শোধানাগার কেন্দ্রটি চালু করা উচিত। পাবলিক হেলথ (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর) এর অবহেলার কারণে কেন্দ্রটি চালু হয়নি। এতে সরকারের প্রায় কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।
জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন বিদ্যুতের লো-ভল্টেজের সংকটের কারণে শোধানাগারটি চালু না হবার অজুহাত দেখানো হতো। কিন্তু খাগড়াছড়ি সদরে একবছর আগে ১৩৩/৩২ কেভি গ্রীড সাব-স্টেশন নির্মাণের পর কোথাও বিদ্যুতের কোন সমস্যা ঘুচে গেছে। বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপনের পর বিদ্যুতের লো-ভল্টেজের সংকট কেটে গেলেও চালু হয়নি পানি শোধানগারটি। এমনকি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শোধনাগারটি সরেজমিনে দেখভাল করার খবরও পাওয়া যায়নি। অথচ নির্মাণ কাজ শেষ করে টাকা তুলে নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ।
দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নবকমল চাকমা বলেন, ‘পানি শোধানগারটি চালু করার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। বিদ্যুতের লো-ভল্টেজের অজুহাতে কেন্দ্রটি চালু করা যায়নি। তবে বর্তমানে বিদ্যুতের লো-ভল্টেজের সমস্যা নেই । তারপরও কেন্দ্রটি চালু হওয়ার ভালো কোন লক্ষণই নেই। ফলে এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না। ’
পানি শোধানাগার কেন্দ্র চালু’র ব্যাপারের দায়সারা আশ্বাস দিলেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী।
খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সোহরাব হোসেন বলেন,‘শোধানাগারটি কেন্দ্রটি চালু করার জন্য ২০০৮ সালে প্রয়োজনীয় অর্থ বিদ্যুৎ বিভাগে জমা দিয়েছি। তবে লো-ভল্টেজের কারণে তা এখনো চালুনি হয়নি। তবে বর্তমানে বিদ্যুতের লো-ভল্টেজের সমস্যা নেই। অর্থ বরাদ্দ পেলে শোধানাগারের কিছু সংস্কার করে আগামী অর্থবছরে এটি চালু করা যেতে পারে। ’
শোধানাগারটি চালু হলে প্রতিদিন ভূগর্ভ থেকে প্রায় দুই লক্ষাধিক লিটার বিশুদ্ধ পানি পাইপে মাধ্যমে গ্রাহকদের সরবরাহ করা যাবে। কেন্দ্রটি চালু হলে উপজেলার বিশ হাজার বাসিন্দা নিরাপদ পানি পাবে।

আরও পড়ুন