দীর্ঘ ৬ বছর পর শনিবার লামা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন

NewsDetails_01

দীর্ঘ ৬ বছর পর শনিবার (২৭ জুলাই) দুপুর ২টায় পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লামা উপজেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এ সম্মেলনকে ঘিরে উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা। সাথে সাধারন মানুষও কৌতুহল নিয়ে অপেক্ষা করছেন কে কে হতে যাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক -এ প্রশ্নকে ঘিরেই সবার আগ্রহ এখন সম্মেলনের দিকে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝেও চলছে হিসেব নিকেষ। কয়েকজন স্বার্থান্বেষী নেতা চান সিলেকশন, তবে শতকরা ৯৯ভাগ ত্যাগী নেতাকর্মীরা চান ইলেকশনের মাধ্যমে যোগ্য নেতা নির্বাচন। সম্মেলনে বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্য শৈ হ্লা ও সাধারণ সম্পাদক ইসলাম বেবীসহ নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে সম্মেলন শেষ হবে বলে অশা করছেন আয়োজকরা।
জানা যায়, ২০১২ সালে সর্বশেষ বান্দরবানের লামা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে মোহাম্মদ ইসমাইলকে সভাপতি ও বাথোয়াইচিং মার্মাকে সম্পাদক করা হয়। ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ইসমাইলসহ ৩জন সদস্য ইতিমধ্যে মারা গেছেন। মেয়াদ পূর্তির পরও নানা কারণে সম্মেলন না হওয়ায় কমিটির অনেক ত্যাগী সদস্যই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। কেউ কেউ বলছেন, দলের কান্ডারী হিসেবে মোহাম্মদ ইসমাইল আওয়ামী লীগের একক নেতা হিসেবে মাঠ দখল, দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করা, উপজেলার উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজ নিয়ে নিজের ভাইদের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে নিয়ন্ত্রনের ফলে দলের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়। আবার অনেক ত্যাগী নেতা কর্মী ক্ষোভে নিস্কৃয় হয়ে পড়েন; কেউবা অন্য দলে যোগও দেন। একটি দিবসে এ দলীয় গ্রæপিং প্রকাশ্যে রুপ নেয়। তবে কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ইসমাইল মারা যাওয়ার পর অনেকটাই অভিবাবকহীন হয়ে পড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে এখন ‘টব অব দ্য টাউন’ কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এই কমিটির ওপর নির্ভর করবে আগামী দিনের আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। যোগ্য নেতৃত্ব না আসলে দলের নেতাকর্মীকে গুচিয়ে ও আগলিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। নেতা নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কাঙ্খিত সেই পদগুলো কে কে পাবেন, তার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সম্মেলনের দিন পর্যন্ত।
এদিকে ইলেকশন নয়, সিলেকশনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করা হবে; এমন আভাসে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। এ কারণে দীর্ঘদিন পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চললেও নেতাকর্মীদের মধ্যে তেমন একটা উৎসাহ দেখা যাচ্ছেনা। তবে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রার্থীরা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর না নিয়ে, জেলা এমনকি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তদবিরে সময় পার করছেন বলে মন্তব্য করেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। সম্মেলনে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন কমিটি থেকে ৩১জন, পৌরসভা থেকে ৩১জন ও উপজেলার কমিটির ৬৭জন কাউন্সিলর তাদের মতামত প্রদানের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের জন্য নেতা নির্বাচিত করার কথা। কারা নেতৃত্বে আসতে পারেন-এমন প্রশ্নের কোনো সরাসরি উত্তর মেলেনি দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে।
তবে অনেকে মনে করছেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে একটি স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের নেতৃত্ব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তারা যদি নেতৃত্ব ধরে রাখেন, তাহলে তৃণমূল পর্যায়ে দলের জনসমর্থনসহ যোগ্য নেতৃত্ব শূণ্য হয়ে পড়বে আশঙ্কা করছেন ত্যাগী নেতারা। আবার ত্যাগী নেতাকর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে শক্তি ও জনবল প্রদর্শনের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার পক্ষে কাজ করছেন। তবে আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই গণতন্ত্রের চর্চা হওয়া উচিত মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেশকরা। এদিকে অতীতে যারা মাঠে ছিলেন, বর্তমানেও কাজ করছেন, লড়াই সংগ্রাম করে দুর্দিনে দলকে সহযোগিতা করেছেন তাদের মধ্য থেকে নেতা নির্বাচিত হোক এটাই চান তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এদিকে সমষ্টিগত ভাবে কমিটি গঠন করলে দলের জন্য মঙ্গল হবে বলে জানান, পৌর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ রাখাল চন্দ্র বড়ুয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী বলেন, কাউন্সিলের মাধম্যে নেতৃত্বের পরিবর্তন হোক এটাই আমাদের চাওয়া পাওয়া। নতুন নেতৃত্ব আসলে অনেক কিছুরই পরিবর্তন আসবে। ত্যাগীরা রাগ অভিমান ভেঙ্গে আবারো সক্রিয় হয়ে দলের জন্য কাজ করবেন। এতে দল আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আর সিলেকশনের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং ও রাগ অভিমান কমবে না বরং বাড়বে।
সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ মাহাবুবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক বাথোয়াইচিং মার্মা, সহ-সভাপতি আক্তার কামাল, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামাল, সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল কাদের, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী জাহানারা বেগম, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত সুপার ভাইজার প্রসন্ন কান্তি ভট্টাচার্য্য। সাধারণ সম্পাদক পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জসিম উদ্দিন কোম্পানী, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক বিজয় আইচ ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কান্তি দাশ, আজিজনগর আওয়ামীলীগের সহ প্রচার সম্পাদক সামছুল ইসলাম। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে কৃষকলীগের সভাপতি জাপান বড়–য়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন সেলিম, আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফরিদ উদ্দিন, তাঁতী লীগের উপজেলা সভাপতি মো. নাছির উদ্দিনের নাম শুনা গেছে।
দলের বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সভাপতি প্রার্থী শেখ মাহাবুবুর রহমান বলেন, দীর্ঘ সময়ের পর দলের সম্মেলন হচ্ছে। তাই আমিও চাই এ সম্মেলনের মাধ্যমে যোগ্য ও জনপ্রিয়রা নেতৃত্বে আসুক।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক সদস্য সচিব মো. জহিরুল ইসলাম জানায়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্মেলন সম্পন্নের সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে, এখন শুধু দিন ক্ষনের অপেক্ষায়। তবে জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ দলের জন্য যেটা ভালো মনে করে সিদ্ধান্ত দিবেন, সেভাবেই কমিটি করা হবে। আশা করি সম্মেলন সুষ্ঠ, সুন্দর ও শান্তিপুর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পারবো। এজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন মো. জহিরুল ইসলাম।

আরও পড়ুন