রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার ইসলামপুর গাইন্দ্যা বাজারটি দীর্ঘ ৯ সপ্তাহ ধরে বাজার না বসার কারণে প্রতি সপ্তাহে বাজারের ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদেরকে লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে ।
অজ্ঞাত কারন দেখিয়ে গত ১৭ নভেম্বর শুক্রবার থেকে সাপ্তাহিক বাজারের দিন কোন পাহাড়ী ব্যক্তিরা কাঁচামাল নিয়ে বাজারে না আসায় তার পরদিনই উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইসলামপুর বাজারেই উপজেলা সকল জন প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এক মত-বিনিময় সভার মাধ্যমে বাজারটি পূনরায় চালুর করার লক্ষে ১১ সদস্য বিশিষ্ট ১টি কমিটি গঠন করা হলেও গত ৯ সপ্তাহ ধরে বাজারটি বসছেনা। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবারে বসানো বাজারটিতে ২০-২২টি পাড়ার লোকজন তাদের উৎপাদিত কাঁচাপন্য বিক্রি ও তাদের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র কিনে বাড়ি ফিরে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাজারের দিন কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য ১দিন আগে বাজারে এসে অবস্থান করত। বর্তমানে বাজারটি না বসায় কোন পাইকারী ব্যবসায়ীরাও আসছেনা। যার কারনে লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতির শিকার হচ্ছে স্থানীয় পাহাড়ী কৃষক ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা।
এদিকে,বাজারের দ্বায়িত্বে থাকা ইজারাদার মোঃ ইব্রাহীম বলেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ বাজার ফান্ড প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জন্য বাজারটি ৪,০৪,৮০০/- টাকায় সুওয়াংসিং মারমার নামে স্মারক নং- ০৪-২০১৬/১৭ইং মূলে ২৪/০৫/২০১৭ইং তারিখে ইজারা নেওয়া হয়। গত ৯ সপ্তাহ ধরে সাপ্তাহিক বাজার না বসায় দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা ইজারা আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে তিনি জানান। বাজারটি বসানোর জন্য সরকারি ভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আরো বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে, বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ বলেন, সপ্তাহে বাজারের দিন ছোট দোকানেও কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেচাকেনা হতো। কিন্তু গত দুই মাসে বাজারটি না বসায় তথা পার্শ্ববর্তী পাহাড়ী কৃষকরা বাজারটিতে না আসায় চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছে বাজারের ব্যবসায়ীরা।
ইসলামপুর গাইন্দ্যা বাজারটি প্রতি সাপ্তাহিক বাজারের দিনটিতে পাহাড়ী-বাঙালীদের মিলন মেলায় পরিণত হত। বাজারটিতে সম সংখ্যাক পাহাড়ী-বাঙ্গালীরা মিলেমিশে ব্যবসা তথা দোকানদারী করছেন। উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এত বছরেও কোন প্রকার বিবাদ ঘটেনি। অথচ অজ্ঞাত কারনে গত ৯ সপ্তাহ যাবৎ ইসলামপুর গাইন্দ্যা বাজারটি বন্ধ হয়ে রয়েছে।
স্থানীয় কার্বারী ও সাবেক বাজার সভাপতি আব্দুল জলিল মোড়ল বলেন, গত ১৫ নভেম্বর সকালে ইসলামপুর এলাকার মোঃ আলিম নামে এক ভাড়াটিয়া মোটর সাইকেল চালক পাশ্ববর্তী এলাকা তাইংখালী বাজারে ভাড়া নিয়ে গেলে সেখানে অস্ত্রধারী কিছু চাঁদাবাজ আলিমের পথরোধ করে দাড়িয়ে তার নিকট পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং অন্য সব ভাড়াটিয়া মোটর সাইকেলগুলোও চাঁদার শর্তে সেখানে উপস্থিত হতে বললে কয়েকজন ভাড়াটিয়া চালক সেখানে উপস্থিত হয়। মোটর সাইকেল ভাড়াটিয়ারা তাদেরকে চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাক-বিতন্ডের এক পর্যায়ে একজন অস্ত্রধারী মোটর সাইকেল চালক আলিমকে উদ্দেশ্যে করে গুলি ছুড়লে ঘটনাক্রমে সে বেঁেচ যায় এবং তৎক্ষনাত সবাই স্থানটি ছেড়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
বান্দরবান সদর থানা বিষয়টি সরজমিনে তদন্ত করে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করেন। সেটিকে কেন্দ্র করেই এ বাজারটিকে পঙ্গু করার জন্য অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা পাশ্ববর্তী পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে বাজারটিতে না আসতে জনমনে ভিতি সঞ্চার করায় পাহাড়ীরা ভয়ে আর বাজারে আসছেনা বলে মনে করেন তিনি। উপজেলা প্রশাসন কতৃক গঠিত গাইন্দ্যা বাজার আইন শৃঙ্খলা কমিটির আহবায়ক শুভাষ চন্দ্র বাচ্চুমনির সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, পাশ্ববর্তী প্রায় ২০টি পাড়ার কার্বারীদের নিয়ে বাজারটি পূনরায় চালুর লক্ষে ইসলামপুর গাইন্দ্যা বাজারে মত-বিনিময় সভা করা হলেও অজানা শঙ্কায় অদ্যাবধি বাজারে পাহাড়ীরা তাদের পন্য নিয়ে উঠছেনা।
এ প্রসঙ্গে রাজস্থলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মুশফিকুর রহমান বলেন, বাজারটি বন্ধের কথা শুনে আমি ঢাকা থেকে রাজস্থলী এসে জরুরী ভিক্তিতে সেনাবাহিনী, উপজেলার সকল জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দেরকে নিয়ে মত বিনিময় করার পরেও অজ্ঞাত কারনে অদ্যাবধী বাজারটি মিলছেনা। তিনি আরো বলেন, আমার জানা মতে অত্র উপজেলায় এ যাবৎ বাজার বন্ধ হওয়ার মত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।