নদীর ভাঙনে ৩৯ টি সীমান্ত পিলার বিলুপ্ত

NewsDetails_01

খাগড়াছড়ির সীমান্ত নদীগুলোর অব্যাহত ভাঙ্গনে পরিবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারতের আন্তর্জাতিক সীমা রেখা। চলতি বর্ষা মৌসুমে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার ফেণী নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে নদী তীরবর্তী আনুমানিক ২০ একর ভূমি। ভাঙ্গনের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন শতাধিক পাহাড়ী বাঙালী পরিবার। নদী শাসন না থাকায় প্রতিবছর ভাঙ্গন আরো তীব্র হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সীমান্ত সড়ক না থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড খোঁজখবর নিতে পারে না বলে দায় এড়ালেন। তবে সীমান্তে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি ভাঙ্গন রোধে নিজস্ব অর্থায়নে স্থানীয়দের সাথে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড(বিজিবি)।
ফেণী নদীর উৎপত্তিস্থল নিয়ে দুই দেশের নদী বিশেষজ্ঞদের ভিন্নমত থাকলেও আন্তর্জাতিক সীমা রেখার ক্ষেত্রে এ নদী রেখেছে বেশ অবদান। প্রতিবেশী রাষ্ট্র তাদের সীমা রেখা নির্ধারণ করে কাটাঁ তারের বেড়া দিলেও বাংলাদেশ এখনো কাটাঁ তারের বেড়া দেয়নি। তাই সীমান্তের কিছু কিছু স্থানে ফেণী নদীই আন্তর্জাতিক সীমা রেখা হিসেবে কাজ করছে। নদী শাসন না থাকায় পাহাড়ী ঢলে প্রতিবছর বিলীন হচ্ছে বাংলাদেশের ভূ-খ- আর চর জাগছে ভারতের ওপারে।
বিজিবি ৪০ ব্যাটলিয়ন বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে মাটিরাঙা উপজেলার ৪০ কিলোমিটার সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। ৪০ বিজিবি সূত্র জানায়, বিগত কয়েক বছরে ফেণী নদীর ভাঙ্গনে আন্তর্জাতিক সীমা রেখার ৩৯টি পিলার পুরোপুরি বিলুপ্ত ও ১৬টি পিলার নদীতে পড়ে গেছে। যৌথ পিলার জরিপে এসব তথ্য সংগ্রহ করে তা সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ফেণী নদী শাসন করে নদী ভাঙ্গন বন্ধ করা না হলে বাংলাদেশের ভূ-খ- হ্রাস পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিবে।
সরেজমিনে ১১ জুলাই মাটিরাঙা উপজেলার দেওয়ান বাজার, বর্ণাল আমতল, অযোদ্ধা ও কদমতলী সীমান্তে ঘুরে দেখা যায়, ফেণী নদীর ভাঙ্গনে বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার শতশত ফসলি জমি ও ভূমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কিন্তু ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অমরপুরে নদীর তীরে কংক্রিটের বাঁধ দেয়া আছে। এতে করে নদীর পাড় ভাঙ্গার আশঙ্কা নেই। সীমান্ত নিরাপত্তায় থাকা বিএসএফ’র যাতায়াতের জন্য সীমান্ত সড়ক নির্মিত রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অংশে এসবের কিছু নাই। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই নদী পাড়ের অসংখ্য জমি ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। কিছু স্থানে কংক্রিট ব্লক ও বালির বস্তা ফেলে ভাঙ্গন ঠাকাতে কাজ করে যাচ্ছেন বিজিবি জোয়ান ও স্থানীয়রা।
বর্ণাল আমতলী গ্রামের বাসিন্দা চিংলাপ্রু মার্মা জানান, গত কয়েক বছরে ফেণী নদীর ভাঙ্গনে তার ১ একরের মতো জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ৮ সদস্যদের পরিবারে একমাত্র আয়ের উৎস কৃষি জমিগুলো। ধান ও শাক সবজী চাষ করে অর্জিত অর্থ দিয়ে তার পরিবার চলে। কিন্তু ফেণী নদীর ভাঙ্গনে কৃষি জমি বিলীন হওয়ায় তার পরিবার হুমকিতে আছে।
কমল বিকাশ চাকমা জানান, এলাকার ইউসুফ মিয়া থেকে বর্গা জমি নিয়ে ২০ দিন আগে ধানের বীজ লাগায়। বীজ লাগানোর কয়েক দিন পর টানা বর্ষণে ফেণী নদীর ¯্রােতে ৩-৪ বিঘা জমি নদীতে চলে যায়। বীজ ও সার কেনার জন্য ঋণ নিয়েছিলাম। এখন কী করব বুঝছি না।

NewsDetails_03

দেওয়ান বাজার এলাকার মো: মিজান জানান, জন্মের পর থেকে দেখা আসছি ভারতে ওপারে পাথর দিয়ে নদীর তীর রক্ষার জন্য বাঁধ আছে। আমাদের অংশে তা নাই। ফলে প্রতিবছর একরের পর একর ভূমি চলে যাচ্ছে নদীতে।
মাটিরাঙার বর্ণাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আকবর জানান, বর্ণাল ইউনিয়নের থইলাপাড়া, কদমতলী, নয়াপাড়া ও বর্ণাল আমতলী এলাকায় চলতি বছরে ফেণী নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে ৪-৫ একর কৃষি জমি ও নদী তীরবর্তী জমি নদীতে তলিয়ে গেছে। ভাঙ্গনের হুমকিতে মতুমগ কার্বারী পাড়া, দেওয়ানপাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের ৩ শতাধিক পাহাড়ী বাঙালী পরিবার। দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি সরকার ব্লক দিয়ে নদীর তীর রক্ষা না করে তাহলে জমির পাশাপাশি বাংলাদেশের ভূ-খ- নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
৪০ বিজিবি’র কমান্ডিং অফিসার লে: কর্ণেল মোহাম্মদ খালিদ আহমেদ জানান, ফেণী নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বাংলাদেশ সীমানার অনেক ভেতরে চলে এসেছে। গত কয়েক বছরের ভাঙ্গনে ভারত বাংলাদেশ ২২২১/৪ পিলার থেকে ২২৪২/২ পিলার পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার সীমান্তের ৩৯টি পিলার পুরোপুরি বিলুপ্ত ও ১৬টি পিলার নদীতে পড়ে গেছে। যৌথ পিলার জরিপে এসব তথ্য সংগ্রহ করে তা সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ফেণী নদী শাসন করে নদী ভাঙ্গন বন্ধ করা না হলে বাংলাদেশের ভূ-খ- হ্রাস পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিবে। নদী পাড়ের কৃষি জমি ও হতদরিদ্র পরিবারগুলোর বসতবাড়ি রক্ষার্থে স্থানীয়দের সাথে নিয়ে বিজিবি সাধ্য মতো ব্লক ও বালি ফেলা ভাঙ্গন ঠাকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সীমান্ত নিরাপত্তা ও অন্যান্য কাজের জন্য সীমান্ত এলাকায় দ্রুত সড়ক নির্মাণ অপরিসীম বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, খাগড়াছড়ি কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: নুরুল আবছার আজাদ জানান, সীমান্ত নদীগুলোর ভাঙ্গন রুখতে নদী শাসন প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করছে সরকার। গত ১১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেক বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। আগামী শুষ্ক মৌসুমে পানি নদীর ভাঙ্গন রোধে গৃহীত প্রকল্প সমূহের কাজ শুরু হবে।

আরও পড়ুন