নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় নারী জজ সহোদর ২ বোন

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দ্বিতীয় নারী জজ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা ফারজানা ইসলাম সুইটি। তাঁর স্বামী রিয়াজও জুডিশিয়ারিতে কর্মরত আছেন।

এর আগে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ১২তম বিজেএস পরীক্ষায় সারা দেশে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার প্রথম নারী জজ হয়েছিলেন ‘ফারজানা ইসলাম সুইটির’ বড় বোন ‘আফসানা ইসলাম রুমি’। তাঁরা দুজনই নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দৌছড়ি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাঁকখালী গ্রামের বাসিন্দা। তারা দু,জনেই রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়নের মাঝিরকাটা গ্রামের জন্মজাত সন্তান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে ৮৯তম স্থান অধিকার করেছে ফারজানা ইসলাম সুইটি। গত রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সচিবালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শরীফ এ এম রেজা জাকের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।

এমন সু-সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ সহ বন্ধুপাড়ার সকলের মন আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে।

সদা শান্ত ও পড়ালেখায় মনযোগী ফারজানা ইসলাম সুইটি প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক জীবনে ছিলো অন্য বন্ধুর ছেয়ে আলাদা। শিক্ষক ও বাবা-মায়ের মন জয়ের পাশাপাশি বেশি সময় কাটাতেন পড়ালেখা নিয়ে। তিনি গর্জনিয়ার মাঝিরকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে প্রাথমিক বৃত্তি লাভের পর ২০১১ সালে গর্জনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন।

আফসানা ও ফারজানা বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাদের বাবা নুরুল ইসলাম, দোছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য, এবং মা সাজেদা বেগম, যিনি এক, দুই ও তিন নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য। সমাজে নারীর অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য সাজেদা বেগম ‘রত্নগর্ভা’ ও ‘শ্রেষ্ঠ জয়ীতা’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।

NewsDetails_03

তাদের বাবা নুরুল ইসলাম এই অর্জনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আফসানা এবং ফারজানার এই দু,বোনের সাফল্য শুধু তাদের ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি জেলার বিচার বিভাগেও এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে এমন সন্তান দিয়েছেন, যারা ন্যায়ের পথে চলবে এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করবে। আমি চাই তারা সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকুক।

মা সাজেদা বেগম জানান, শৈশব থেকেই তিনি সন্তানদের কঠোর শাসনের মধ্যে রেখেছিলেন, তবে তা শুধু পড়াশোনার জন্য নয়, বরং তাদের সততা ও নৈতিকতা বজায় রাখার জন্য। তিনি বলেন, আমি সবসময় চেয়েছি, আমার সন্তানেরা সত্য কথা বলবে, সৎ পথে চলবে এবং কারও ক্ষতি করবে না।

এদিকে জজ হিসাবে চূড়ান্ত সুপারিশ হওয়ার পর তাৎক্ষণিক মন্তব্যে ফারজানা ইসলাম সুইটি বলেন,
‘প্রতিকূলতাকে জয় করার স্পৃহা ছিল। সেই একাগ্রতার জোরেই অবশেষে সফল হলাম। এটা নিঃসন্দেহে আমার জীবনের অন্যতম পাওয়া। আমি চেষ্টা করেছি। আল্লাহ তাআলা তার প্রতিদান দিয়েছেন। এর আগে আমি ১৪, ১৫ এবং ১৬ তম বিজেএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি। ৩টা পরীক্ষায় আমি প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং ভাইভা দিয়েছি। কিন্তু ৩টা পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হইনি। ১৭তম বিসিএস পরীক্ষায় সবশেষ খুশির খবরটা পেলাম।

ফারজানা ইসলাম সুইটি আরও বলেন ‘বিচারকের আসন এমন একটা স্থান, যেখানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। একই সঙ্গে এটি ইবাদতের একটি মাধ্যম। হাদিসে আছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার আরশের নিচে যেই সাত শ্রেণির ব্যক্তি ছায়া পাবেন, তার মধ্যে একজন হলো ন্যায়পরায়ণ বিচারক বা শাসক। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’

তাদের বড় ভাই আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রবিবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অধিনে অনুষ্ঠিত ১৭তম জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে সুপারিশ প্রাপ্তদের তালিকায় স্থান পেয়েছে আমার ছোট বোন ফারজানা ইসলাম সুইটি। সে মেধা তালিকায় ৮৯তম স্থান অর্জন করেছে। এর আগে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ১২তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় বাংলাদেশের ২য় স্থান অর্জন করে সেই আমার আপন ছোট বোন আফসানা ইসলাম রুমি। আমরা তিন জনেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে যথাক্রমে ২০তম,২২তম ও ১৮তম ব্যাচে ছাত্র ছিলাম। ছোট বোন আফসানা ইসলাম রুমি বর্তমান ফেনী জেলায় কর্মরত আছে। ফারজানা ইসলাম সুইটির জজ হিসেবে নিয়োগের কর্মস্থল এখনো জানাযায়নি।

উল্লেখ্য, আফসানা,ফরজানা এবং তাদের বড় ভাই মুজাহিদুল ইসলাম এরা তিন জনই চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে মুজাহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন এবং একই সঙ্গে বান্দরবান জেলা ও দায়রাজজ আদালতে আইন পেশায় যুক্ত আছেন। পরিবারের ছোট সন্তান তাওসিফুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করছেন।

আরও পড়ুন